পাহাড়ধসে চট্টগ্রামে তিনজন প্রাণ হারিয়েছেন। শনিবার রাতে ভারি বৃষ্টিপাতের সময় বন্দরনগরের ফিরোজ শাহ কলোনি এলাকায় একই পরিবারের তিন প্রজন্মের তিন সদস্যের মৃত্যুর ঘটনা মর্মান্তিক। প্রবল বৃষ্টিতে ৫০ ফুট উঁচু পাহাড়ের চূড়া থেকে মাটি এসে ধসে পড়ে দুটি কাঁচা ঘরের ওপর। এতে মা-মেয়ে ও নাতনির মৃত্যু ঘটে। পাহাড় কেটে খাঁজে তৈরি করা হয়েছিল কাঁচা ঘর। একেবারে খাঁড়াভাবে থাকা পাহাড়টির চূড়ায় প্রবল বৃষ্টিতে ধস নামলে বিপর্যয় অনিবার্য হয়ে ওঠে। ঘূর্ণিঝড় তিতলির প্রভাবে পাহাড়ধসের আশঙ্কায় কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রামে সতর্কবাণী প্রচার করেছিল। পাহাড়ের বিপজ্জনক অবস্থান থেকে মানুষজন সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগও নেন তারা। কিন্তু প্রশাসনের লোকজন চলে যাওয়ার পর বাসিন্দারা ফিরে আসেন তাদের ঘরবাড়িতে। পাহাড়ধসে ধ্বংস হয়ে যাওয়া ঘরটির গৃহকর্তা তার দুই মেয়েকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে স্ত্রী, কন্যা ও শাশুড়িকে নিতে এসে দেখেন পাহাড়ধসে তারা মাটির নিচে চাপা পড়েছেন। ফায়ার সার্ভিসের লোকজন রাতেই তাদের উদ্ধার করতে সক্ষম হন। বর্ষা মৌসুমে বিশেষত ঘন বৃষ্টিপাতে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও তিন পার্বত্য জেলায় পাহাড়ধস সাংবাৎসরিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। যথেচ্ছভাবে পাহাড় কাটা, গাছপালা নিধন পাহাড়ধসের প্রধান কারণ বলে বিবেচিত। গত শনিবার রাতে পাহাড়ধসে তিনজনের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা মানুষের অপরিণামদর্শী কর্মকান্ডের অনিবার্য পরিণতি। পাহাড়, নদী, পরিবেশ প্রকৃতিরই দান। এসবের বিরুদ্ধে ধ্বংসযজ্ঞে মেতে উঠলে প্রকৃতিও যে প্রতিশোধ নেয়, পাহাড়ধস তারই প্রমাণ। যারা পাহাড় কেটে প্রকৃতিকে প্রতিশোধ নিতে উদ্বুদ্ধ করেছে তারা চেহারায় মানুষের মতো হলেও কেউ মানুষ নয়। মানুষের মতো পা-হাত, মুখ-চোখ থাকলেও হৃদয়বর্জিত এই পাহাড়খাদকরা আসলেই একেকজন দানব। এসব দানবের কারণেই একের পর এক বিপর্যয় ঘটেছে। ওদের শাস্তির জন্য বিচারের সম্মুখীন করা প্রত্যেক মানুষের দায়িত্ব বলে বিবেচিত হওয়া উচিত। সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল পাহাড়খাদকদের বিচার হবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, সেই প্রতিশ্র“তি পূরণ হয়নি। এমনকি বন্ধ হয়নি পাহাড় কাটা। পত্রপত্রিকায় প্রায়ই ছাপা হচ্ছে পাহাড় কাটার ছবি। তা দেখলে মনেও হয় না দেশে কোনো কর্তৃপক্ষ আছে। এ অবস্থার অবসান হওয়া দরকার।