সোমবার, ৮ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

পারস্য ভ্রমণের অনুস্মরণ

আতাউর রহমান

পারস্য ভ্রমণের অনুস্মরণ

পারস্য হচ্ছে ইরানের প্রাচীন নাম। বর্তমান নাম ইরান এসেছে ইংরেজি শব্দ ‘এরিয়ান’ তথা ‘আর্য’ থেকে, যেহেতু ইরানের আদি অধিবাসী হচ্ছেন আর্যরাই। ইরান তথা পারস্য প্রাচীন সভ্যতার দেশ। আর ইরানিদের মাতৃভাষা ফার্সিও প্রাচীন ভাষাগুলোর অন্যতম বিধায় ক্লাসিকের মর্যাদায় অভিষিক্ত। মনে পড়ে, পঞ্চাশ দশকে আমরা যখন হাইস্কুলে পড়তাম তখন সপ্তম ও অষ্টম এই দুই শ্রেণিতে উর্দুর সঙ্গে সঙ্গে ক্লাসিকস হিসেবে ফার্সি, কোথাও বা আরবি পড়তে হতো। নবম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হওয়ার পর ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত উর্দু ইনলিউ অব ক্লাসিকস অর্থাৎ ক্লাসিকসের পরিবর্তে পড়তে হয়েছিল। তা হাইস্কুলে দুই বছর ফার্সি পড়াতে ভাষাটা আমাদের বেশ রপ্ত হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু পরবর্তীতে চর্চার অভাবে স্মৃতি থেকে অনেক কিছুই বিলীন হয়ে গেছে। তবে ফার্সি শিরীন জবান আস্ত (ফার্সি অত্যন্ত সুললিত ভাষা) এবং কিছু ফার্সি বিজ্ঞোক্তি এখনোব্দি স্মরণে আছে বিধায় স্থল হিসেবে সেগুলো আওড়িয়ে বিদ্যা জাহির করার প্রয়াস পাই। এই যেমনÑ (ক) ‘কম র্খুদন্ ও কম গুফ্তন্ কা-রে খিরদ্মন্দ, আস্ত’ অর্থাৎ, কম খাওয়া ও কম কথা বলা বুদ্ধিমানের কাজ। (খ) তা মর্দ সগুনে না গুফ্তা বাশ্দ আ’ইব ও হুনরশ না হুফ্তা বাশদ্; অর্থাৎ মানুষ যতক্ষণ কথা না বলবে ততক্ষণ তার দোষ ও গুণ দুটোই লুকানো থাকবে। আরও স্মরণ আছে, হাইস্কুলে আলাউদ্দিন নামে আমাদের এক সহপাঠী ছিল। সে একদিন ক্লাসে ফার্সি বাক্য ‘ই ঝন্ পীর আস্ত’ (এই স্ত্রীলোকটি বৃদ্ধ) উচ্চারণ করতে গিয়ে ভুলে বলে ফেলেছিল ‘ইন্ জিন্ পীর আস্ত’। সঙ্গে সঙ্গে স্যার তার নাম দিয়ে দিলেন ‘ইঞ্জিন পীর’। শেষোব্দি স্বনামে তাকে স্কুলে কেউই চিনত না; ইঞ্জিন পীর নামেই চিনত এবং বেচারা মধ্যবয়সে পরপারে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তার সহপাঠীদের কাছে ওই নামেই পরিচিত হয়ে থাকল।

