শনিবার, ১৩ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা
ধর্মতত্ত্ব

সালাম : ভ্রাতৃত্ববন্ধনের অন্য নাম

মুফতি আমজাদ হোসাইন হেলালী

সালাম : ভ্রাতৃত্ববন্ধনের অন্য নাম

‘আসসালামু আলাইকুম ওয়ারহমাতুল্ল­াহি ওয়াবারাকাতুহ’ এর অর্থ হচ্ছে, ‘তোমার ওপর আল্ল­াহর শান্তি, রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক।’ এই সালামকে আমরা সংক্ষেপে আসসালামু আলাইকুম হিসেবে জানি। সালামের উত্তর হলো ওয়ালাইকুম সালাম ওয়ারহমাতুল্ল­া -হি ওয়াবারাকাতুহ। অর্থাৎ তোমার ওপরও আল্ল­াহর শান্তি, রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক। যার সংক্ষেপ ওয়ালাইকুম সালাম। সালাম দেওয়া-নেওয়া কোনো ব্যক্তি বিশেষের সঙ্গে সীমাবদ্ধ নয়। পরস্পর দেখা হলে আমরা একে অপরকে সালাম বিনিময় করে থাকি। সালাম একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একজন মুসলমানের সঙ্গে যখন অন্য মুসলমানের দেখা হয় তখন প্রথমে সালাম করা উচিত। যেমনটি হাদিসে এসেছে, রসুল সাল্ল­াল্ল­াহু আলাইহি ওয়াসাল্ল­াম বলেছেন, আসসালামু কাবলাল কালাম অর্থাৎ প্রথমে সালাম পরে কালাম বা কথা হবে। (তিরমিজি)।

সালাম অর্থ শান্তি। এই শান্তি সবাই সবার জন্য কামনা করবে এমনটিই স্বাভাবিক।

ছোট বড়কে, বড় ছোটকে, সন্তান পিতা-মাতাকে, পিতা-মাতা সন্তানকে, স্বামী স্ত্রীকে, স্ত্রী স্বামীকে সালাম করবে। সালামের ক্ষেত্রে সবাই সমান। আমাদের অনেক ছেলে-মেয়েরা নিজের পিতা-মাতাকে এবং স্বামী-স্ত্রীকে, স্ত্রী-স্বামীকে কিংবা ভাই-ভাইকে সালাম দিতে চায় না, যা একেবারেই অনুচিত। সালাম বিনিময় দ্বারা পরস্পর মায়া-মহব্বত তৈরি হয়। বিশেষ করে অনেক পরিবারে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে কারণে-অকারণে ঝগড়া-বিবাদ লেগেই থাকে। তারা যদি খাঁটি মনে নিজেদের মধ্যে সালাম বিনিময় করে। তখন দেখা যাবে ঝগড়া ভালোবাসাতে রূপান্তরিত হয়ে যাবে। আল্ল­াহ চাহেতো ঘরের মধ্যে ভালোবাসার পরিবেশ তৈরি হবে। মনে রাখতে হবে, আমাদের ছেলেমেয়েরা যা দেখবে তাই কিন্তু শিখবে। তাই হিসাব করে চলতে হবে। সালামের অনেক গুরুত্ব রয়েছে। হাদিসে এসেছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা মুমিন না হও, অর্থাৎ মুমিন হতে হবে। আর পরিপূর্ণ ইমানদার হতে পারবে না পরিপূর্ণ মহব্বত ব্যতিরেকে। আমি কি তোমাদের এমন বিষয় বলে দেব যার দ্বারা তোমাদের মাঝে মহব্বত সৃষ্টি হবে? তাহলো, নিজেদের মাঝে সালামের প্রচলন (বেশি) কর। (মুসলিম)। আলোচ্য হাদিস থেকে আমরা বুঝতে পারলাম, সালাম দ্বারা হিংসা-বিদ্বেষ দূর হয়। সালাম শত্র“কে বন্ধুতে পরিণত করে। হিংসার মূলোৎপাটন করে, বপন করে ভালোবাসার বীজ। দৃঢ় হয় ভ্রাতৃত্বের বন্ধন। আমাদের প্রিয় নবী সাল্ল­াল্ল­াহু আলাইহি ওয়াসাল্ল­াম ছোট-বড় সবাইকে সালাম করতেন। সঙ্গে সঙ্গে তিনি ব্যাপক হারে সালামের প্রচলন করার নির্দেশ করেছেন। হজরাতে সাহাবায়ে কেরামগণও (রা.) ছোট-বড় সবাইকে সালাম করতেন। তারা নিজেদের মধ্যে খুব বেশি সালামের প্রচলন করেছেন। এমনকি একবার সালাম করার পর গাছের আড়াল হয়ে গেলে, যখন গাছ পার হয়ে আসতেন তখন আবার সালাম করতেন। সালামের গুরুত্ব এত বেশি রয়েছে যে, যিনি আগে সালাম দেবেন তিনি অহংকার থেকে মুক্ত থাকবেন। এ সম্পর্কে বাইহাকি শরিফে একটি রেওয়ায়েত আছে, রসুল সাল্ল­াল্ল­াহু আলাইহি ওয়াসাল্ল­াম ইরশাদ করেন, আগে সালাম প্রদানকারী অহংকার থেকে মুক্ত থাকবে। মুসলমানদের মধ্যে অহংকার থাকা বড়ই খারাপ। অহংকার পতনের মূল। এই অহংকারের কারণেই পদে পদে অপমানিত হতে হয়। তাই অহংকার মুক্ত জীবন গঠন করাই প্রকৃত ইমানদারের কাজ। বিশিষ্ট সাহাবি হজরত আবদুল্ল­াহ বিন উমর (রা.) সালামের খুব বেশি গুরুত্ব দিতেন। তিনি চিঠিতে ছোট-ছেলেমেয়েদের প্রতিও সালাম জানাতেন। সালামের ব্যাপারে তিনি নবী করীম সাল্ল­াল্ল­াহু আলাইহি ওয়াসাল্ল­ামের পর, সবার আগে ছিলেন। প্রিয়নবী সাল্ল­াল্ল­াহু আলাইহি ওয়াসাল্ল­ামের আগে যেমন কেউ সালাম করতে পারত না, তেমনি হজরত আবদুল্ল­াহ বিন উমর (রা.) ও কাউকে আগে সালাম দেওয়ার অবকাশ দিতেন না। শেষ জামানায় তার অবস্থা এমন হয়েছিল যে, শুধু সালাম করার জন্য তিনি বাজারে যেতেন। বাজারে যার সঙ্গে দেখা হতো তাকে সালাম করতেন। এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করল, আপনি বাজারে কিছু না কিনে আবার চলে আসেন তার কারণ কী? তিনি জবাব দিলেন, আমি শুধু সালাম করার জন্য বাজারে আসি।

প্রিয় পাঠক! উপরোক্ত লেখা থেকে আমরা বুঝতে পেরেছি যে, ইসলামে সালামের অনেক গুরুত্ব রয়েছে। সালাম দেওয়া-নেওয়ার সময় আমাদের অবশ্যই সালামের শব্দগুলো মুখে উচ্চারণ করতে হবে। সমাজে কেউ কেউ হাত নেড়ে কিংবা মাথা নেড়ে সালামের আদান-প্রদান করে থাকেন তা কোনোভাবেই ঠিক না। সম্পূর্ণরূপে বর্জনীয়। তবে যদি অবস্থা এমন হয় যে, যাকে সালাম করা হচ্ছে তিনি অনেক দূরে, তার কাছে সালামের আওয়াজ পৌঁছানো যাচ্ছে না, তখন সালামের শব্দগুলো মুখে উচ্চারণ করে তাকে হাত ইশারা করে বুঝিয়ে দেওয়া যে, ভাই আমি আপনাকে সালাম করেছি। আবার সালাম নেওয়ার সময়ও সালামের শব্দগুলো মুখে উচ্চারণ করতে হবে।

শুধু লোক দেখানো সালাম অর্থাৎ মুখে কিছু উচ্চারণ না করে শুধু মুখের ইশারা দ্বারা সালামের হক আদায় হবে না।

লেখক : মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও খতিব বারিধারা ঢাকা।

সর্বশেষ খবর