বুধবার, ৩ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত অপরিসীম

মুহম্মাদ ওমর ফারুক

তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত অপরিসীম

নবী রসুল ও আওলিয়ারা রাত জেগে ইবাদত করতেন। রাতে মানুষজন  প্রকৃতি যখন নিস্তব্ধ থাকত তখন তারা মশগুল থাকতেন  আল্ল­াহর ইবাদতে তথা তাহাজ্জুদ নামাজে। তাহাজ্জুদের ফজিলত সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করা হয়েছে ‘রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদ নামাজ কায়েম করুন; এটা আপনার জন্য এক অতিরিক্ত কর্তব্য। আশা করা যায়, আপনার প্রতিপালক আপনাকে মাকামে মাহমুদ প্রশংসিত স্থানে প্রতিষ্ঠিত করবেন। (সূরা বনি-ইসরাইল : ৭৯।) আরও ইরশাদ করা হয়েছে, ‘তারা শয্যা ত্যাগ করে আকাক্সক্ষা ও আশঙ্কার সঙ্গে তাদের প্রতিপালককে ডাকে এবং আমি তাদের যে রুজি প্রদান করেছি, তা হতে তারা দান করে।’ (সূরা সেজদা : ১৬।)

তাহাজ্জুদ নামাজ নফসকে  আল্ল­াহমুখী করার এক বিশেষ মাধ্যম। কারণ গভীর রাতে সুখশয্যা ত্যাগ করেই আল্ল­াহর ইবাদতে মশগুল হতে হয়। তাহাজ্জুদ নামাজের মাধ্যমে বান্দা গভীরভাবে আল্ল­াহ প্রেমে মগ্ন হওয়ার সুযোগ পায়। এ নামাজ মন ও চরিত্রকে নির্মল ও পবিত্র করতে সহায়তা করে। পবিত্র কোরআনের সূরা মুজ্জাম্মিলের ৬ নম্বর আয়াতে ইরশাদ করা হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই রাতে ঘুম থেকে ওঠা মনকে দমিত করার জন্য খুব বেশি কার্যকর এবং সে সময়ের কোরআন পাঠ বা জিকর একেবারে যথার্থ।’ অন্যত্র বলা হয়েছে,  ‘আর আল্ল­াহর প্রিয় বান্দা তারা, যারা তাদের রবের দরবারে সিজদা করে এবং দাঁড়িয়ে থেকেই রাত কাটিয়ে দেয়’ (সূরা ফুরকান : ৬৪)।

যারা দৈনন্দিন জীবনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ সঠিকভাবে আদায় করেন। যারা আল্ল­াহ ও রসুল সাল্ল­াল্ল­াহু আলাইহি ওয়াসাল্ল­ামের সব নির্দেশ মান্য করাকে অবশ্য কর্তব্য বলে ভাবেন সেই সব ইমানদারই তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়ে ব্রতী হন। এ নামাজ আদায়ের উদ্দেশ্য মহান আল্ল­াহকে সন্তুষ্ট করা।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রসুল সাল্ল­াল্ল­াহু আলাইহি ওয়াসাল্ল­াম বলেছেন,  ‘আল্ল­াহতায়ালা প্রতি রাতেই নিকটবর্তী আসমানে অবতীর্ণ হন যখন রাতের শেষ তৃতীয় ভাগ অবশিষ্ট থাকে। তিনি তখন বলতে থাকেন কে আছ যে আমায় ডাকবে, আর আমি তার ডাকে সাড়া দেব? কে আছ যে আমার কাছে কিছু চাইবে, আর আমি তাকে তা দান করব? কে আছ যে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে আর আমি তাকে ক্ষমা করব? (বুখারি ও মুসলিম)

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত আরেক হাদিসে বলা হয়েছে, আমি রসুলুল্ল­াহ রসুল সাল্ল­াল্ল­াহু আলাইহি ওয়াসাল্ল­ামকে বলতে শুনেছি, ফরজ নামাজের পর সবচেয়ে উত্তম নামাজ হলো তাহাজ্জুদের নামাজ।’ (সুনানে আহমদ)

আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বর্ণিত, রসুল সাল্ল­াল্ল­াহু আলাইহি  ওয়াসাল্ল­াম বলেছেন, ‘তিন ব্যক্তির প্রতি আল্ল­াহ খুশি হন। প্রথমত, যে ব্যক্তি তাহাজ্জুদের জন্য ওঠে এবং নামাজ পড়ে। দ্বিতীয়, নামাজের জন্য সারিবদ্ধভাবে যেসব মুসল্লি­ কাতারে দাঁড়ায়। তৃতীয়, মুজাহিদ যারা আল্ল­াহর পথে যুদ্ধ করার জন্য সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ায়।’ অনুরূপ অন্য আরেকটি হাদিস  রয়েছে, হজরত জাবির (রা.) বলেন, আমি রসুলুল্ল­াহ সাল্ল­াল্ল­াহু আলাইহি ওয়াসাল্ল­ামকে বলতে শুনেছি রাতের মধ্যে এমন একটি মুহূর্ত আছে যদি কোনো মুসলমান তা লাভ করে এবং আল্ল­াহর কাছে ইহকাল ও পরকালের কোনো কল্যাণ চায় আল্ল­াহ নিশ্চয়ই তাকে তা দান করেন। (মুসলিম)

আল্ল­াহ আমাদের সবাইকে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করার তৌফিক দান করুন, আমিন।

লেখক : ইসলামী গবেষক।

সর্বশেষ খবর