থাকগে এসব কথা। এবারে আসল কথায় আসা যাক ২০০০ সালে অর্থাৎ আমার পেনশনে যাওয়ার পূর্বের বছরে ইরানের রাজধানী তেহরানে এশিয়ান প্যাসিফিক পোস্টাল ইউনিয়নের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেই সম্মেলনে স্বভাবতই বাংলাদেশ ডাকবিভাগের ডিজি হিসেবে স্বদেশের প্রতিনিধিত্ব করতে আমাকে তেহরানে যেতে হয়েছিল। ছিলাম সপ্তাহখানেক একটি পাঁচতারা হোটেলে। ইরান যে একটি প্রাচীন সভ্যতার দেশ সেটা সেদেশে পা রাখলেই বিলক্ষণ বোঝা যায়। রাস্তাঘাট কোথাও কোথাও সংকীর্ণ হলেও একেবারে তক্তকে ঝকঝকে, ময়লা-আবর্জনার নামগন্ধটি নেই। আর সেদেশের অধিকসংখ্যক অধিবাসী, বিশেষত মহিলারা যারা আয়াতুল্ল­াহ খোমেনির বিপ্লবোত্তর যুগে বাধ্যতামূলক বোরকা পরে অফিস-আদালত করেন ও প্রচুর গাড়ি হাঁকান, হচ্ছেন উৎকৃষ্ট অবয়বের। প্রসঙ্গত মনে পড়ে গেল, মাত্র আট-নয় দশক পূর্বেও ইরানি জিপসি মেয়েরা মাথায় রুমাল বেঁধে ও ঘাগরা পরে আমাদের গ্রামে-গঞ্জে চশমা, চাকু, ওয়ালেট, পেস্তা বাদাম, আখরোট ইত্যাদি নেচে গেয়ে ফেরি করে বেড়াত। আর সুশিক্ষিত ব্যক্তিমাত্রই জানেন, গেল শতাব্দীর তৃতীয় দশকের শুরুতে ইরানিয়ান সেনাবাহিনীর এক অফিসার রিজা খান পাহ্লভি তার দেশের শাসনভার গ্রহণ করে পাহ্লভি রাজবংশের গোড়াপত্তন করেছিলেন। তৎপুত্র ও উত্তরাধিকারী রেজা খান পাহ্লভি প্রথমে শাদী করেছিলেন মিসরের রাজা ফারুকের বোনকেÑ  সেই ফারুক যিনি রাজ্যচ্যুতির সময় বলেছিলেন, ভবিষ্যতে তাসের চার রাজা ও বিলেতের রাজা/রানী ছাড়া আর কোথাও রাজা/রানী থাকবে না। তো সেই বিবি তাকে পুত্র সন্তান দিতে ব্যর্থ হওয়ায় সিংহাসন রক্ষার্থে রেজা খান পাহ্লভি প্রথম বিবিকে তালাক দিয়ে দ্বিতীয় বার দার পরিগ্রহণপূর্বক পুত্র সন্তান পেলেন বটে, কিন্তু অদৃষ্টের কী নির্মম পরিহাস! প্যারিসে নির্বাসিত আয়াতুল্ল­াহ খোমেনির নেতৃত্বে ১৯৭৯ সালে অনুষ্ঠিত বিপ্লবের প্লাবনে তাকে সিংহাসন ও স্বদেশ দুটোই হারাতে হলো। বর্তমানে জীবিত ও আমেরিকায় আশ্রিত তার জ্যেষ্ঠপুত্র ওখান থেকে খামাখা সিংহাসন পুনরুদ্ধারের আশায় নিয়মিত নিউজ বুলেটিন প্রকাশ করে যাচ্ছেন, যেগুলোর দু-একটি দেখার সৌভাগ্য(!) আমার হয়েছে।

ফিরে আসি ইরান তথা পারস্য ভ্রমণের বৃত্তান্ত বর্ণনায়। এশিয়ান প্যাসিফিক পোস্টাল ইউনিয়নের দ্বিবার্ষিক সম্মেলনের সার্বিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে স্বভাবতই ছিলেন ইরান ডাকবিভাগের সিনিয়র কর্মকর্তারা। অধিবেশন শুরুর আগে একত্রে উপবিষ্ট ওদের কয়েকজনের কাছে নিজের পরিচয় দিতেই ওরা সমস্বরে ইংরেজিতে বলে উঠলেন, ‘আমাদের কাছে আপনাকে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন নেই; আমরা ইতিপূর্বে আপনার ব্যাপারে অবগত আছি।’ বুঝলাম, বিশ্ব ডাক সংস্থার হেডকোয়ার্টার তথা সুইজারল্যান্ডের বার্নে অনুষ্ঠিত বার্ষিক অধিবেশনে ইরান থেকে অংশগ্রহণকারী একাধিক ডেলিগেটের সঙ্গে ইতিপূর্বে আমার যে মিথস্ক্রিয়া হয়েছে, সেই সুবাদে আমার উইট ও হিউমারের বিষয়ে ওরা জেনে গেছেন। অতএব, নিজের সুনাম রক্ষার্থে ওদের কিছু কথা বলতেই হলো।

