শনিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

মহররম মাসের গুরুত্বপূর্ণ আমল রোজা রাখা

মুফতি মুহাম্মদ আল আমিন

মহররম মাসের গুরুত্বপূর্ণ আমল রোজা রাখা

শুরু হলো হিজরি নববর্ষ ১৪৪০। আজ থেকে ১৪৪০ বছর আগে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেন। আরবি বছরের  প্রথম মাস মহররম। এ মাসটি ইসলামের পূর্ব থেকে আরববাসীদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এ মাসে তারা নিজেদের মধ্যে মারামারি করত না। যুদ্ধ-বিগ্রহ বন্ধ রাখত। আল কোরআনের সূরা তওবার ৩৬ নম্বর আয়াতে আল্লাহ চারটি মাসকে সম্মানিত বলে ঘোষণা দিয়েছেন। এর একটি মহররম। এটি হলো নেক আমল বা ইবাদত-বন্দেগির মাস। দোয়া কবুলের মাস। মহররমের গুরুত্বপূর্ণ আমল হচ্ছে এর ১০ তারিখে (আশুরায়) নফল রোজা রাখা। অনেক হাদিস দ্বারা আশুরায় রোজা রাখার গুরুত্ব প্রমাণিত। বিখ্যাত সাহাবি হজরত আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘রমজানের পর আল্লাহর মাস মহররমের রোজা হলো সর্বশ্রেষ্ঠ।’ মুসলিম, তিরমিজি। হাদিসটিতে লক্ষণীয় বিষয় এই যে, মহররমকে আল্লাহর মাস বলা হয়েছে। যা অন্য কোনো মাসের ক্ষেত্রে বলা হয়নি। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  নিজে মহররমের ১০ তারিখে (আশুরায়) রোজা রাখতেন।  হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘আমি রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রমজান ও আশুরায় যেরূপ গুরুত্বের  সঙ্গে রোজা রাখতে দেখেছি অন্য সময় তা দেখিনি।’ বুখারি। সাহাবায়ে কিরামও আশুরায় রোজা রাখতেন। আশুরায় রোজা রাখার ফজিলত ও মর্যাদা বিষয়ে   রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আমি আশাবাদী যে, আশুরার রোজার কারণে আল্লাহ অতীতের এক বছরের (সগিরা) গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন।’ মুসলিম, তিরমিজি। তবে রোজা রাখতে হবে দুই দিন- আশুরার দিনের সঙ্গে আগে এক দিন অথবা পরে এক দিন মিলিয়ে।  এদিনে আল্লাহতায়ালা বনি ইসরাইলের জন্য লোহিত সাগর যা মিসর ও সৌদি আরবের মাঝখানে অবস্থিত পার হওয়ার রাস্তা বের করে দিয়েছেন এবং তাদের নিরাপদে পার করে দিয়েছেন। আর একই রাস্তা দিয়ে ফেরাউন ও তার দলবলকে ডুবিয়ে মেরেছেন। বুখারি। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদিনায় এলেন তখন দেখলেন ইহুদিরা এই দিনে রোজা রাখে। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের কাছে রোজা রাখার কারণ জানতে চাইলে তারা উত্তর দিল, এই দিনে আমাদের নবী হজরত মুসা ও তাঁর অনুসারীদের আল্লাহ সমুদ্র পার করিয়েছেন এবং ফেরাউনের অত্যাচার থেকে রক্ষা করেছেন। তাই এর শুকরিয়া আদায় করে আমরা এই দিনে রোজা রাখি। তখন রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  তাদের বললেন, এ ক্ষেত্রে তোমাদের চেয়ে আমরা বেশি অধিকার রাখি। এরপর সাহাবিদের তিনি বললেন, ‘তোমরা আশুরার রোজা রাখো এবং ইহুদিদের বিরোধিতা করে আশুরার আগে বা পরে আরও এক দিন রোজা রাখো।’ মুসনাদে আহমাদ। তাই আমরা মহররমের ৯ ও ১০ অথবা ১০ ও ১১ তারিখে রোজা রাখব।

লেখক : খতিব, সমিতি বাজার মসজিদ, নাখালপাড়া, ঢাকা

সর্বশেষ খবর