বুধবার, ১০ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

দাওয়াত ও তাবলিগের বর্তমান পরিস্থিতিতে জনসাধারণের করণীয়

মুফতি মনসুরুল হক

আল কোরআনে আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘হে ইমানদারগণ! তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, তাঁর রসুলের, এবং তোমাদের মধ্যে যারা ইখতিয়ারিধারী, তাদেরও।’ সূরা নিসা, আয়াত ৫৯। এ আয়াতে আল্লাহতায়ালা তিন সত্তার ‘ইতায়াত’ বা অনুসরণ করতে বলেছেন

১. আল্লাহর অর্থাৎ কোরআনুল কারিমের। ২. রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অর্থাৎ তাঁর সুন্নাতের [এবং সুন্নাতের ধারক-বাহক সাহাবায়ে কিরামের]। ৩. উলামায়ে কিরাম ও মুসলমানদের রাষ্ট্রীয় নেতার। আয়াতের মধ্যে ‘ইখতিয়ারিধারী’ দ্বারা এ দুই শ্রেণিই উদ্দেশ্য।

দ্রষ্টব্য : তাফসিরে ইবনে কাসির; সূরা নিসা, আয়াত ৫৯।

তবে তৃতীয় শ্রেণির ব্যক্তিদের অনুসরণের জন্য শর্ত হলো যে, তাদের ‘হক’ [সত্য ও সঠিক পথ ও মত]-এর ওপর থাকতে হবে। যদি তারা হকের ওপর না থাকে, কোনো ভ্রান্তির শিকার হয়ে যায়, কোরআন-সুন্নাহবিরোধী কোনো নাজায়িজ কাজের হুকুম দেয়, তবে সে উলামায়ে কিরাম এবং রাষ্ট্রীয় নেতার ‘ইতায়াত’ও বৈধ নয়। সহি বুখারির এক বর্ণনায় [হাদিস নম্বর ৪৩৪০] এসেছে, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক আনসার ব্যক্তিকে একটি ছোট দলের আমির বানিয়ে পাঠালেন এবং লোকদের তাঁর অনুসরণ করতে বললেন। ওই ব্যক্তি অধীনস্থ সাহাবায়ে কিরাম থেকে তার ‘ইতায়াত’-এর স্বীকৃতি নিয়ে লাকড়ি জমা করতে এবং আগুন জ্বালাতে নির্দেশ দিলেন। অতঃপর যখন আগুন জ্বালানো হলো, তখন ওই ব্যক্তি অধীনস্থ সাহাবায়ে কিরামকে আগুনে প্রবেশ করার আদেশ প্রদান করলেন! কিন্তু সাহাবায়ে কিরাম এ ‘ইতায়াত’ থেকে বিরত থাকলেন এবং বিষয়টি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে গিয়ে উত্থাপন করলেন।

তখন রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘যদি তোমরা আগুনে প্রবেশ করতে, তবে কিয়ামত পর্যন্ত আর তা থেকে বের হতে পারতে না। ‘ইতায়াত’ কেবল পুণ্যের মধ্যে [বৈধ আছে]।’

সার কথা, উল্লিখিত আয়াত ও হাদিস দ্বারা কয়েকটি বিষয় বুঝে আসে : ১. কোনো স্থানের ‘ইতায়াত’ বৈধ নয়। যদিও তা অনেক বরকতময় হোক না কেন। কেননা, তা উল্লিখিত তিন শ্রেণিসত্তার অন্ত-র্ভুক্ত নয়। ২. কোনো জাহেল বা অজ্ঞ ব্যক্তির অনুসরণ বৈধ নয়। ৩. কোনো আলেমের ‘ইতায়াত’ ততক্ষণ বৈধ হবে, যতক্ষণ সে হকের ওপর থাকবে।

বর্তমানে দাওয়াত ও তাবলিগে যে ফিতনা হচ্ছে, আমাদের একশ্রেণির ভাই তিনটি ভ্রান্তির শিকার হয়েছেন

