রবিবার, ২১ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

গুনাহ হলে ক্ষমা চেয়ে নিন

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

গুনাহ হলে ক্ষমা চেয়ে নিন

হায়! এই জীবন কত ছোট। বিন্দু বিন্দু সময় গড়িয়ে বেলা শেষে যখন মরণের ডাক এসে যায়, তখন এক বুক হাহাকার নিয়ে বিদায় নিতে হয়। বিদায় নিতে হয় বড় বিষণ্ন মনে। কারণ, এই ছোট্ট জীবনটুকু যেভাবে যে পথে চালানোর কথা আমরা সেভাবে সে পথে চালাতে পারিনি। প্রতিমুহূর্তে একটু একটু করে জীবনের বরফ গলছে আর যাওয়ার সময় ঘনিয়ে আসছে। হে দরদি পাঠক! এত ক্ষুদ্র জীবন, তাও আমরা কতটা বেখেয়াল। তাই তো জেনে না জেনে ছোট-বড় কত গুনাহই না আমরা করে ফেলছি প্রতিদিন।

আফসোস! গুনাহ এখন আর আমাদের কাছে গুনাহ মনে হয় না। যারা বেপরোয়া জীবনযাপন করে, তাদের কথা না হয় বাদই দিলাম। কিন্তু আমরা যারা ধর্ম মানি,  আল্ল­াহকে চিনি আমরাও কি নিজেদের গুনাহ থেকে বাঁচিয়ে রাখছি? আমাদের দ্বারা হয়তো বড় ধরনের গুনাহ হয় না ঠিক বা কম হয়, কিন্তু! ছোট ছোট গুনাহগুলো তো আমরা অহরহ করে যাচ্ছি। বলা যায় কোনো গুরুত্বই দিই না ছোট গুনাহকে। একইভাবে ছোট ছোট নেক কাজগুলো আমাদের চোখে মূল্যহীন। আমাদের সমাজে অবহেলিত। অথচ আল্ল­াহতায়ালা বলেছেন, ‘কেউ যদি অণু পরিমাণ ভালো কিংবা খারাপ কাজ করে, তাও সে হিসাবের দিন দেখতে পাবে।’ পীর সাহেবদের কাছে যখন মুরিদরা প্রথম সবক নিতে যায়, তখন কিন্তু বুদ্ধিমান পীর মুরিদকে বড় কোনো আমলের কথা বলেন না। কিংবা বলেন না বড় কোনো গুনাহ ছেড়ে দেওয়ার কথা। তারা সবসময় ছোট ছোট বিষয় থেকে শুরু করেন। যেমন বলেন, বাবা! তুমি যাই কর, মিথ্যা বলাটা ছেড়ে দাও। অথবা বলেন, বাবা! তুমি এখন থেকে খারাপ নজরে মানুষকে দেখবে না। এমন ছোট ছোট গুনাহ ছেড়ে দেওয়ার মাধ্যমে একজন নাপাক গুনাহগার মানুষকে জামানার শ্রেষ্ঠ অলিয়ে কামেল হিসেবে গড়ে তোলেন আল্ল­াহওয়ালা বান্দারা। আর শয়তান যখন কাউকে ধোঁকা দিতে চায়, তাকে কিন্তু প্রথমেই বড় কোনো গুনাহর কথা বলে না। একেবারে মামুলি কিছু গুনাহর কথা বলে। যা হয়তো বাইরে থেকে গুনাহ মনে নাও হতে পারে। যেমন, শয়তান বলে, আজ তো বাইরে বৃষ্টি বা ঠান্ডা বেশি। জামাতে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। এভাবে আস্তে আস্তে ছোট থেকে বড় গুনাহর দিকে বান্দাকে নিয়ে যাওয়া হয়। একদিন সে নামাজ পড়াই ছেড়ে দেয়। এক সময়ের শ্রেষ্ঠ             অলিআল্ল­াহও শয়তানের ধোঁকায় ধ্বংসের গভীর খাদে পড়ে গেছে- এমন উদাহরণ কম নেই ইতিহাসে।

তাই গুনাহ ছোট বলে তাকে গুরুত্বহীন মনে করতে নেই। এক আল্ল­াহর অলি তার মুরিদদের সবসময় বলতেন, বাবারা! মনে রেখ, আগুন কিংবা সাপকে কখনো ছোট মনে কর না। এ দুটো ছোট হলেও তোমার জীবন সম্পদ শেষ করে দিতে পারে। একইভাবে গুনাহকেও ছোট মনে কর না। ছোট গুনাহই তোমার বড় আখেরাতকে নষ্ট করে দিতে পারে। কবি শেখ সাদী (রহ.) বড় সুন্দর উপদেশ দিয়েছেন আমাদের। তিনি বলেছেন, পাপকে ছোট মনে কর না। এই ছোট পাপ থেকে যদি তুমি বেঁচে থাকতে না পার, এমন একদিন আসবে, বড় পাপ থেকেও তুমি ফিরতে পারবে না।

‘দানি কে চেগোফতে জাল বারুস্তম গোরদ,/দুশমন না তাওয়াঁ হাকির ও বেচারা শুমারদ।/দিদেম বাছে কে আসারে, চশমায়ে খোরদ, চুঁ বেশতর আমদ শুতর ও ববোরদ।

অর্থ : রুস্তমের বাবা রুস্তমকে উপদেশ দিতে গিয়ে বলেন, প্রিয় বৎস আমার! দুশমনকে কখনো ছোট মনে কর না। আমার দীর্ঘ জীবনের অভিজ্ঞতায় দেখেছি, পানি বয়ে চলার ছিদ্রটি প্রথমে ছোট থাকে। খুবই ছোট। তারপর এক সময় ওই ছিদ্র বড় হয়। বড় বড় ঘরবাড়ি পর্যন্ত সে বিলীন করে নিয়ে চলে। ছোট ছোট গুনাহ থেকে বেঁচে থাকুন। আল্লাহ আপনাকে বড় গুনাহ থেকে বাঁচিয়ে রাখবেন। ছোট ছোট নেক কাজ আগ্রহের সঙ্গে করতে থাকুন। আল্ল­াহ বড় বড় ভালো কাজের তৌফিক দেবেন। আল্ল­াহতায়ালা আমাদের গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার তৌফিক দিন। আমাদের জীবনকে নেকের আলো দিয়ে ভরিয়ে দিন। আমিন।

লেখক : বিশিষ্ট মুফাসসিরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব। চেয়ারম্যান : বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি।

ই-মেইল : www.selimazadi.com

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর