শনিবার, ১৩ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

ইসলামের দৃষ্টিতে শান্তি ও নিরাপত্তা

মুফতি মুহাম্মদ মুহিব্বুল্লাহিল বাকী
পেশ ইমাম ও ভারপ্রাপ্ত খতিব, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ, ঢাকা।

শান্তি ও নিরাপত্তার বিষয়ে ইসলামের ধারণা দুনিয়ার অন্যসব ধর্ম, মতবাদ ও দার্শনিক নীতি থেকে ভিন্ন। কারণ ইসলাম ছাড়া অন্য বিরাজমান ধর্মগুলো শুধু উপাসনানির্ভর। আর মতবাদগুলো ব্যক্তি, দল, গোষ্ঠীকেন্দ্রিক। এগুলো শুধু জাগতিকতানির্ভর। আর ইসলাম হলো ইহকাল ও পরকালকেন্দ্রিক একে অন্যের সঙ্গে জড়িত, একে অন্যের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। সেজন্য মুসলমান দোয়া করার সময় বলে, ‘হে প্রতিপালক! দুনিয়ার কল্যাণ দান করুন এবং দান করুন আখেরাতের কল্যাণ এবং মুক্তিদান করুন জাহান্নামের আজাব  ও শাস্তি থেকে।’ সূরা আল বাকারা, আয়াত ২০১।

কারণ ইসলাম এমন কতগুলো বিধানের সমষ্টি যা পালনে মানুষ শান্তি ও নিরাপদে বসবাস করতে পারে ইহকাল ও পরকালে। ব্যক্তি ও সমাজ, ব্যষ্টি ও সমষ্টি পৃথিবীতে বাস করতে যে বিবেচনা, অন্যের হিতে আত্মত্যাগে উদ্বুদ্ধ হওয়ার যে প্রেরণা, এ জগতে ও আখেরাতে কল্যাণময় অনুশীলন ও পরিণতির সম্ভাবনাময় উৎসাহ ও উজ্জীবনে যে একনিষ্ঠতা মনুষ্যজীবনে সাফল্য এনে দেওয়ার বিধিবদ্ধ নিয়ম-শৃঙ্খলা উপস্থাপন করে তাই-ই হলো ইসলাম। সেজন্যই আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘হে মানুষ! আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি এক নর ও এক নারী থেকে। আর তোমাদের বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে; যাতে তোমরা একে অন্যের সঙ্গে পরিচিত হতে পারো।’ সূরা আল হুজুরাত, আয়াত ১৩।

রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘সমগ্র সৃষ্টি আল্লাহর পরিবার। আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয় সেই ব্যক্তি যে তার পরিবারের (সৃষ্টির) প্রতি দয়ালু।’ তিনি আরও বলেন, ‘মানুষের মধ্যে সে-ই শ্রেষ্ঠ যে মানুষের উপকার করে।’ উপকার একটি ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ, শান্তি প্রতিষ্ঠা ও নিরাপত্তাবিধান থেকেই যার গন্তব্য শুরু। আল্লাহতায়ালা ধর্মবর্ণনির্বিশেষে সবার প্রতিপালক ও রিজিকদাতা। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানবতার কল্যাণ করাকে মানুষের জন্য শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি নির্ধারণ করেছেন। আগে থেকেই জিলকদ, জিলহজ, মহররম, রজব এ চার মাস সম্মানিত মাস হিসেবে পরিগণিত হতো। এ মাসগুলোয় যুদ্ধবিগ্রহ নিষিদ্ধ ছিল। সে সময় ‘উকাজ’ মেলায় বেচাকেনা, ঘোড়দৌড়, জুয়া খেলা, কাব্যপাঠের প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হতো। একবার এ মেলায় প্রতিযোগিতাকে কেন্দ্র করে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এ যুদ্ধ হারবুল ফিজার নামে খ্যাত। ফিজার যুদ্ধের বীভৎস দৃশ্য কিশোর মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হৃদয়ে দাগ কাটে। তিনি তাঁর প্রতিকারের উদ্দেশ্যে সে বয়সেই একটি শান্তিসংঘ গঠন করেন। এ সংঘের অন্যতম সদস্য ছিলেন তার কনিষ্ঠ চাচা জুবাইর। ৫৯৫ খ্রিস্টাব্দে এ সংগঠন গঠিত হয়। সংগঠনের সদস্যরা এই বলে শপথ নিলেন যে, ১. আমরা দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করব। ২. অত্যাচারীর হাত থেকে নিরীহ মজলুমদের রক্ষা করব এবং জুলুম ও জালিমকে দমন করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করব। ৩. দরিদ্র ও অসহায় মানুষদের সহায়তায় সর্বদা সচেষ্ট থাকব। ৪. বিদেশি লোকদের জানমাল ও মানসম্ভ্রম রক্ষা করতে চেষ্টা করব। শান্তি ও নিরাপত্তাবিধানের জন্য কোরআনুল কারিমে আল্লাহতায়ালা স্রষ্টার সঙ্গে সৃষ্টির সম্পর্ক ও ব্যবহারের নির্দেশনা তথা সৃষ্টির ওপর স্রষ্টার হকের বর্ণনার পর দুনিয়ায় আগমনের যার বাহ্যিক মুখ্য অবদান রয়েছে তথা পিতা-মাতাসহ দুনিয়ায় যত ধরনের মানুষের সঙ্গে সংশ্রব হবে সবার সঙ্গে সৎ ও সদয় ব্যবহারের জন্য নির্দেশ দিয়ে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর ও কোনো কিছুকে তাঁর শরিক করো না এবং পিতা-মাতা, আত্মীয়স্বজন, এতিম, অভাবগ্রস্ত, নিকট প্রতিবেশী দূর প্রতিবেশী, সঙ্গী-সাথী ও তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসীদের প্রতি সৎ ও সদয় ব্যবহার কর।’ সূরা আন-নিসা, আয়াত ৩৬। আল্লাহ আমাদের সবাইকে ইসলামের নির্দেশনা মেনে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও নিরাপত্তাবিধানের তাওফিক দান করুন।

সর্বশেষ খবর