ক. তাঁরা বলছেন, ‘আমরা নিজামুদ্দিনের ইতায়াতে আছি এবং থাকব।’ এ কথাটি সম্পূর্ণরূপে ওই আয়াতের বিরোধী এবং গোমরাহির রাস্তা। কেননা, কোনো স্থান কখনো কাউকে হিদায়াত দিতে পারে না; হ্যাঁ, ব্যক্তি হিদায়াতের মাধ্যম হতে পারে, যতক্ষণ সে হকের ওপর থাকবে। আর এ কথাটির অর্থ যদি এটা হয় যে, ‘মাওলানা ইলিয়াস (রহ.) যেহেতু নিজামুদ্দিন থেকে এই মোবারক মেহনত শুরু করেছেন, কাজেই নিজামুদ্দিনের নেতৃত্বে যে-ই আসবে, আমরা তাঁর অনুসরণ করব’ তবে এ অর্থও নিঃসন্দেহে ভ্রষ্টতা। কেননা, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো দীনের দাওয়াত শুরু করেছিলেন মক্কা-মদিনায়, কিন্তু তাই বলে কি কোরআনে কিংবা হাদিসে মক্কা-মদিনাকে স্থান হিসেবে এ মর্মে অনুসরণের বৈধতা দেওয়া হয়েছে যে, মক্কা-মদিনা থেকে যে যাই বলুক, যদিও তা কোরআন-সুন্নাহবিরোধী হয়, তবু তার অনুসরণ করতে হবে...! কখনই নয়। কাজেই ‘নিজামুদ্দিনের ইতায়াতে আছি’ এটি সম্পূর্ণরূপে গোমরাহির কথা এবং ওই আয়াতের বিরোধী।

খ. দাওয়াত ও তাবলিগ একটি দীনি কাজ হওয়া সত্ত্বেও তারা এ ক্ষেত্রে উলামায়ে কিরামের নেতৃত্ব মানছেন না। তাদের ধারণা হলো, দাওয়াত ও তাবলিগের এ কাজ প্রচার-প্রসার লাভ করার পেছনে উলামায়ে কিরামের কোনো পৃষ্ঠপোষকতা নেই; বরং পৃষ্ঠপোষকতা রয়েছে, ‘আওয়ামের বা সাধারণ মানুষের। এ ধারণার কারণে তারা দীনি বিষয়ে জাহেল বা অজ্ঞলোকদের অনুসরণ করাকে ‘নিজামুদ্দিনের ইতায়াত’ নাম দিয়ে এটাকে শরিয়াতের অনুসরণ মনে করছে এবং উলামায়ে কিরামের ওপর ‘বদগুমানি’ বা খারাপ ধারণা করছে। তাদের এ কর্মপন্থা নিঃসন্দেহে গোমরাহি! কেননা, এ কাজ উলামায়ে কিরামের তত্ত্বাবধানে শুরু হয়েছে এবং তাদেরই পৃষ্ঠপোষকতায় উৎকর্ষতা অর্জন করেছে এবং এখনো তাদের সমর্থন ও সহযোগিতার কারণেই তা টিকে আছে। কোনো দীনি কাজ উলামায়ে কিরামের সমর্থন ছাড়া কখনই টিকে থাকতে বা প্রসার লাভ করতে সক্ষম হয় না। মাওলানা ইলিয়াস (রহ.) নিজে আলেম ছিলেন, তিনি মাওলানা রশীদ আহমাদ গাঙ্গুহি (রহ.), মাওলানা খলিল আহমাদ সাহারানপুরী (রহ.)-এর সোহবাতে ও থানভি (রহ.)-এর প্রত্যক্ষ পরামর্শে এবং মাওলানা হুসাইন আহমাদ মাদানি (রহ.), মুফতি কেফায়াতুল্লাহ (রহ.), মুফতিয়ে আজম শফি উসমানী (রহ.), দারুল উলুম দেওবন্দের মুহতামিম মাওলানা কারি তাইয়েব , দিল্লির আবদুর রব মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা মুহাম্মাদ শফি, সাহারানপুর মাজাহিরুল উলুম মাদ্রাসার নাজিম মাওলানা আবদুল লতিফ, দারুল উলুম দেওবন্দের উস্তাদ মাওলানা ইজাজ আলী ও শায়খুল হাদিস মাওলানা জাকারিয়া (রহ.)সহ সমকালীন সব বুজুর্গানে দীনের সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতায় এ কাজ শুরু করেছিলেন এবং তাদেরই পরামর্শমত এ কাজের নকশা নির্ধারণ করেছেন। মাওলানা ইলিয়াস (রহ.) নিজেই বলেছেন, ‘এ কাজের বরকত মূলত হজরত [থানভি রহ.]-এর দোয়ারই ফসল!’ বিস্তারিত দেখুনÑ ‘দীনি দাওয়াত’ পৃষ্ঠা ৫৭, ৮০, ১১৪, ১১৫, ১২৬-১২৭; ‘তাজদিদে তালিম ও তাবলিগ’ পৃ. ১৭৩।

বাংলাদেশেও এ কাজ শুরু করেছিলেন হজরত শামসুল হক ফরিদপুরী [রহ. (সদর সাহেব হুজুর)] বড় হুজুর মাওলানা আবদুল আজিজ (রহ.)-এর মাধ্যমে। যদ্দরুন বাংলাদেশে তাবলিগের প্রথম মারকাজ ছিল বড় হুজুরের গ্রাম বর্তমান বাগেরহাটের উদয়পুরে। কাজেই তাবলিগের এ কাজ প্রচার-প্রসার লাভ করার পেছনে উলামায়ে কিরামের পৃষ্ঠপোষকতা নেই এ কথা নিঃসন্দেহে গোমরাহি!

দ্বিতীয়ত, অন্ধ ব্যক্তি কখনো কাউকে রাস্তা দেখাতে পারে না। অন্ধকার কখনো অন্ধকার দূর করতে সক্ষম হয় না। মাওলানা ইলিয়াস (রহ.) বলে গেছেন, ‘এ সিলসিলায় একটি উসুল হলো, স্বাধীনভাবে ও নিজের মনমতো না চলা। বরং নিজেকে ওইসব বুজুর্গের পরামর্শ অনুযায়ী পরিচালনা করা, যাদের ওপর দীনি বিষয়ে আমাদের পূর্ববতী আকাবির হজরতগণ আস্থা রেখে গেছেন।’ এরপর হজরত বলেছেন, ‘দীনের কাজে আস্থা রাখার জন্য বহু সতর্কতা ও হুঁশিয়ারির সঙ্গে [অনুসৃত ব্যক্তি] নির্বাচন করা জরুরি। অন্যথায় অনেক বড় ধরনের গোমরাহির আশঙ্কা রয়েছে।’ [মনজুর নোমানি (রহ.) কৃত ‘মালফুজাতে হজরত মাওলানা ইলিয়াস’ : ১৪৩ নম্বর মালফুজ]। কাজেই দাওয়াত ও তাবলিগের এ দীনি কাজে সাধারণ মানুষের নেতৃত্ব মেনে নেওয়ার অর্থ হলো, অন্ধের অনুসরণ করা, যা নিঃসন্দেহে গোমরাহি।

গ. আরেকটি ভ্রান্তি হলো, আমাদের একশ্রেণির ভাই এখনো মাওলানা সাাদকে অনুসরণীয় জ্ঞান করছেন! অথচ সাদ সাহেব থেকে এমন অনেক বক্তব্য ও কর্মপদ্ধতি পাওয়া গেছে, যা নিঃসন্দেহে কোরআন-সুন্নাহবিরোধী এবং সেই বিতর্কিত বিষয়গুলো থেকে তিনি এখনো যথাযথভাবে ফিরে আসেননি। যদ্দরুন তাকে এ মুহূর্তে অনুসরণ করা শরিয়তের দৃষ্টিতে নিষেধ! মাওলানা ইলিয়াস (রহ.) যে মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেছেন, সেই দারুল উলুম দেওবন্দসহ বিশ্বের উলামায়ে কিরাম সাদ সাহেবের ভুল ধরিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু সাদ সাহেব যথাযথভাবে সে ভুল থেকে ফিরে আসেননি।

এ কথা মনে রাখতে হবে, মানুষমাত্রই ভুল হতে পারে, কাজেই জীবিত কোনো মানুষের ব্যাপারে এমন ধারণা না করা যে, তার থেকে কোনো ভুল প্রকাশ পাওয়া অসম্ভব। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যেন কারও এমনভাবে অনুসরণ না করে, সে [অনুসৃত ব্যক্তি] ইমান আনলে, সেও [অনুসরণকারী ব্যক্তিও] ইমান আনে। সে কুফরি করলে সেও কুফরি করে। যদি কারও অনুসরণ করতেই হয়, তবে মৃত ব্যক্তিদের অনুসরণ কর, কেননা জীবিতরা ফেতনার আশঙ্কামুক্ত নন।’ [তবরানি কাবির; হাদিস নম্বর ৮৭৬৪; মাজমাউজ জাওয়ায়েদ; হাদিস নম্বর ৮৫০। এ হাদিসটির সনদ হাসান]

মাওলানা সাদের প্রতি উলামায়ে কিরামের আস্থা না থাকার মৌলিক কারণগুলো হলো ১. দীনের বিভিন্ন বিষয়ের মনগড়া ব্যাখ্যা বিশ্লে­ষণ। ২. তাবলিগের গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে তাবলিগ ছাড়া দীনের অন্য মেহনতকে (যেমন, মাদ্রাসা শিক্ষা, তাসাউফ ইত্যাদি) হেয় ও গুরুত্বহীন সাব্যস্ত করা। ৩. পূর্ববর্তী মুরব্বিদের কাজের উসুল থেকে সরে যাওয়া। এ তিনটি বিষয়ে উলামায়ে কিরাম তাদের অভিযোগ ও আপত্তি বিস্তারিতভাবে পেশ করেছেন।

সর্বশেষ উপমহাদেশের উলামায়ে কিরামের মাথার তাজ, দারুল উলুম দেওবন্দ সাদ সাহেবের ব্যাপারে তাদের সর্বশেষ যে অবস্থান তুলে ধরেছে, তা সবিশেষ লক্ষণীয় : ‘এখানে একটা বিষয় স্পষ্ট করা জরুরি। তা হলো, এই (মূসা আ. এর) ঘটনার বিষয়ে তো মাওলানা (সাদ)-এর রুজুকে সন্তোষ-জনক বলা যায়, কিন্তু তার চিন্তাগত বিচ্যুতির ব্যাপারে দারুল উলুমের পক্ষ থেকে যে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছিল, সে আশঙ্কা এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। কারণ, কয়েকবার রুজুর পরও কিছুদিন পরপর তার এমন কিছু নতুন বয়ান আমাদের কাছে পৌঁছাচ্ছে, যার মধ্যে আগের সেই মুজতাহিদসুলভ আন্দাজ, ভুল প্রমাণ পদ্ধতি এবং দাওয়াতের ব্যাপারে নিজের বিশেষ চিন্তার সঙ্গে শরিয়তের বক্তব্যকে অন্যায়ভাবে খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা বিদ্যমান। এ কারণে শুধু দারুল উলুমের দায়িত্বশীলরাই নন, বরং অন্যান্য হক্কানি উলামায়ে কিরামের মাঝেও মাওলানা (সাদ) সাহেবের ‘সামগ্রিক চিন্তার’ ব্যাপারে প্রচ- রকমের অনাস্থা রয়েছে। মাওলানা (সাদ) সাহেবের এ অনর্থক ইজতিহাদ দেখে মনে হয়, আল্লাহ না করুন, তিনি এমন এক নতুন দল তৈরির দিকে চলেছেন, যারা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত, বিশেষ করে নিজেদের আকাবিরদের থেকে ভিন্ন রকমের হবে। আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে আকাবির ও পূর্বসুরিদের পথ ও পদ্ধতির ওপর অটল রাখুন।’ [দ্রষ্টব্য : দারুল উলুমের ওয়েবসাইট www.darululoom-deoband.com]

কাজেই মাওলানা সাদের প্রসঙ্গে বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমাদের করণীয় হলো :

