শুক্রবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

মহররম জীবন গঠন করার মাস

মুফতি আমজাদ হোসাইন হেলালী

মহররম জীবন গঠন করার মাস

আরবি হিজরি সনের প্রথম মাস ‘মহররমুল হারাম’। অর্থ নিষিদ্ধ, সম্মানিত। বস্তুত সম্মান ও আদব প্রদর্শন এবং এ মাসে বিশেষভাবে ইবাদতে যত্নবান হওয়ার বিষয়টি সব সময়ের জন্য গুরুত্ব বহন করে। পবিত্র কোরআনে সম্মানিত চার মাসকে উদ্দেশ্য করে উলেস্ন্লখ করা হয়েছে : ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর বিধান ও গণনায় মাস বারোটি, আসমানসমূহে ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকে। তন্মধ্যে চারটি সম্মানিত। এটিই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান। সুতরাং তোমরা এর মধ্যে নিজেদের প্রতি অত্যাচার কর না।’ (সূরা তওবা-৩৬)। জিলকদ, জিলহজ, মহররম ও রজব— এই চার মাসের মধ্যে মাহে মহররম অন্যতম। আল্লামা জাস্্সাছ রহ. ‘আহকামুল কোরআন’ গ্রন্থে বলেন, ‘এ চার মাসের বৈশিষ্ট্য হলো, যারা বিশেষভাবে এ মাসগুলোতে ইবাদত করবে, আল্লাহতায়ালা তাদের বাকি আট মাস ইবাদত করার খাস হিম্মত ও শক্তিদান করবেন। অনুরূপ যে ব্যক্তি চেষ্টা করে কোনোরকমে এ চার মাস নিজেকে পাপাচার থেকে বাঁচিয়ে রাখবে, তার জন্য বাকি আট মাস যাবতীয় পাপ ও গুনাহের কাজ থেকে বেঁচে থাকা সহজ হয়ে যাবে’। বিষয়টির প্রতি লক্ষ্য রাখা প্রতিটি মুমিন-মুসলমানের জন্য জরুরি। প্রিয় পাঠক! সম্মানিত মাস মাহে মহররম মাসটিকে প্রকৃত সম্মান তখনই করা হবে যখন মাসটিকে ইসলামী শরিয়তের দিকনির্দেশনা মোতাবেক বাস্তবায়ন করা হবে। উল্লিখিত আয়াতটি ‘সূরা তওবা’ এর আয়াত। ‘তওবা’ মুসলমানের মহাগুণ। তাই প্রতিটি গুনাহের সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে তাওবা করা উচিত। তওবা নামক মহাগুণটিকে মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরা উচিত। যেহেতু নতুন হিজরি সন শুরু হয়ে গেছে, তাই বিগত বছরগুলোর আমলের খাতাগুলোকে ভালোভাবে স্মরণ করে নেকি কম থাকলে তা বাড়িয়ে দিতে হবে। গুনাহের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে এ ধরনের গুনাহ না করার অঙ্গীকার করতে হবে। মহররম মাসে যুগে যুগে বহু বড় বড় ঐতিহাসিক ও তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা ও সংঘটিত হয়েছে, যা নিঃসন্দেহে এ মাসের অপরিসীম গুরুত্ব ও ফজিলতের স্বাক্ষর বহন করে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন : ‘রমজানের পর রোজার জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ আল্লাহর মাস মহররম।’ অন্য এক রেওয়ায়েতে বর্ণিত আছে, এক সাহাবি হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, ফরজ নামাজের পরবর্তী পর্যায়ে সর্বশ্রেষ্ঠ নামাজ কোনটি? ইরশাদ হয়েছে, তাহাজ্জুদের নামাজ। সাহাবি পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন, রমজানের পর শ্রেষ্ঠতম রোজা কোন মাসের? ইরশাদ হয়েছে, মহররম মাসের। (মুসলিম, আবু দাউদ)। হজরত আলী (রা.)-কে এক ব্যক্তি প্রশ্ন করেছে যে, রমজানের পরবর্তী পর্যায়ে এমন কোনো মাস আছে, যাতে আপনি আমাকে রোজা রাখার হুকুম করবেন? তিনি বললেন, অনুরূপ প্রশ্ন হজরত রসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জনৈক ব্যক্তি পেশ করেছিল, তখন আমি হুজুরের খেদমতে উপস্থিত ছিলাম। প্রশ্নের উত্তরে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘রমজানের পর যদি তুমি রোজা রাখতে চাও, তাহলে মহররম মাসে রোজা রাখ। কারণ, এটি আল্লাহর মাস। এ মাসে এমন একটি দিন আছে, যে দিনে আল্লাহতায়ালা একটি জাতির তওবা কবুল করেছেন এবং ভবিষ্যতেও সে দিনে অন্যান্য জাতির তওবা কবুল করবেন। (তিরমিজি)। উলেস্ন্লখিত হাদিসগুলো থেকে আমরা বুঝতে পারলাম, মাহে মহররম মাস অন্যান্য সাধারণ মাসের মতো নয়। এ মাস বিশেষভাবে তওবা কবুলের মাস। আল্লাহর কাছে বিশেষ মাসসমূহের একটি অন্যতম মাস। তবে মহান রব্বুল আলামিন অতি দয়াবান। তিনি ইচ্ছা করলে যে কোনো সময় যে কোনো বান্দাকে ক্ষমা করে দিতে পারেন। তিনি মহা পরাক্রমশালী ও মহা দয়াবান। তাই ১৪৪০ হিজরি সনের প্রথম মাসে প্রতিটি মুমিন-মুসলিমের দায়িত্ব হচ্ছে, আল্লাহর ইবাদত ও আনুগত্যে জীবন অতিবাহিত করার মজবুত ইচ্ছা পোষণ করা। মনে রাখতে হবে মানবের প্রকৃতিগত যাবতীয় কাজকর্মসহ সব কাজকর্ম আল্লাহ ও রসুলের বিধান অনুযায়ী পালন করা একজন মানুষের জন্য অবশ্যই কর্তব্য। প্রতিটি মানবের সব কিছুর মালিক একমাত্র আল্লাহ। তাঁর নির্দেশিত পথে জীবনের সবকিছু আদায় করতে হবে। মহান রব্বুল আলামিন যুগে যুগে নবী-রসুলদের সুমহান জামাতের মাধ্যমে তা মানবজাতিকে বাতলে দিয়েছেন। নিদ্রা, জাগরণ, খাওয়া-দাওয়া, ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি, শ্রম, নেতৃত্ব, সমাজ ইত্যাদি সব কাজের বিষয়ে ইসলাম নীতিমালা দিয়েছে। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের গোটা জীবনে মুসলমানের জন্য সর্ব ক্ষেত্রের আদর্শ বিদ্যমান রয়েছে। প্রয়োজন শুধু ইমান ও অনুকরণের। প্রিয় পাঠক! তাই আসুন, আমরা সবাই পেছনের সব কৃতকর্মের হিসাব করি। আল্লাহর ইবাদত ও আনুগত্যে কতটুকু আমি কৃতকার্য হয়েছি আর কতটুকু ব্যর্থ। কৃতকার্যতার জন্য আল্লাহর শোকর আদায় এবং ব্যর্থতার জন্য আন্তরিক অনুতাপ ও অনুশোচনায় জর্জরিত হয়ে লজ্জিত হই, পেছনের জীবনের ক্ষতিপূরণ করি, ভবিষ্যতের জন্য সতর্ক ও দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করি এই মর্মে যে, ‘নেকির কাজ বাড়িয়ে দেব, পাপাচার থেকে দূরে থাকব, তওবা-ইস্তিগফার করে জীবন গড়ব’। বস্তুত, বুদ্ধিমান তো সে-ই যিনি জীবনের প্রতিটি ক্ষণের হিসাব করে। বাস্তবভিত্তিক জীবন গড়ে। মহান রব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে মহররম মাসের যথাযথ আদব ও সম্মান করে জীবন গঠন করার তৌফিক দান করুন। আমিন।

লেখক : মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও খতিব বারিধারা ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর