শুক্রবার, ১৯ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

যেভাবে সুন্দর মৃত্যু হয়

মুফতি আমজাদ হোসাইন হেলালী

যেভাবে সুন্দর মৃত্যু হয়

জম্ম  হলে মরতে হবে এমনটিই স্বাভাবিক। পৃথিবীর সব প্রাণীই একদিন না একদিন প্রাণহীন হবে। কেউ বেঁচে থাকতে পারবে না। সব মানুষকেও একদিন আগে-পরে দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে পরকালে যেতে হবে। কবর এমন ঘর সেখানে সবাইকে প্রবেশ করতে হবে। এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, প্রতিটি মানুষকে মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে আর তোমরা কেয়ামতের দিন পরিপূর্ণ বদলাপ্রাপ্ত হবে। তারপর যাকে দোযখ থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে তাঁর কার্যসিদ্ধি ঘটবে। আর পার্থিব জীবন ধোঁকা ছাড়া অন্য কোনো সম্পদ। (সূরা আল-ইমরান, আয়াত : ১৮৫)

আলোচ্য আয়াত থেকে আমরা বুঝতে পারলাম, মউত যেন ইমানদারের মউত হয় এর জন্য বেশি বেশি নেক আমল করতে হবে। হজরত রসুলে কারিম সাল্ল­াল্ল­াহু আলাইহি ওয়াসাল্ল­াম বলেছেন, মৃত্যুবরণ করার আগে কিছু শুভ নিদর্শনের কথা। যার মৃত্যুর সময় এই শুভ লক্ষণগুলো দেখা যায় তাঁর মৃত্যু নেককারের মৃত্যু হিসেবে বোঝা যায়। যেমন- ১. মৃত্যুর সময় তাওহিদের কালিমা পাঠ। অর্থাৎ যখন মালাকুল মউত এসে প্রাণ কবজা করবে তার ঠিক পূর্ব মুহূর্তে কালিমা লা-ইলাহা ইল্ল­াল্ল­াহ জবান দিয়ে উচ্চারণ করতে হবে (আবু দাউদ, মুসতাদারাকে হাকেম)। হজরত মুয়াজ ইবনে জাবাল রাজি. বলেন, রসুল সাল্ল­াল্ল­াহু আলাইহি ওয়াসাল্ল­াম ইরশাদ করেছেন, যার শেষ কথা হবে লা-ইলাহা   ইল্ল­াল্ল­াহ সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।

২. হজের ইহরাম অবস্থায় মৃত্যুবরণ করা। অর্থাৎ একজন হাজী সাহেব হজ বা উমরার উদ্দেশে যখন বিশুদ্ধ নিয়ত করে ইহরাম বাঁধে তখন সে আল্ল­াহর মেহমান হয়ে যান। আর আল্ল­াহর মেহমান থাকা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করা বড়ই সৌভাগ্যের বিষয়। এ সম্পর্কে সহিহ মুসলিম শরিফের এক হাদিসে এসেছে, উঠের পিঠ থেকে পড়ে ইহরামের হালাতে কোনো ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করলে রসুল সাল্ল­াল্ল­াহু আলাইহি ওয়াসাল্ল­াম তার সম্পর্কে বলেন, তাকে বড়ই পাতাযুক্ত পানি দ্বারা গোসল দাও এবং তার (পরিহত) দুটো কাপড়েই তাকে দাফন করে দাও। তবে তাঁর মাথা আবৃত কর না। কেননা সে কেয়ামতের দিন তালবিয়া পড়তে পড়তেই উত্থিত হবে। ৩. ইবাদত-বন্দেগি অবস্থায় মৃত্যুবরণ করা। মানবজীবনের সৃষ্টি একমাত্র আল্ল­াহর ইবাদতের জন্যই নির্ধারিত। তাঁর যখন জীবনের শেষ সময় ইবাদত-বন্দেগিতে কাটবে এবং এ অবস্থাতেই তাঁর মউত হবে। এ মৃত্যু বড়ই সৌভাগ্যের। এ সম্পর্কে মুসনাদে আহমদে একটি বর্ণনা এসেছে, হজরত হুজায়ফাতুল ইয়ামান রাজি. থেকে বর্ণিত, রসুল              সাল্ল­াল্ল­াহু আলাইহি ওয়াসাল্ল­াম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আল্ল­াহর সন্তুষ্টির জন্য লা-ইলাহা ইল্ল­াল্লাহ বলবে এবং এটাই হবে তার জীবনের শেষ আমল, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। যে ব্যক্তি আল্ল­াহর সন্তুষ্টির আশায় একদিন রোজা রেখেছে, এই রোজাই তার জিন্দেগির শেষ আমল, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। যে ব্যক্তি আল্ল­াহর সন্তুষ্টির আশায় সদকা করেছে, আর এটাই তার জিন্দেগির শেষ আমল, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। ৪. দীন-ইসলাম, স্বদেশ, জীবন, সম্পদ, সম্মানসহ এগুলোর যে কোনো একটি রক্ষা করতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করা। এসব কিছু রক্ষা করার জন্য মউত অনেক বড় সৌভাগ্যের। হাদিসে এসেছে, হজরত সায়ীদ ইবনে যায়েদ রাযি. থেকে বর্ণিত, আল্ল­াহর রসুল সাল্ল­াল্ল­াহু আলাইহি ওয়াসাল্ল­াম ইরশাদ করেন, যে তার সম্পদ রক্ষা করতে গিয়ে নিহত হয় সে শহীদ, যে তার পরিবার-পরিজনকে রক্ষা করতে গিয়ে নিহত হয় সে শহীদ, যে দীন রক্ষায় নিহত হয় সে শহীদ এবং যে তার জীবন রক্ষায় নিহত হয় সে শহীদ (আবু দাউদ, জামিয়ত তিরমিজি)

এ সম্পর্কিত আরও বহু হাদিস বর্ণিত আছে যা এই ক্ষুদ্র প্রবন্ধে লেখা সম্ভব নয়। ৫. জুমার দিন বা রাতে মৃত্যুবরণ করা। এটাও অত্যন্ত সৌভাগ্যের মৃত্যু হিসেবে হাদিসে পাওয়া যায়। হজরত আবদুল্ল­াহ ইবনে আমর রাজি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী কারিম সাল্ল­াল্ল­াহু আলাইহি ওয়াসাল্ল­াম বলেন, কোনো মুসলিম শুক্রবার দিনে বা রাতে মৃত্যুবরণ করলে আল্ল­াহতায়ালা তাকে কবরের ফিৎনা থেকে মুক্তি দান করবেন। (তিরমিজি, মুসনাদে আহমদ)।

প্রতিটি মোমিন-মুসলিম ভাই মনে-প্রাণে কামনা করেন নেককারের মৃত্যুর মতো সুন্দর মৃত্যু। নেক আমলের দ্বারা আল্ল­াহর নৈকট্য অর্জন করে সুন্দর মৃত্যু হাসিল করতে হবে। তাই আসুন সবাই মিলে মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে দোয়া করি। হে আল্ল­াহ আমাদের বেশি বেশি নেক আমল করার তাওফিক দান করুন। আমাদের জিন্দেগির শেষ আমল যেন নেক আমল হয়। খাতেমা বিল খায়ের হয় এবং তাওহিদের কালিমা জবানে যেন উচ্চারিত হয় আমাদের সেই তাওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক : মুহাদ্দিস, মুুফাসসির, খতিব, উপস্থাপক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর