মঙ্গলবার, ২৩ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

বিশ্বনবীর দৈহিক গঠন

মাওলানা মোশাররফ মাহমুদ

হজরত হাসান ইবনে আলী (রা.) বর্ণনা করেন, আমি আমার মামা হিন্দ ইবনে আবি হালার কাছে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অবয়ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি তাঁর অবয়ব খুব চমৎকারভাবে বর্ণনা করতেন। আমার আগ্রহ হলো, তিনি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল­ামের উত্তম গুণাবলি থেকে কিছু আমার কাছে বর্ণনা করবেন। আর আমি তা সংরক্ষণ করব। স্বীয় জীবনে বাস্তবায়নের চেষ্টা করব। তিনি বললেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বভাবগতভাবে নম্র-ভদ্র ও মহৎ ছিলেন। আর মানুষের চোখেও মহান মর্যাদার অধিকারী ছিলেন। তাঁর পবিত্র চেহারা পূর্ণিমা রাতের চাঁদের মতো উজ্জ্বল ছিল। তিনি মধ্যাঙ্গী লোকের তুলনায় খানিকটা দীর্ঘাকৃতির ছিলেন। আর দীর্ঘাঙ্গী লোকের তুলনায় কিছুটা খাটো ছিলেন। তার মাথা বড় ছিল। মাথার কেশ সামান্য কোঁকড়ানো ছিল। যদি এমনিতেই সিঁথি এসে যেত, তাহলে সিঁথি কাটতেন; অন্যথায় ইচ্ছাপূর্বক সিঁথি কাটতেন না। তিনি যখন কেশ ছেড়ে রাখতেন তখন কেশগুলো কর্ণলতি অতিক্রম করে যেত। তাঁর গায়ের রং ছিল অতিশয় চকচকে, ললাট ছিল প্রশস্ত। ভ্র“দ্বয় বাঁকানো, সরু, ঘন ও পৃথক পৃথক ছিল। ভ্র“দ্বয়ের মাঝখানে একটি রগ ছিল, যা ক্রোধের সময় স্ফিত হয়ে উঠত। তাঁর নাক কিছুটা উঁচু ছিল। তাতে একটি নূর চমকাত। প্রথম কেউ দেখলে তাকে অধিক বড় নাকবিশিষ্ট মনে করত। (প্রকৃত-পক্ষে নাক এত বড় ছিল না, কিন্তু নূরের জৌলুসে বড় মনে হতো। গভীরভাবে লক্ষ্য করলে তা বোঝা যেত।) তাঁর দাড়ি ঘন ও পরিপূর্ণ ছিল। গÐদেশ ছিল মসৃণ ও খানিকটা মাংসাল। মুখগহŸর ছিল প্রশস্ত। দাঁত কিছুটা ফাঁকা ছিল। (সামনের দাঁতগুলো একটি অন্যটির সঙ্গে সম্পূর্ণ মেলানো ছিল। বুকে পশমের সরু রেখা ছিল। তার গ্রিবা মূর্তির গ্রিবার মতো সৌন্দর্যময় ও স্বচ্ছ রুপার মতো চকচকে ছিল। তাঁর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ মানানসই ছিল। শরীর সুদৃঢ় ছিল। পেট ও বুক সমান ছিল। তবে বুক প্রশস্ত ছিল। দুই কাঁধের মাঝে তুলনামূলক বেশি দূরত্ব ছিল। জোড়ার হাড়গুলো মজবুত ও মোটা ছিল। যখন পরনের বস্ত্র খুলতেন, তখন তাঁর শরীর অত্যন্ত উজ্জ্বল ও চকচকে দেখা যেত। বুক থেকে নাভি পর্যন্ত পশমের সরু রেখা ছিল। এ ছাড়া উভয় স্তন ও পেট লোমশূন্য ছিল। তবে উভয় হাত, কাঁধ ও বুকের উপরিভাগে কিছু লোম ছিল। হাতের মণিবন্ধ দীর্ঘ ও হাত প্রশস্ত ছিল। উভয় হাত ও উভয় পা মাংসাল ছিল। হাত-পায়ের আঙুল দীর্ঘ ছিল। পায়ের তলদেশ কিছুটা গভীর ছিল। পা মসৃণ ছিল। মসৃণতার কারণে পায়ে পানি অবস্থান করত না। বরং সঙ্গে সঙ্গে ঝরে যেত। যখন হাঁটতেন তখন সবলে পা ওঠাতেন ও সামনের দিকে ঝুঁকে হাঁটতেন। মাটিতে খুব আস্তে পা ফেলতেন। দ্রুত হাঁটতেন। তাঁর পদক্ষেপ ছিল বড় বড়। চলার সময় মনে হতো তিনি নিম্নভ‚মির দিকে অবতরণ করছেন। যখন কারও দিকে ফিরে তাকাতেন, তখন পূর্ণ শরীর দিয়ে তার দিকে মনোনিবেশ করতেন। তিনি নিচের দিকে দৃষ্টিপাত করতেন। তাঁর দৃষ্টি আকাশের তুলনায় ভূমির দিকে বেশি থাকত। তিনি অধিকাংশ সময় চোখের কোণ দিয়ে তাকাতেন। অধিক লজ্জাশীলতার দরুন কারও দিকে পূর্ণ চোখে তাকাতেন না। চলার সময় সাহাবিদের সামনে রাখতেন। কারও সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে তিনি প্রথম সালাম দিতেন। শামায়েলে তিরমিজি।
      ► লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক

 

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর