মঙ্গলবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন

গণমাধ্যমের আপত্তি আমলে নিন

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোনো ধারা রাখা হবে না- এমন প্রতিশ্রুতিই দেওয়া হয়েছিল সরকারের পক্ষ থেকে। আইনমন্ত্রী ও আইসিটি মন্ত্রীর সঙ্গে সম্পাদক পরিষদ, বিএফইউজে, অ্যাটকোর একাধিক বৈঠকে এ বিষয়ে সংবাদমাধ্যমকে আশ্বস্তও করা হয়। কিন্তু সংসদীয় কমিটি আইনের যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে তাতে সেই প্রতিশ্রুতির কোনো প্রতিফলন না ঘটা দুর্ভাগ্যজনক। প্রস্তাবিত আইনের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে ৮, ২১, ২৫, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২ ও ৪৩ ধারা গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে যেভাবে ক্ষুণ্ন করেছে তা কোনো গণতান্ত্রিক সমাজে কল্পনা করাও কঠিন। এ ধারাগুলো দুই মন্ত্রীর দেওয়া প্রতিশ্রুতির লঙ্ঘন এবং তা গণমাধ্যমের সঙ্গে সরকারের আস্থার সম্পর্কে চিড় ধরিয়েছে। গত রবিবার সম্পাদক পরিষদের বৈঠকে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির প্রতিবেদন সম্পর্কে উদ্বেগের পাশাপাশি চার দফা আপত্তি তুলে ধরা হয়েছে। আপত্তিগুলো হচ্ছে- এ আইন সংবিধানের ৩৯(২) এর ‘এ’ ও ‘বি’ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী মতপ্রকাশের ও সাংবাদিকতার স্বাধীনতার পরিপন্থী। মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা তথা চিন্তার স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার পরিপন্থী। গণতন্ত্রচর্চার সঙ্গেও এ আইন সাংঘর্ষিক, বাংলাদেশ যার জন্য সব সময় লড়াই করেছে। সাংবাদিকতার মৌলিক দর্শন ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতারও পরিপন্থী এ আইন। যার জন্য সাংবাদিকরা নিরন্তর সংগ্রাম করছেন। নতুন আইনটি পাস করা হলে তা গণমাধ্যমের সঙ্গে সরকারের সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কে ফাটল ধরাবে। দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য এ আইন যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে, তা সরকারের ভাবমূর্তির জন্য সুখকর বলে বিবেচিত হবে না। সংবাদমাধ্যমকে বলা হয় ফোর্থ স্টেট। আমাদের সংবিধানে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতাকে সমুন্নত রাখা হয়েছে। বাংলাদেশের জনগণের স্বাধিকার আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে গণমাধ্যমকর্মীরা একাত্ম হয়ে কাজ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ বর্তমান সরকারের আমলে এ ধরনের একটি আইন পাস হলে তা গণতন্ত্রপ্রেমী মানুষের কাছে সরকারের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন সৃষ্টি করবে। আমাদের বিশ্বাস, আইনটি সম্পর্কে সংবাদমাধ্যমের যে আপত্তি রয়েছে তা আমলে নিয়ে সরকার বিতর্কিত ধারাগুলো বাদ দেওয়ার ঔদার্য দেখাবে। এটি তাদের কর্তব্য বলে বিবেচিত হওয়া উচিত।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর