সোমবার, ১৫ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

বিলাসিতা ও কৃচ্ছ্রতা দুটিই এড়িয়ে চলতে হবে

মাওলানা মুহাম্মদ সাহেব আলী

ব্যয়ের ক্ষেত্রে অপচয় যেমন দূষণীয় তেমন কৃচ্ছ্র বা কৃপণতাও ইসলামের দৃষ্টিতে অগ্রহণযোগ্য। পবিত্র কোরআনে সূরা বনি ইসরাইলে অপচয়কারীদের শয়তানের ভাই বলে অভিহিত করা হয়েছে। সূরা ফুরকানে মুমিনদের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, ‘এবং যখন তারা ব্যয় করে তখন তারা অপচয় করে না, কার্পণ্যও করে না। বরং এই দুইয়ের মধ্যে তারা মধ্যম পন্থা অবলম্বন করে।’ সোজা কথায় বিলাসিতা ও  কৃচ্ছ্র  উভয় পথকে এড়িয়ে মধ্যপথে চলার শিক্ষা দেওয়া হয়েছে ইসলামে। বাস্তবতার নিরিখে দেখা যায়, দারিদ্র্যের চেয়েও বিলাসিতা মানুষকে বেশি বিপথগামী করে। যে কারণে ধন-সম্পদের ব্যবহার সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে। আমর ইবনে আওফ (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্ল­াহ সাল্ল­াল্ল­াহু আলাইহি ওয়াসাল্ল­াম বলেছেন, আল্ল­াহর শপথ! আমি তোমাদের ব্যাপারে দারিদ্র্যের ভয় করি না। বরং আমার আশঙ্কা হচ্ছে, তোমাদের আগেকার লোকদের মতো তোমাদের জন্যও পার্থিব ধন-সম্পদের দরজা উম্মু ক্ত করে দেওয়া হবে এবং তাদের মতো তোমরাও পার্থিব লালসার শিকার হবে। পরিণতিতে তা তাদের মতো তোমাদেরও ধ্বংস করে দেবে (বুখারি-মুসলিম থেকে মিশকাতে)। ইসলাম সর্বক্ষেত্রে মধ্যম পন্থা অবলম্বনের শিক্ষা দেয়। পাদ্রি-পুরোহিত ও সন্ন্যাসীদের মতো পার্থিব নিয়ামত এবং আরাম-আয়েশ থেকে একেবারে দূরে থাকাও ঠিক নয়, আবার ভোগবিলাসে এতটা বিভোর হওয়াও ঠিক নয় যে, জীবনের আসল উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হয়ে যাবে। উল্লি­খিত হাদিসে সম্পদের প্রাচুর্যকে দরিদ্র অবস্থার চেয়েও বেশি বিপজ্জনক বলা হয়েছে। দারিদ্র্য ও অসচ্ছলতার কুপ্রভাব তুলনামূলকভাবে সীমিত। দারিদ্র্যের কারণে আল্ল­াহবিরোধী ও ধ্বংসাত্মক সমাজ ব্যবস্থা ফুলে-ফেঁপে উঠতে পারে না, যা সম্পদের প্রাচুর্যের মধ্যে বিকাশ লাভ করে এবং সভ্যতা-সংস্কৃতি ও নৈতিকতার গোটা ভিত্তিকেই সমূলে উৎপাটিত করে ফেলে।

মানুষকে জীবন সংগ্রামে সাহসী ও দৃঢ় প্রত্যয়ী হওয়ার শিক্ষা দেয় ইসলাম। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্ল­াহ সাল্ল­াল্ল­াহু আলাইহি ওয়াসাল্ল­াম বলেছেন, দুঃখ-কষ্টে পতিত হওয়ার ফলে তোমাদের কেউ যেন মৃত্যু কামনা না করে। একান্তই যদি তা করতে হয় তবে সে যেন বলে, ‘হে আল্ল­াহ! জীবন আমার জন্য যতক্ষণ কল্যাণকর ততক্ষণ আমাকে জীবিত রাখ। আর মৃত্যু আমার জন্য যখন কল্যাণকর তখন আমাকে মৃত্যু দান কর (বুখারি থেকে মিশকাতে)।’ ইসলামে আত্মহত্যা তো দূরের কথা, মৃত্যু কামনা করাও জায়েজ নয়। কারণ আল্ল­াহতায়ালার অসংখ্য নিয়ামতের মধ্যে জীবন অন্যতম বড় নিয়ামত। এ নিয়ামত নিঃশেষ হওয়ার কামনা করা মূলত নিয়ামতের অকৃতজ্ঞতা ও অমর্যাদার শামিল। তাই মৃত্যু কামনা করা একটি গুনাহর কাজ। আল্ল­াহ আমাদের সবাইকে অপচয় ও  কৃপণতা দুই বিচ্যুতি থেকে দূরে থাকার তৌফিক দান করুন। আমিন।

লেখক : ইসলামী গবেষক।

সর্বশেষ খবর