প্রসঙ্গত উল্লে­খ্য, ইরানিরা খুব হিউমারপ্রবণ জাতি এবং ওদের ফার্সি সাহিত্যে গদ্যের চেয়ে পদ্যেই অধিকতর হিউমার পরিলক্ষিত হয়। অনেক পৃথিবী বিখ্যাত কবি যেমন রুমি, জামি, সাদি, ফেরদৌসি, হাফিজ, ফৈজি, হেলালি, আনসারী, আত্তার প্রমুখ ফার্সি সাহিত্যের শোভাবর্ধন করেছেন। ইরানিরা নাকি মনে করেন, কোরআন শরিফ যদি আরবিতে না হয়ে ফার্সি ভাষায় নাজেল হতো তাহলে তাদের আধ্যাত্মিক কবি জালালুদ্দিন রুমি রচিত ‘মসনভি’ হতো ঐশীগ্রন্থ। আর আমরা মিলাদের সময় বালাঘাল উলা বি কামালিহি শীর্ষক যে দরুদটি পাঠ করি, সেটাও তো কবি মুসলেহ উদ্দিন সিরাজি ওরফে শেখ সাদি বিরচিত শ্লোক। ইরানের আরেক কবি হাফিজ নাকি তার প্রিয়তমার গালের একটি তিলের পরিবর্তে বুখারা ও সমরখন্দ শহরদ্বয় বিনিময় করতে চেয়েছিলেন। যা হোক, আমি প্রথমেই ওদের বললাম যে আমাদের দেশে সৈয়দ মুজতবা আলী নামে একজন বিখ্যাত রস সাহিত্যিক ছিলেন, যিনি ফার্সি ভাষায় প্রভূত ব্যুৎপত্তিহেতু ফার্সি সাহিত্যের    রস-ভান্ডার থেকে দেদার আহরণ করেছেন এবং তার বর্ণনার প্রসাদগুণে ওগুলো কালজয়ী হয়ে গেছে। উদাহরণস্বরূপ যেমন ফার্সি সাহিত্যের গুবরে কুশন শব-ই আওয়াল (গুবরে মানে বিড়াল, ‘কুশতন’ মানে মেরে ফেলা, ‘শব’ মানে রাত, আর ‘আওয়াল’ মানে প্রথম) শীর্ষক গল্পটাকে তিনি মার্জার নিধন কাব্য নামে পদ্যে রূপান্তরিত করে অন্তিমে লিখেছেন : ‘সাদির পহেলা রাতে মারিবে বিড়াল/না হলে বরবাদ সব, তাবৎ পয়মাল।’

গল্পটা তাহলে এস্থলে বলেই ফেলা যাক : পারস্য দেশের চালচুলোহীন দুই ভাই দুই যমজ জমিদার-তনয়াকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে গেল এই শর্তে যে, রোজ সকালে ঘুম থেকে ওঠে স্ত্রীরা স্ব-স্ব স্বামীকে ৫০টি জুতার ঘা মারবে। বিয়ে হয়ে গেল এবং বিয়ের পর দু’ভাই ভিন্ন ভিন্ন হাবেলিতে বাস করতে লাগল। বহুদিন পরে দু’ভাইতে আচমকা সাক্ষাৎ ঘটলে বড় ভাই দেশে যে ছোট ভাইয়ের মাথার চুল অক্ষত, অথচ জুতার ঘা খেতে খেতে তার মাথার টাক পড়ে গেছে এবংবিধ অবস্থার কারণ জিজ্ঞাসিত হয়ে ছোটভাই বলল, আমি প্রথম রাতেই বিড়াল মেরেছি। রাতে ডিনারের বেলায় বিবির পোষা বিড়ালটি মিয়াও বলতেই আমি উম্মু ক্ত তরবারির এক কোপে ওটার শিরশ্দে করেছি। বিবি আমার অগ্নিমূর্তি দেখে পরদিন সকালে জুতা হাতে নিতেই সাহস পাননি। বড় ভাই শুনে বললেন, তাহলে আমিও আজ রাতে বিড়াল মারব। কিন্তু তিনি রাতে সেটা করলে পর বিবি রেগেমেগে বললেন, ‘বুঝেছি, পঞ্চাশ ঘা তোমার জন্য যথেষ্ট হয়নি; আগামীকাল থেকে ওটা দ্বিগুণ হয়ে যাবে।’ হা হা হা!

অতঃপর আমি ওদের মসনভীতে অন্তর্ভুক্ত মাওলানা রুমির আরেকটি মজার গল্প শোনালাম : একদা একটি উট, একটি ষাঁড় ও একটি দুম্বা একসঙ্গে চলাকালে একটি খড়ের আঁটি খুঁজে পেয়েছিল। তখন দুম্বা বলল, এটাকে তিনজনের মধ্যে ভাগ করলে কারোরই ক্ষুণ্নিবৃত্তি হবে না। কাজেই আমাদের মধ্যে যে সবচেয়ে প্রাচীনকালের, সেই এটার হকদার। এসো আমরা স্ব স্ব জম্ম  সাল বলি। অপার দুজন সম্মতিসূচক মাথা নাড়লে পর দুম্বা বলল, ‘পয়গম্বর’ ইব্রাহিম (আ.) তার পুত্রের পরিবর্তে যে দুম্বাটিকে কোরবানি দিয়েছিলেন, আমি ওটার সমসাময়িক। শুনে ষাঁড় বলল, আমি আরও প্রাচীনকালের, কেননা আদিমানব আদম (আ.) যে ষাঁড়ের সাহায্যে কৃষিকাজ করতেন, আমি তার সাথী ছিলাম। দুম্বা ও ষাঁড়ের কথা শুনে উট অযথা বাক্যব্যয় না করে খড়ের আঁটি মুখে নিয়ে আকাশের দিকে তুলে ধরে বলতে লাগল, আমার এত বিরাট বপু ও লম্বা গ্রিবা থাকার কারণে আমার মনে হয় যে আমার জম্ম -সাল উল্লে­খের প্রয়োজন নেই। যে কোনো নিরপেক্ষ ব্যক্তিই বলে দেবে যে আমি তোমাদের চেয়ে বয়সে কনিষ্ঠ হতে পারি না। অতঃপর সে খড়ের আঁটি পুরোটা একাই সাবাড় করে ফেলল। ওরা করতালির মাধ্যমে ওদের প্রশান্তি জানালেন। এমনকি একজন তো বলেই ফেললেন, ‘আরে ইনি যে দেখছি আমাদের মতো। আর যা হোক সম্মেলনের সওয়াল, কে একজন নাকি একবার কমিটি প্রসঙ্গে বলেছিল, ‘কমিটির সন্ধি বিচ্ছেদ হচ্ছে কাম-মিট-অ্যান্ড টি অর্থাৎ এসো মিলিত হও ও চা খেয়ে চলে যাও। অধিক সংখ্যক কমিটির কার্য সম্পাদন করেন একজনই এবং কনফারেন্স (অধিবেশন) হচ্ছে ইনফারেন্সের (অনুমিতির) বড় ভাই। অর্থাৎ অধিবেশন সমাপ্তির আগেই অধিকাংশ ক্ষেত্রে পরিণতি অনুধাবন করা যায়। তাই কনফারেন্সের ক্ষেত্রে বলা হয়ে থাকে একটি কনফারেন্স হচ্ছে কতিপয় নামি-দামি লোক বা প্রতিনিধিবর্গের বৈঠক, যারা এককভাবে কিছুই করতে পারেন না, কিন্তু যৌথভাবে সিদ্ধান্ত নেন যে কিছুই করা যাবে না; এক কথায়, কনফারেন্স কক্ষ হচ্ছে এমন একটি জায়গা, যেখানে সবাই কথা বলেন, কেউ কারও কথা শোনেন না ও পরে সবাই অসম্মতি প্রকাশ করেন। তদুপরি কনফারেন্স শেষে (সম্মিলিত) ডেলিগেটরা নির্বাপিত হয়ে যান। আলোচ্য ক্ষেত্রেও এটার খুব একটা ব্যত্যয় ঘটেনি। তবে বোনাস হিসেবে এক পর্যায়ে ওরা আমাদের অর্থাৎ সব দেশের প্রতিনিধিকে ঐতিহাসিক শহর ইস্পাহানে নিয়ে গিয়েছিলেন। পথে প্রচুর পেস্তা বাদাম ও আখরোট খাওয়ানো হলো। ইস্পাহানকে নাকি এক সময় বলা হতো ‘নিসফেজাহান’, অর্থাৎ পৃথিবীর অর্ধেক। তা সেখানকার ‘চেহেল সেতুন’ তথা চল্লি­শ-স্তম্ভ প্রাসাদ, মোগল সম্রাট হুমায়ুন শের শাহের কাছে পরাজিত হওয়ার পর ইরানে আশ্রয় প্রাপ্তির স্মৃতি সংবলিত তৈলচিত্র, শেখ লুৎফুল্লাহিল মসজিদ, ইমাম মসজিদ ও ইমাম স্কোয়ার পরিদর্শন করে কথাটার সার্থকতা উপলব্ধি করা গেল। আর ইমাম মসজিদের মাঝখানে দাঁড়িয়ে গাইড যখন একটি ইরানি কাগজের মুদ্রা নাড়াচাড়া করলেন তখন উদ্ভূত ফড়্ফড়্ শব্দ অন্তত দেড়শো মিটার উঁচু গম্বুজের অভ্যন্তর ভাগে প্রতিধ্বনিত হয়ে আমাদের কাছে ফিরে আসাতে বিস্ময়াভিভূত না হয়ে পারা গেল না। ইস্পাহানে কিছু কেনাকাটা করে সেখান থেকে ফেরার পথে খোম শহরে অবস্থিত আয়াতুল্ল­াহ খোমিনির জনাকীর্ণ মাজার-কাম-স্মৃতিসৌধ দর্শনের স্মৃতি ও শিয়াদের মসজিদে জুমার নামাজ পড়ার স্মৃতিও সত্যিই অবিস্মরণীয়।

