দেশে উচ্চশিক্ষিতের হার বাড়ছে। সে হারে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি না হওয়ায় বাড়ছে বেকারত্বের হার। চাকরির বাজারে সরকারি খাতের অবদান চার শতাংশেরও কম। সরকারি চাকরিতে বর্তমানে বেতন কাঠামো যেমন আকর্ষণীয় তেমন সুযোগ-সুবিধাও বেসরকারি খাতের চেয়ে বেশি। কিন্তু সরকারি চাকরি প্রাপ্তিতে বিসিএস ক্যাডার সার্ভিস বাদে অন্যান্য ক্ষেত্রে যোগ্যতার বদলে উৎকোচ ও তদ্বিরই নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। চাকরির জন্য পাঁচ থেকে পঁচিশ লাখ টাকা লেনদেনের বিষয়টি ওপেন সিক্রেট। বেসরকারি বা ব্যক্তিখাতের বিকাশ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সেভাবে না হওয়ায় দেশজুড়ে এখন লাখ লাখ উচ্চশিক্ষিত বেকার দেশ ও জাতির জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। উচ্চশিক্ষিত একজন যুবক বা যুবতীকে এখন ১৫-২০ হাজার টাকা বেতনের চাকরির জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয়। যে অর্থ একজন রিকশা চালকের এমনকি দিনমজুরের আয়ের চেয়ে বেশি নয়। দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা স্পুটনিক গতিতে বাড়লেও শিক্ষাব্যবস্থার ত্র“টির জন্য প্রশিক্ষিত বা দক্ষ জনশক্তি বাড়ছে না। ফলে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বিশেষ করে করপোরেট ও মাল্টি ন্যাশনাল প্রতিষ্ঠানগুলো বিদেশিদের নিয়োগ দিতে বাধ্য হচ্ছে। দেশে উচ্চশিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বিপুলভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় সামাজিক অস্থিরতার আশঙ্কা জোরদার হচ্ছে। বেকারত্বের লাগাম টেনে ধরতে বেসরকারি খাতের উন্নয়নে সরকারকে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। দেশে গার্মেন্টসহ বিভিন্ন শিল্পে ম্যানেজমেন্ট লেভেলের চাকরির জন্য শ্রীলঙ্কা, ভারত, চীন ও কোরিয়া থেকে লোক আনা হয়। দেশের উদ্যোক্তারা দুটি কারণে বাইরের লোকজনদের এসব কাজে তাদের প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দিতে চায়। প্রথমটি হলো, বাইরের লোকদের নিয়ন্ত্রণ করা খুব সহজ। দ্বিতীয়ত, তাদের দিয়ে কাজ করা উদ্যোক্তাদের জন্য অনেক সহজ হয়। দেশের লোকজনকে এই লেভেলে নিয়োগ করা হলে প্রতিষ্ঠানে পলিটিক্স ঢুকে যায়। এ অবস্থার উত্তরণে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউট গড়ে তুরতে হবে। দেশের শিল্প কলকারখানার চাহিদা পূরণ করে এমন শিক্ষা বা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করাও জরুরি। যাতে বিদেশিদের ওপর নির্ভরতা কাটিয়ে ওঠা যায়।