শুক্রবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন

যথেচ্ছতা যেন মাথাচাড়া না দেয়

সাংবাদিক সমাজের ঘোরতর আপত্তি শুধু নয়, সংসদের সরকারবান্ধব বিরোধী দলের সংশোধনী প্রস্তাবও উপেক্ষা করে শেষ পর্যন্ত বহুল আলোচিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাস হলো। এ আইনের বেশ কয়েকটি ধারার ব্যাপারে সাংবাদিক সমাজ একাট্টা হয়ে আপত্তি করলেও তা আমলে না নেওয়া গণমাধ্যম-সংশ্লি­ষ্টদের জন্য হতাশাজনক বললেও কম বলা হবে। পাসকৃত আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে কর্মকর্তাদের দায়মুক্তির যে বিধান রাখা হয়েছে তা বাতিলের জন্য সংশোধনী প্রস্তাব দেওয়া হয় বিরোধী দলের পক্ষ থেকে। কিন্তু সে প্রস্তাবও উপেক্ষা করা হয়েছে দুঃখজনকভাবে। নতুন আইনকে সুষ্ঠু ও মুক্ত সমাজের পরিপন্থী বলে অভিহিত করেছেন গণমাধ্যমের বিশিষ্টজনেরা। তাদের মতে, এমন একটি আইন গণমাধ্যমের জন্য কোনো ভালো সংকেত নয়। সাংবাদিক নেতাদের আশঙ্কা, নতুন আইনটি সংবাদমাধ্যমে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা সৃষ্টি করবে। পাসকৃত আইনটির সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক সংবাদমাধ্যমকর্মীদের। যাদের সঙ্গে শুরু থেকেই বর্তমান সরকারের সম্পর্ক পূর্বসূরিদের চেয়ে ভালো। তার পরও সাংবাদিকদের দেওয়া মতামত পাশ কাটিয়ে যেভাবে তাড়াহুড়া করে আইনটি পাস করা হয়েছে তা সে সুসম্পর্কে ব্যত্যয় ঘটানোর আশঙ্কা সৃষ্টি করেছে। সরকার গণমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রতি তাদের অঙ্গীকারবদ্ধ অবস্থানের কথা জোরেশোরে প্রচার করে। কিন্তু পাসকৃত আইন সে অবস্থানের ভিতকে দুর্বল করে দিয়েছে। সন্দেহ নেই, ডিজিটাল প্রযুক্তি মানুষকে যেমন তাৎক্ষণিকভাবে তথ্য-উপাত্ত জানার সুযোগ সৃষ্টি করেছে, তেমন এর অপব্যবহারের ঘটনাও কম নয়। এ ধরনের অপরাধ রোধে আইনটি পাস হলেও আইন প্রয়োগকারীদের দায়মুক্তির বিধান শিব গড়তে বানর গড়া সার হবে কিনা তা একটি বড় মাপের প্রশ্ন। সরকার যেহেতু কোনো অমর সত্তা নয়, সেহেতু ভবিষ্যতে এ আইন যাতে তাদের জন্য শাকের করাত না হয়ে দাঁড়ায়, সে বিষয়টি বিবেচনায় রাখা উচিত ছিল। আমরা আশা করব গণমাধ্যমের সঙ্গে ঐতিহ্যগত সুসম্পর্কের ধারা বজায় রাখতে সরকারের নীতিনির্ধারকরা তাদের আপত্তিগুলো মাথায় রাখবেন। অপপ্রয়োগ রোধে সব পক্ষের সম্মতি নিয়ে কোনো সুব্যবস্থা নিশ্চিত করা যায় কিনা সে বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে ভাবা হবে। বিশেষত আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে যথেচ্ছতা যাতে মাথাচাড়া দিয়ে না ওঠে সে বিষয়টি মাথায় রাখা জরুরি।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর