সোমবার, ৮ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা
ধর্মতত্ত্ব

ইসলাম মানবতার সেবক হওয়ার শিক্ষা দেয়

মুফতি আমজাদ হোসাইন হেলালী

ইসলাম মানবতার সেবক হওয়ার শিক্ষা দেয়

ইসলাম মানবতার সেবায় নিবেদিত হওয়ার শিক্ষা দেয়। সমাজে  শান্তি প্রতিষ্ঠার শিক্ষা দেয় এবং শিক্ষা দেয় পরস্পর ভ্রাতৃত্ববন্ধন  অটুট রাখার। ইসলাম অসহায়, নির্যাতিত, নিষ্পেষিত মানবতার সাহায্যে এগিয়ে যায়। আল কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, ‘সে তো বন্ধুর গিরিপথ অবলম্বন করেনি, তুমি কি জানো, বন্ধুর গিরিপথ কী? তা হচ্ছে দাসমুক্তি অথবা দুর্ভিক্ষের দিনে আহার্য দান, ইয়াতিম আত্মীয়কে অথবা দরিদ্র, নিষ্পেষিত নিঃস্বকে। অতঃপর তাদের অন্তর্ভুক্ত হওয়া, যারা ইমান আনে এবং পরস্পরকে উপদেশ দেয় সবলের ও উপদেশ দেয় দয়ার (করুণার)। তারাই সৌভাগ্যশালী। আর যারা আমার আয়াতগুলো অস্বীকার করে তারাই হতভাগা। তারা অগ্নিপরিবেষ্টিত অবস্থায় বন্দী থাকবে।’ সূরা বালাদ, আয়াত ১১-২০। মৌলিকভাবে আর্তমানবতার সেবায় দৌড়িয়ে যাওয়া, অন্যের দুঃখে ব্যথিত হওয়া, অন্যের কান্নায় কান্না আসা মানবতা-ইনসানিয়াতের কাজ। আর্তমানবতার দোয়া নিয়ে কবরে যাওয়া অনেক বড় সফলতা। সঠিকভাবে মানবতার সেবা দ্বারা আজাবে ইলাহি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। মানবতার সেবার মধ্যে দাসমুক্তি, ক্ষুধার্তকে অন্নদান, আত্মীয়স্বজন ও ইয়াতিমকে অন্নদান এবং আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, পাড়া-প্রতিবেশীসহ সবার যাবতীয় কিছুর খোঁজখবর নেওয়া অন্যতম মানবসেবা। বিশেষ করে আত্মীয়স্বজনদের খোঁজখবর নিয়ে তাদের প্রয়োজন পূরণ দ্বিগুণ সওয়াবের কাজ। এখানে একদিকে ক্ষুধার্ত ব্যক্তির ক্ষুধা দূর করার সওয়াব পাওয়া গেল। অন্যদিকে আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর ও আত্মীয়তা বজায় রাখার সওয়াবও পাওয়া গেল। সমাজে অনেক ক্ষুধার্ত মানুষ আছে তাদের খোঁজখবর নেওয়ার কেউ নেই। কত মানুষ অনাহারে দিন যাপন করছে অথচ কেউ জানে না যে সে কে? ইসলামের শিক্ষা হলো, মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে তাদের ইমান ও আমলের খোঁজখবর নেওয়া। সঙ্গে সঙ্গে তাদের দৈনন্দিন জীবন পরিচালনার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা। অভাবীদের অভাব দূর করার সাধ্যমতো চেষ্টা করা। সাহাবায়ে কিরাম রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শে তাঁদের জীবন গঠন করেছিলেন। তাই তো বহু সাহাবায়ে কিরাম রাতের আঁধারে ঘর থেকে বের হয়ে অন্য ভাইয়ের খোঁজখবর নিতেন। অভাবীদের অভাব সাধ্যমতো দূর করার চেষ্টা করতেন। নিজের প্রয়োজন থেকে অন্যের প্রয়োজনকে বেশি প্রাধান্য দিতেন। যেমন হজরত আবুবকর (রা.), হজরত ওমর (রা.), হজরত ওসমান (রা.), হজরত আলী (রা.) প্রমুখ সাহাবায়ে কিরাম। তাই তো তাঁরা মহান রব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে অনাবিল শান্তির জায়গা জান্নাতের শুভসংবাদও অর্জন করেছিলেন। মানবতার সেবক হওয়ার গুরুত্ব প্রসঙ্গে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘কওমের নেতা সফর অবস্থায় তাদের খাদেম থাকবে। যে ব্যক্তি খিদমতের মাধ্যমে তাদের মধ্যে অগ্রগামী হবে কেউ তাকে আমলের মাধ্যমে পেছনে ফেলতে পারবে না। আবশ্য শহীদ ব্যক্তি পারবে।’ মিশকাত। প্রিয় পাঠক! একটু লক্ষ্য করুন। এমন একটি সমাজে ইসলাম শান্তি স্থাপন করেছে যে সমাজে নৈতিকতার চরম বিপর্যয় ঘটেছিল। এ সমাজে মানুষের কাছে মানুষের কোনোই মূল্য ছিল না। হ্যাঁ যাদের কাছে ক্ষমতা ও অর্থ তাদের কিছুটা মূল্যায়ন ছিল। সেখানে দুর্বলের বেঁচে থাকার কোনো অধিকার ছিল না। কথা বলার সুযোগ ছিল না। সে সমাজে মানুষ পণ্যের মতো বেচাকেনা হতো। সে সময় এমন কিছু সমাজসেবীর আগমন ঘটেছিল, যারা  মানবতার সেবা বলতে কিছুই করত না। তারা শুধু  সাধারণ মানুষকে শোষণ করত, জুলুম করত। ফলে  সীমিতসংখ্যক মানুষের হাতে সম্পদের পাহাড় জমা হতো। ইয়াতিম ও শিশুদের মাল পাহারা দেওয়ার নামে আত্মসাৎ করত। এই ঘুণেধরা সমাজে রহমতে আলম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর নির্দেশে প্রদত্ত বিধানের মাধ্যমে আমূল পরিবর্তন করেন। তিনি কৈশোর থেকে যৌবনের ৪০ বছর আগ পর্যন্ত মানবসেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখার দরুন মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস পুরোপুরি অর্জন করেছিলেন। তাই তো জনসাধারণ সবাই একসঙ্গে তাকে উপাধি দিয়েছিল আল-আমিন। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনসাধারণের কল্যাণে নিজের পূর্ণ শক্তি নিয়োগ করেছিলেন। তিনি ‘হিলফুল ফুজুল’ বা সেবা সংঘের মাধ্যমে আর্তমানবতার সেবা, নির্যাতিতদের পাশে দাঁড়ানো, অসহায়দের সাহায্য-সহযোগিতা প্রদানের দ্বারা সব মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছিলেন। এমনকি তিনি  দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষণা করলেন, ‘উন্নত চরিত্র মাধুরীর পূর্ণতা বিধানকল্পে আমি এ পৃথিবীতে প্রেরিত হয়েছি।’ নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও ইরশাদ করেছেন, ‘তোমাদের তথা প্রতিটি মুসলমানের জান-মাল-সম্পত্তি,  ইজ্জত, শরীরের চামড়া পর্যন্ত যেরূপভাবে আজকার এই মহান ইয়ামুন্নাহারের দিনে, এই পবিত্র জিলহজ মাসে পবিত্র হারাম শরিফে হারাম ও সুরক্ষিত, ঠিক তেমনিভাবে সব দিনে, সব মাসে ও সব স্থানে হারাম ও সুরক্ষিত বলে গণ্য হবে। (আমি তোমাদের অন্ধকার যুগের মারামারি-কাটাকাটি হতে মুক্ত ও ইসলামী ভ্রাতৃত্বে আবদ্ধ রেখে যাচ্ছি) খবরদার! তোমরা আমার অবর্তমানে পুনরায় কাফিরদের মতো পরস্পর মারামারি-কাটাকাটিতে লিপ্ত হবে না।’ বুখারি। প্রিয় পাঠক! চলুন আজ থেকে নিজেকে ভালোবাসতে শিখি এবং অন্যের ব্যাপারে ফিকিরমান্দ হই। অন্যের সেবায় নিয়োজিত হই। রব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে সত্যিকারার্থে মানবতার সেবক হওয়ার তাওফিক দান করুন।

লেখক : মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও খতিব, বারিধারা, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর