মঙ্গলবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

হিজরি নববর্ষ এলো ঘুমিয়ে থাকল মুসলমান

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

হিজরি নববর্ষ এলো ঘুমিয়ে থাকল মুসলমান

প্রতিটি ধর্ম-বর্ণ-জাতির জন্য আলাদা উৎসব-সংস্কৃতি আছে। উৎসব-সংস্কৃতিই বলে দেয় একটি জাতি কত বেশি কর্মতৎপর। কত বেশি উৎফুল্ল। কত বেশি উন্নত। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মক্কা থেকে হিজরত করে মদিনায় এলেন, তখন দেখলেন ইহুদিদের মতো মুসলমানরাও উৎসবে মেতে উঠেছে। তখন রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলমানদের বললেন, তোমরা হলে শ্রেষ্ঠ নবীর শ্রেষ্ঠ উম্মত। তোমাদের উৎসবও অন্য সবার থেকে আলাদা হবে। সেখানে তোমাদের স্বকীয়তা বজায় থাকবে। শুরু হলো ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা নামের দুটি উৎসব।

এভাবে কেটে যায় অনেক বছর। দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর (রা.)-এর সময় রাষ্ট্র পরিচালনার সুবিধার জন্য চালু করা হয় একটি স্বতন্ত্র সন পদ্ধতি। যত দিন বিশ্বের সিংহাসনে মুসলমানরা বসে ছিল, তত দিন ওই সনমতেই চলেছে বিশ্বের সব মানুষ। যখন মুসলমানরা কোরআনহারা হয়ে গেল, তাদের জীবন থেকে সব উৎসব-আনন্দ হারিয়ে গেল, তখন আস্তে আস্তে সন পদ্ধতি ওইসলামী নিদর্শনগুলোও পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে শুরু করল। আর আজ হিজরি সন বলে যে মুসলমানদের জন্য একটি স্বতন্ত্র সন আছে- এ কথাটিও জানে না অনেকে।

হায়! যে ধর্ম সংস্কৃতিকে এত গুরুত্ব দিয়েছে, যে নবী উৎসবকে মানুষের দুয়ারে দুয়ারে পৌঁছে দিয়েছেন, সেই ধর্মের অন্যতম উৎসব হিজরি নববর্ষ এখন উদ্‌যাপন করে না তার অনুসারীরা। ইংরেজি নববর্ষ, বাংলা নববর্ষ যতটা ধুমধামের সঙ্গে উদ্্যাপন হয়, তার ছিটেফোঁটারও প্রকাশ ঘটে না হিজরি নববর্ষে। পত্রিকা কিংবা খবরের চ্যানেলে চোখ না রাখলে তো জানাও যায় না কবে হিজরি সন এলো আর কবে শেষ হলো।

হজরত ওমর (রা.) যখন একটি নতুন ইসলামী সন পদ্ধতি চালু করেছিলেন, তখন তিনি অনেক ভেবেচিন্তে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হিজরতের দিনটিকে বেছে নিয়েছিলেন। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেদিন মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেছেন, সেই দিনটিকে ইসলামী সনের প্রথম দিন ধরা হয়। আমরা যদি একটু গভীরে যাই, তাহলে দেখব, সেদিন মদিনায় কেমন সাড়া পড়েছিল। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় পা রাখামাত্রই মদিনাবাসী আনন্দে আত্মহারা হয়ে উৎসবে মেতে উঠেছিল। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের এ উৎসবকে সমর্থন দিয়েছেন। সেই স্মৃতি স্মরণ করেই ওমর (রা.) হিজরি সন গণনা শুরু করলেন।

বছর ঘুরে সেই আনন্দঘন দিন মুসলমানের দুয়ারে ফিরে এলো, কিন্তু মুসলমান থাকল ঘুমিয়ে। অথচ এই মুসলমানই শত বাধা ও আইনি নিষেধ লঙ্ঘন করে ইংরেজি নববর্ষ উদ্‌যাপন করে। ধর্মের গন্ডি পেরিয়ে বাংলা নববর্ষ উদ্‌যাপন করে। ইংরেজি কিংবা বাংলা নববর্ষ উদ্্যাপন দোষণীয় তা বলছি না। বলতে চাই, অন্যসব বর্ষ উদ্‌যাপনে আমরা যেমন বাঁধভাঙা আনন্দের জোয়ারে ভেসে যাই, হিজরি নববর্ষে কেন তার কানাকড়িও করছি না। এর জন্য অবশ্যই সাধারণ মানুষের দোষ নেই। দোষ আলেমদের। তারা কখনো মানুষকে হিজরি বর্ষ উদ্‌যাপনের কথা বলেন না। বলেন না রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্মৃতিবিজড়িত হিজরতের কথা স্মরণ করে এ দিনটিকে ধর্মের বৈধ সীমায় উদ্‌যাপনের সওয়াবের কথা। সাধারণ মানুষের কানে যেহেতু এ দিনটির কথা পৌঁছে না, তাই সাধারণ মানুষের ঘুমও ভাঙে না।

লেখক : গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব। চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি

www.selimazadi.com

সর্বশেষ খবর