রবিবার, ৭ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা
দৃষ্টিপাত

স্বচ্ছ রাজনীতি এগিয়ে নিতে হবে

ইঞ্জিনিয়ার এম এ মান্নান

স্বচ্ছ রাজনীতি এগিয়ে নিতে হবে

আমাদের দেশের একজন সামরিক শাসক ঘোষণা করেছিলেন আমি রাজনীতিকদের জন্য রাজনীতি করা কঠিন করে তুলব। সেই জেনারেল সাহেব তার দেওয়া কথা রেখেছিলেন। তিনি রাজনৈতিক দল গঠন করেছিলেন যুদ্ধাপরাধী ও সুযোগ সন্ধানীদের নিয়ে। টাকা দিয়ে ভোট কেনার অপরাজনীতি শুরু হয়েছিল তার আমলেই। মেধাবী ছাত্রদের ডেকে নিয়ে কুমন্ত্রণা দিয়ে সন্ত্রাসী বানিয়েছিলেন নিজের সিংহাসন পাকাপোক্ত করতে। যুব সমাজকে যুব কমপ্লেক্সে জড়িত করে তাদের সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির সঙ্গে যুক্ত করেছিলেন। ওই জেনারেল রাজনীতিকদের জন্য রাজনীতি কঠিন করার জন্য প্রশ্রয় দিয়েছিলেন কালো টাকার মালিকদের।

দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, কালো টাকার মালিকরা আজ রাজনীতিকে দূষিত করে ফেলেছে। সৎ ও ভালো লোকদের তারা রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। রাজনীতিকদের            নেতৃত্বে আমাদের দেশ স্বাধীন হয়েছে। এ জাতির যা কিছু অর্জন তার সব কিছু এসেছে রাজনীতিকদের হাত দিয়ে। এ দেশের রাজনীতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, মওলানা ভাসানী, সোহরাওয়ার্দী, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদের মতো সৎ নির্ভীক ও দেশপ্রেমিক রাজনীতিককে ধারণ করেছে। তাই দেশকে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলতে হলে সৎ মানুষদের রাজনীতিতে জড়িত করতে হবে। নির্বাচনে সৎ মানুষেরা যাতে দলীয় মনোনয়ন পায় তা প্রতিটি দলকে নিশ্চিত করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের একজন সংগঠক হিসেবে কটিয়াদী পাকুন্দিয়া এলাকার একজন রাজনৈতিক কর্মী ও সমাজকর্মী হিসেবে আমি এই এলাকার হাজার হাজার মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের বলেছি এলাকাবাসীর কল্যাণ চাইলে সৎ ও দুর্নীতিমুক্ত রাজনৈতিক ধারা গড়ে তুলতে হবে। রাজনীতির ক্ষেত্রে ভালো মানুষদের বেছে নিতে হবে। মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনাকারী মুজিবনগর সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের নিজের জেলা কিশোরগঞ্জ। তিনি ছিলেন সততা ও দেশপ্রেমের উদাহরণ। তার হাতে গড়া একজন কর্মী হিসেবে আমার বিশ্বাস সততা ও নিষ্ঠা থাকলে যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাও স্পষ্ট করে বলেছেন, কোনো অসৎ ও বিতর্কিত ব্যক্তিকে দলের মনোনয়ন দেওয়া হবে না। বসন্তের কোকিল এবং চাটুকাররা দলীয় মনোনয়নের ক্ষেত্রে বিবেচিত হবেন না। জননেত্রীর এ বক্তব্যে দলের নিবেদিতপ্রাণ নেতা-কর্মীরা আশাবাদী যে আগামী নির্বাচনে সঠিক লোকদেরই মনোনয়ন দেওয়া হবে। মুক্তিযুদ্ধের ফসল বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দল শুধুমাত্র তাদেরই মনোনয়ন দেবে যাদের পরিচয় এলাকাবাসীর আপন লোক হিসেবে। মানুষ যাদের সুখে-দুঃখে কাছে পায় তাদেরকেই বেছে নেওয়া হবে।

বর্তমান সরকারের আমলে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক উন্নয়নে ঈর্ষণীয় সাফল্য দেখিয়েছে। স্বাধীনতার পর যে দেশকে দেখা হতো কৃপার চোখে সে দেশ আজ জাতিসংঘ ও বিশ্বব্যাংকের কাছেও উন্নয়নের অনুকরণীয় মডেল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বাংলাদেশকে মধ্যআয়ের দেশ এবং পরবর্তীতে উন্নত বিশ্বের সোপানে নিতে হলে চাই দেশের প্রতিটি এলাকায় সঠিক           নেতৃত্ব। যারা জননেত্রী শেখ হাসিনার দেশ গড়ার কাজে তার সৈনিক হিসেবে ভূমিকা পালন করবেন। এ বাস্তবতায় সমাজের ভালো লোকদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণে উৎসাহ জোগাতে হবে। দেশে যে উন্নয়ন হচ্ছে তার সুফল যাতে তৃণমূল পর্যায়ের প্রতিটি মানুষের কাছে পৌঁছে তা নিশ্চিত করতেই রাজনীতি থেকে অসৎ ও দুর্নীতিবাজদের হটাতে হবে। তৃণমূল পর্যায়ের একজন সংগঠক হিসেবে আমি কটিয়াদী ও পাকুন্দিয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনের যে আগ্রহ দেখেছি উৎসাহিত হওয়ার মতো। আমার বিশ্বাস সারা দেশের মানুষই আশাবাদী হয়ে উঠেছে মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক, স্বাধীনতার স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ সন্তান শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সাধারণ মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের লড়াই সফল হবে। বাংলাদেশকে ৩০ লাখ শহীদের স্বপ্নসাধ সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলতে হলে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের বিকল্প নেই। তবে জননেত্রীর দেশ গড়ার আহ্বানকে যারা তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের কাছে পৌঁছে দেবেন তাদের প্রতিও সাধারণ মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস থাকতে হবে। তারা সৎ মানুষ কি না, জনগণের আপন লোক কি না তা নেত্রীকেই নির্ণয় করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ভুল সিদ্ধান্তের কোনো সুযোগ নেই। একজন রাজনৈতিক কর্মী ও সমাজসেবী হিসেবে আমি এলাকাবাসীর আপন লোক হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যেমন দেশপ্রেম ও দায়িত্ববোধে বলীয়ান হওয়ার চেষ্টা করেছি, তেমনি স্বাধীনতার পর আমার সাধ্যের সবটুকু ব্যয় করেছি এলাকাবাসীর উন্নয়নে। নিজ এলাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, জামে মসজিদ ও জনকল্যাণে সমাজসেবা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছি।

কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহ্যবাহী জনপদ। শহীদ জাতীয় নেতা, বঙ্গবন্ধুর বিশ্বস্ত সহচর  সৈয়দ নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর ডাকে আমরা এ এলাকার মানুষ মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছি। এ জনপদ যাতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালনকারী জনপদে পরিণত হয় তা নিশ্চিত করাই মুক্তিযুদ্ধের একজন সংগঠক হিসেবে আমার একমাত্র কামনা।

                লেখক : কলামিস্ট।

সর্বশেষ খবর