শনিবার, ২০ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা
বায়তুল মোকাররমের খুতবা

দারিদ্র্য দূরীকরণে ইসলামের নির্দেশনা

মুফতি মাওলানা মিজানুর রহমান
সিনিয়র পেশ ইমাম

ইসলামের দৃষ্টিতে দারিদ্র্য হচ্ছে মানব -জীবনের একটি ভয়াবহ সমস্যা। ইসলাম দারিদ্র্যকে একজন মুসলমানের আকিদা-বিশ্বাস, তার স্বভাব-চরিত্র ও সুস্থ চিন্তা-ভাবনা ধ্বংসকারী বিপদ বলে চিহ্নিত করেছে। আর তাই রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর থেকে পানাহ চেয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করতেন। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (এ দোয়ায় উল্লিখিত বিষয়গুলো থেকে) পানাহ চাইতেন। ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে জাহান্নামের ফিতনা থেকে, জাহান্নামের আজাব থেকে পানাহ চাই এবং আপনার কাছে পানাহ চাই অধিক ধন-সম্পদের ফিতনা থেকে ও দারিদ্র্যের ফিতনা থেকে।’ বুখারি।

শুধু তাই নয়, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুফরির মতো জঘন্য পাপ থেকে পানাহ চাওয়ার সময় তার সঙ্গে দারিদ্র্যকে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। হাদিসে এসেছে, হজরত আবুবকর (রা.) বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দোয়া করতেন, ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে কুফর ও দারিদ্র্য থেকে পানাহ চাই।’ আবু দাউদ।

এ হাদিস থেকে দারিদ্র্য কত জঘন্য বিষয়, তা সহজেই বুঝে আসে। কারণ আল্লাহর কাছে পানাহ চাওয়ার ক্ষেত্রে তাকে কুফরি, যা সবচেয়ে জঘন্য, এর সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে।

দারিদ্র্যকে কুফরির সঙ্গে যুক্ত করার আরেকটি কারণ এটাও যে, দারিদ্র্য কখনো কখনো মানুষকে কুফরির দিকে ঠেলে দেয়। কারণ দারিদ্র্যের কারণে মানুষ ধনীদের হিংসার চোখে দেখে আর কুফরি যেমন সব নেক কাজ ধ্বংস করে দেয়, তদ্রুপ হিংসাও সব নেকি ধ্বংস করে দেয়। এ ছাড়া কুফরির মতো দারিদ্র্যও মানুষকে আল্লাহর ফয়সালার প্রতি অবাধ্য করে তোলে, যার ফলে তারা নানারকম মন্তব্য করে আল্লাহর প্রতি নিজেদের অসন্তোষ প্রকাশকরত নিজেদের কুফরির দিকে ঠেলে দেয়।

দারিদ্র্যের এ ভয়াবহতার প্রতি লক্ষ্য করে ইসলাম একে মোকাবিলার জন্য বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিয়েছে। আর এজন্যই আল্লাহ রব্বুল আলামিন জাকাত ফরজ করেছেন এবং একে ইসলামের একটি অন্যতম রুকন (স্তম্ভ) হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। আর এ জাকাতব্যবস্থার মাধ্যমে ধনীদের থেকে সম্পদ গ্রহণ করে দরিদ্রদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। যার মাধ্যমে তারাও সমাজজীবনে অংশগ্রহণ করতে পারে। আল্লাহ রব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন, ‘সদকাগুলো (এখানে সদকা দ্বারা সদকায়ে ওয়াজিবাহ, যার মধ্যে জাকাতও একটি উদ্দেশ্য, নেওয়া হয়েছে) দরিদ্র ও মিসকিনদের জন্য...’

দারিদ্র্যের অভিশাপকে সমাজ থেকে দূর করার জন্য ইসলাম কেবল জাকাত ওয়াজিব করেই ক্ষান্ত থাকেনি, বরং মুমিনদের প্রচুর পরিমাণে নফল সদকা করার প্রতিও উৎসাহিত করেছে এবং এজন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে বড় বড় পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘সৎকর্ম শুধু এই নয় যে, পূর্ব কিংবা পশ্চিম দিকে মুখ করবে, বরং বড় সৎ কাজ হলো এই যে, ইমান আনবে আল্লাহর ওপর, কিয়ামত দিবসের ওপর, ফেরেশতাদের ওপর এবং সব নবী-রসুলের ওপর, আর সম্পদ ব্যয় করবে তাঁরই মুহব্বতে আত্মীয়স্বজন, এতিম-মিসকিন, মুসাফির, ভিক্ষুক ও মুক্তিকামী ক্রীতদাসের জন্য।’ সূরা বাকারা, আয়াত ১৭৭।

এ আয়াতে সমাজ থেকে দারিদ্র্য দূরীকরণের জন্য আত্মীয়স্বজন, এতিম, মিসকিন, মুসাফির, ভিক্ষুক ও গোলাম আজাদ করার জন্য সম্পদ ব্যয় করাকে ইমান আনয়ন ও অন্যান্য ইবাদতের মতো নেকির কাজ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।

অন্যদিকে দান না করাকে অর্থাৎ দারিদ্র্য দূরীকরণে ভূমিকা না রাখাকে কাফিরদের চরিত্র হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আপনি কি দেখেছেন তাকে, যে বিচার দিবসকে মিথ্যা বলে? সে সেই ব্যক্তি, যে এতিমকে গলা ধাক্কা দেয় এবং মিসকিনকে অন্ন দিতে উৎসাহিত করে না।’ সূরা মাউন, আয়াত ১-৩।

সর্বশেষ খবর