রাজনৈতিক সদিচ্ছা, আমলাতন্ত্রের সমন্বয়ের অভাব বাংলাদেশের সুশাসন ও সামষ্টিক উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি করছে। লুটেরাদের থাবা দেশের ব্যাংকিং খাতকে বিপর্যস্ত অবস্থায় ঠেলে দিতে সক্ষম হচ্ছে এ সীমাবদ্ধতার কারণে। গত সোমবার সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং আয়োজিত কর্মশালায় অর্থনীতিবিদ, শিক্ষক ও সাবেক আমলারা বলেছেন, বাংলাদেশে খেলাপি ঋণের হার দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি। প্রতি বছরই খেলাপি ঋণের হার বাড়ছে। এ প্রবণতা অর্থনীতিতে ঝুঁকি তৈরি করছে। গত এক দশকে উচ্চ প্রবৃদ্ধি সত্ত্বেও সামষ্টিক অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকে অগ্রগতি সন্তোষজনক নয়। মাথাপিছু আয়, জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে দেশ অনেক এগিয়েছে। কিন্তু সুশাসন, জবাবদিহি ও সহজে ব্যবসা করার সূচকে আবার পেছনের দিকে হাঁটছে। দারিদ্র্য নিরসন হলেও আয়বৈষম্য বাড়ছে। এজন্য দায়ী রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব ও আমলাতন্ত্রের সমন্বয়ের ঘাটতি। খেলাপি ঋণ কীভাবে বাড়ছে তা তুলে ধরা হয়েছে কর্মশালায়। এতে বলা হয়, ২০১৭ সালে বিতরণ করা মোট ঋণের মধ্যে ১০ দশমিক ৩১ শতাংশ খেলাপি। ২০১৫ সালে তা ছিল ৮ দশমিক ৪০ শতাংশ। প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতার কারণে অনেক সুযোগ যেমন কাজে লাগানো যাচ্ছে না, আবার অনেক সম্পদ নষ্ট হচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, জমির অভাবে যেমন শিল্পকারখানা করা সম্ভব হচ্ছে না, অন্যদিকে অনেক জমি অব্যবহƒত থেকে যাচ্ছে। জমি বেদখল হয়ে অনুৎপাদনশীল কার্যক্রমে ব্যবহƒত হচ্ছে। আবার শিল্পায়ন যেভাবে হচ্ছে তাতে পরিবেশের ক্ষতির বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাচ্ছে না। এসবই প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতার অভাব। গণতান্ত্রিক চর্চাও এ ক্ষেত্রে জরুরি। কোনো সরকার দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকলে সে দেশে ‘ধামাধরা পুঁজিবাদ’ সৃষ্টি হয়। অর্থাৎ একটি শ্রেণি কোনো ধরনের উদ্ভাবন ছাড়াই রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় বড় হয়, যা সমাজে ব্যাপক বৈষম্য সৃষ্টি করে। খেলাপি ঋণ দেশের অর্থনীতির জন্য বিসংবাদ ডেকে আনছে। এ আপদ্্ থেকে রেহাই পেতে যে সদিচ্ছার প্রয়োজন হয় তা সুশাসনের মাধ্যমেই নিশ্চিত করা যায়। দেশের অর্থনীতি ও রাজনীতিকে সঠিক পথে নিতে হলে সে পথই বেছে নিতে হবে।