১. এ মূলনীতি মনে রাখতে হবে, ইসলামে স্থানপূজা নিষেধ। কোনো স্থান কখনই অনুসরণীয় হতে পারে না। আর কোনো ব্যক্তি যখন হক পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে যাবে, তখন তার ইতায়াত কিছুতেই বৈধ নয়। ২. যেহেতু বিষয়টি দীনি এবং এমন একটি বিষয়, যুগ যুগ ধরে যার পৃষ্ঠপোষকতা করে আসছেন উলামায়ে কিরাম, কাজেই আমাদের উচিত হবে, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে উলামায়ে কিরামের পরামর্শ অনুযায়ী নিজেদের পরিচালিত করা। ৩. তৃতীয়ত, মানুষমাত্রই ভুল হতে পারে। কাজেই মাওলানা সাদ ভুলের ঊর্ধ্বে নন এবং বর্তমানে যেহেতু সব উলামায়ে কিরাম তার ভুল ধরেছেন, কাজেই নিজামুদ্দিনের নামে তার অনুসরণ করা নিষেধ। তার অনুসরণ বৈধ হওয়ার জন্য তিনটি বিষয় আবশ্যক : ক. মাওলানা সাদ সব ধরনের বিতর্কিত বক্তব্যের ব্যাপারে প্রকাশ্যে, স্পষ্ট শব্দে ভুল স্বীকার করে বড় বড় মজমার মধ্যে সঠিক ব্যাখ্যা দেবেন এবং এ রুজুর ওপর তিনি অটল-অবিচল থাকবেন। খ. তাবলিগের পূর্ববর্তী তিন হজরতজির ‘নির্দেশিত পন্থায়’ তাবলিগের কাজ করবেন এবং এজন্য নিজামুদ্দিনের প্রবীণ মুরব্বিদের নিজামুদ্দিনে ফিরিয়ে এনে তাদের চোখের সামনে রেখে দেখে, তাদের পরামর্শমতো চলবেন। গ. দারুল উলুম দেওবন্দসহ বিশ্বের হক্কানি উলামায়ে কিরামের জামায়াত তাকে ‘আস্থাশীল’ হিসেবে ঘোষণা দেবেন। যত দিন পর্যন্ত তিনটি বিষয় না পাওয়া যাবে, তত দিন তাকে অনুসরণ করার অর্থ হবে একটি ‘গোমরাহ দল’ সৃষ্টিতে সহায়তা করা। ৪. মাওলানা সাদের ব্যাপারে উলামায়ে কিরামের এই সুস্পষ্ট অবস্থানের পরও দাওয়াত ও তাবলিগের যেসব সাথী নিজামুদ্দিনের ইতায়াতের নামে মাওলানা সাদের ইতায়াতের ওপর থাকবে, তাদের ব্যাপারে হক্কানি উলামায়ে কিরাম ও তাদের মতাদর্শী সাথীদের [চরম পন্থায় না গিয়ে হিকমাতের সঙ্গে কঠোর অবস্থানে যেতে হবে, যাতে তারা [নিজামুদ্দিনের অনুসারীরা] কোনো ধরনের ফেতনা সৃষ্টি করা কিংবা উলামাদের প্রতি বিদ্বেষ তৈরির অবকাশ না পায়। কাজেই তাদের দাওয়াত ও তাবলিগের শিরোনামে কোনো ধরনের মাশওরা, গোশত, জোড় ইত্যাদির সুযোগ দেওয়া উচিত হবে না। বরং তাবলিগের এ কাজগুলো হক্কানি উলামায়ে কিরাম এবং তাদের মতাদর্শী সাথীরা সাদ সাহেবের পূর্ববর্তী তিন হজরতজির ‘নকশা’ অনুযায়ী পরিপূর্ণরূপে আনজাম দেবেন। ৫. দাওয়াত ও তাবলিগের এ কাজ উলামায়ে কিরামের, তারাই এ কাজের পৃষ্ঠপোষক ও মূল দায়িত্বশীল। সুতরাং বর্তমান পরিস্থিতিতেও তাদেরই এ কাজের ‘রাহবারের’ ভূমিকা পালন করতে হবে। এ কারণে সব মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের কাছে আমার বিনীত নিবেদন হলো, জামিয়ার এক/একাধিক উস্তাদকে দরস্-তাদরিসের ব্যস্ততা কম দিয়ে দাওয়াত ও তাবলিগের কাজের জন্য ফারেগ করে দেবেন। যেন তিনি জামিয়ার পক্ষ থেকে দাওয়াত ও তাবলিগের কাজে যথাযথভাবে প্রতিনিধিত্ব করতে পারেন।

সর্বোপরি, সবসময়ের জন্য লক্ষ্য রাখতে হবে, বর্তমান পরিস্থিতিতে মাওলানা সাদের ইতায়াত নিষেধ হলেও দাওয়াত ও তাবলিগের কাজ বন্ধ করা যাবে না। বরং হক্কানি উলামায়ে কিরামের তত্ত্বাবধানে তা সর্বাবস্থাতেই চালিয়ে যেতে হবে। এ ব্যাপারে কোনো অলসতা করা যাবে না। আল্লাহ তায়ালা আমাদের তাওফিক দান করুন।

 

লৈখক : শায়খুল হাদিস ও প্রধান মুফতি

জামি‘আ রাহমানিয়া আরাবিয়া মোহাম্মদপুর, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর