রবিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
আইন আদালত

আইনে ত্যাজ্য পুত্র-কন্যা বলে কিছু নেই

অ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক

আইনে ত্যাজ্য পুত্র-কন্যা বলে কিছু নেই

সিথি ও সুজন একে অপরকে ভালোবাসে। তাদের ভালোবাসাকে বাস্তবে রূপ দিতে বিবাহ করার সিদ্ধান্ত নেয়। সাবালক-সাবালিকা হিসেবে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা ও আইনগত অধিকার তাদের আছে। সেই অধিকারের ভিত্তিতে তারা স্বেচ্ছায়, স্বজ্ঞানে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। এতে বাধা হয়ে দাঁড়ায় উভয় পরিবারের পিতা-মাতা, আত্মীয়স্বজন। সিথি ও সুজনের উভয় পরিবারই প্রচন্ড ক্ষিপ্ত হয়ে ত্যাজ্য পুত্র-কন্যা হিসেবে সব সম্পত্তির উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত করার ঘোষণা দেন। এটা আমাদের সমাজের একটি পরিচিত ঘটনা।  প্রকৃতপক্ষে আইনে ত্যাজ্য পুত্র-কন্যা বলে কিছুই নেই। অনেকে হলফনামার মাধ্যমে নোটারি পাবলিকের সামনে সন্তানকে ত্যাজ্য বলে ঘোষণা দিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করে। কিন্তু প্রচলিত আইনে ত্যাজ্যপুত্রের ঘোষণার কোনো ভিত্তি নেই। এটি নিছক একটি ভ্রান্ত ধারণা। এ ধরনের ঘোষণার আদৌ কোনো আইনি ভিত্তি নেই। ত্যাজ্য বলে ঘোষণা করলেই পুত্র-কন্যা ত্যাজ্য হয়ে যায় না। এটি লোকমুখে প্রচলিত একটি শব্দ। মুসলিম পারিবারিক আইনে স্পষ্টভাবে বলে দেওয়া আছে কে কতটুকু সম্পত্তি পাবেন। জন্মসূত্রে একজন পরিবারের সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার অর্জন করেন এবং এ অধিকার থেকে তাকে কোনোভাবেই বঞ্চিত করা যায় না।

তবে কোনো মা-বাবা দান, উইল বা বিক্রয়ের মাধ্যমে তাদের সম্পত্তি যে কারও কাছে হস্তান্তর করতে পারেন। এখানে মনে রাখতে হবে মুসলিম আইনে উইলের দ্বারা এক- তৃতীয়াংশের বেশি হস্তান্তর করা যায় না। তবে এ উইল ওই ব্যক্তির মৃত্যুর পর তা কার্যকর হয়। জীবিতকালে কোনো মা-বাবা তাদের সম্পত্তি অন্য কাউকে যথাযথ উপায়ে দান না করে গেলে কিংবা বিক্রয় করে না গেলে মৃত্যুর পর তাদের সন্তানেরা অবধারিতভাবেই উত্তরাধিকারী হিসেবে সেই রেখে যাওয়া সম্পত্তির অংশীদার হবেন।

কাজেই যে কোনো দলিল সম্পাদন কিংবা হলফনামার মাধ্যমে ত্যাজ্য করার ঘোষণা আইনের চোখে অচল এবং আদালতের মাধ্যমে বলবৎ করার সুযোগ নেই। যদি এমন হয় যে, বাবা-মা ত্যাজ্যপুত্র বলে সন্তানদের ঘোষণা দিয়ে গেছেন এবং এ জন্য অন্য অংশীদারেরা তাদের সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করার চেষ্টা করছেন তাহলে সন্তানেরা আইনের আশ্রয় নিতে পারেন। এক্ষেত্রে ১৮৯৩ সালের বাটোয়ারা আইনে ৫০০ টাকা কোর্ট ফি দিয়ে দেওয়ানি আদালতে বাটোয়ারা মামলা করা যায়। কোনো বাবা-মা যদি তাদের অবাধ্য সন্তানকে কোনো সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করতে চান তাহলে জীবিতাবস্থায় ওই সম্পত্তি অন্য কাউকে দান করে কিংবা বিক্রি করে সম্পত্তির দখল ছেড়ে দিয়ে যেতে হবে। মনে রাখতে হবে যেটুকু সম্পত্তিই বাবা-মা নিজের নামে রেখে যান না কেন তাদের মৃত্যুর পর তার বৈধ উত্তরাধিকারীরা এ সম্পত্তির অংশীদার হবেন।

তবে নরহত্যাজনিত অপরাধে অর্থাৎ কোনো ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত বা ভুলবশত কোনো ব্যক্তিকে হত্যা করলে সে ব্যক্তি সম্পত্তির উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হবে এবং যদি সে ভিন্ন ধর্ম গ্রহণ করে তাতেও সম্পত্তির উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হবে।

লেখক : সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী

Email: [email protected]

সর্বশেষ খবর