মোটামুটিভাবে ভ্রমণটি ছিল এককথায় চমকপ্রদ। আর আমার অল্পস্বল্প ফার্সি ভাষার জ্ঞানটাও সেখানে খুব কাজে লেগে গিয়েছিল। যে কারণে ইন্ডিয়ান ডাকবিভাগের ডিজি-কাম-সচিব বন্ধুবর এম এন সোমকে বলতে শোনা গেল, আপনি তো বিশেষত এখানকার মেয়ে মহলে বেশ পপুলার হয়ে গেছেন দেখছি। তাকে সহাস্যে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা ছাড়া আর কী-ই বা করার ছিল?

শেষ করছি ১৯২৩ সালে প্রকাশিত ‘উইট, হিউমার অ্যান্ড ফ্যান্সি অব পার্শিয়া’ শীর্ষক গ্রন্থ থেকে আহরিত একটি চটি গল্প দিয়ে : ছেলে ও মেয়েতে বিয়ে সম্পাদিত হয়েছে। বিয়ের পূর্বে পরস্পর দেখা-সাক্ষাৎ হয়নি, গার্জিয়ান লেভেলে কথাবার্তা সম্পন্ন হয়েছে। ছেলে দেখতে কুশ্রী, অথচ মেয়ে ছিল এককথায় পরমা সুন্দরী। তো বিয়ের কিছুদিন পর মেয়ে একদিন স্বামীকে বলল, ‘ইনশা আল্ল­াহ আমরা দুজনেই মৃত্যুর পর বেহেস্তবাসী হবো’।

‘তুমি কী করে বুঝলে?’ স্বামী সবিস্ময়ে প্রশ্ন করল।

প্রত্যুত্তরে স্ত্রী বলে উঠল, ‘তুমি যখনই আমার দিকে তাকাও তখন নিশ্চয়ই মনে মনে আল্ল­াহর শোকরিয়া আদায় কর তোমার ভাগ্যে সুন্দরী স্ত্রী লিখে রাখার জন্য। আর আমি? আমি যে তোমার মতো স্বামী পেয়েও তোমাকে পরিত্যাগ করে যাইনি, ছবর করে পড়ে আছি, তজ্জন্য আমিও বেহেস্তে যাব।’

 

লেখক : রম্য-সাহিত্যিক। বাংলাদেশ ডাকবিভাগের সাবেক মহাপরিচালক। 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর