রবিবার, ২৮ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

জামাতে নামাজ পড়ার ফজিলত

মাওলানা মুহম্মাদ জিয়াউদ্দিন

সালাত বা নামাজ হলো অবশ্য পালনীয় ইবাদত। নামাজ যেমন পরিহারের সুযোগ নেই, তেমন গ্রহণযোগ্য কোনো কারণ ছাড়া নামাজের জামাতে শামিল না হওয়ার সুযোগ নেই। রসুল (সা.) জামাতে নামাজ পড়ার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন এবং তা বাধ্যবাধকতার শামিল। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেন, ‘আজান শোনার পর কোনো ওজর না থাকা সত্ত্বেও যে লোক নামাজের জামাতে শামিল হয় না, তার ঘরে বসে একাকী পড়া নামাজ মঞ্জুর হবে না।’ জানতে চাওয়া হলো, ইয়া রসুলুল্ল­াহ! ওজর বলতে কী বুঝায়? তিনি বললেন, ‘বিপদাশঙ্কা অথবা রোগব্যাধি।’ আবু দাউদ, ইবনে হেব্বান ও ইবনে মাজা।

হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) আরও বর্ণনা করেন, রসুল (সা.) বলেছেন, ‘তিন ব্যক্তিকে আল্ল­াহপাক অভিশাপ দিয়েছেন : (১) যে লোক জনগণের অপছন্দ সত্ত্বেও তাদের নেতা হয়ে বসে (২) যে নারী তার ওপর স্বামী অসন্তুষ্ট থাকা অবস্থায় রাতযাপন করে (৩) নামাজের আজান ও কল্যাণের আহ্বান শুনেও যে লোক জামাতে শামিল হয় না।’ হাকেম।

হজরত আলী (রা.) বলেন, ‘মসজিদের প্রতিবেশীর নামাজ মসজিদ ছাড়া দুরস্ত হবে না।’ প্রশ্ন করা হলো : মসজিদের প্রতিবেশী কে? তিনি বললেন, ‘বাড়িতে বসে যে আজান শুনতে পায়।’ মুসনাদে আহমদ।

ওসমান (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি এসার নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করেছে সে যেন অর্ধরাত নামাজ আদায় করেছে, অতঃপর যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করেছে, সে যেন পূর্ণ রাত নামাজ আদায় করেছে। (মুসলিম, হাদিস-১৫২৩, আবু দাউদ-৫৫৫, আহমদ-৪০৮)

বোখারি শরিফে বর্ণিত আছে, হজরত আবদুল্ল­াহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন : ‘কেয়ামতের দিন যেই লোক মুসলমান হিসেবে আল্ল­াহর দিদার লাভ করতে চায়, সে যেন প্রতিদিনের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ যথাযথভাবে সংরক্ষণ করে। কেননা মহান আল্ল­াহ তোমাদের নবীর জন্য হেদায়েতের বিধানাবলি প্রবর্তন করে দিয়েছেন। আর এ নামাজগুলো হচ্ছে হেদায়াতের অন্যতম পন্থা। অনেকের মতো তোমরাও যদি আপন গৃহে বসে নামাজ পড়, তবে তোমাদের নবীর পথ ছেড়ে দিলে। আর তোমরা যদি নবীর পথ বর্জন কর, তবে গোমরাহিতে নিপতিত হবে। আমার জানা মতে, মুনাফিক বা অসুস্থ ব্যক্তি ছাড়া কেউ জামাতে শামিল হতে পিছপা হয় না। অথচ যে লোক দুজনের কাঁধে ভর দিয়ে কাতারে দাঁড়ায় অথবা মসজিদ পর্যন্ত আসে, অবশ্যই সে জামাতে নামাজের জন্য আসে।’

পক্ষাঘাত রোগে অসুস্থ রবী বিন খায়সাম দুই লোকের কাঁধে ভর দিয়ে মসজিদে এসে জামাতে শামিল হতেন। তাকে বলা হতো, আপনি তো মাজুর, আপনার ঘরে বসে নামাজ পড়া তো বৈধ। তিনি বলতেন, ‘তা কীভাবে হয়? আমি তো নামাজের আহ্বান শুনতে পাই। কাজেই যার সাড়া দেওয়ার সামর্থ্য আছে, হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তাকে তাতে সাড়া দিতেই হবে।’ ইসলামের সোনালি যুগের কোনো কোনো বুজুর্গ বলতেন, নামাজের জামাত ছুটে যাওয়া, পাপের কারণে হয়ে থাকে। হজরত ইবনে ওমর (রা.)-এর বর্ণনায় আছে, একবার হজরত ওমর (রা.) তার এক দেয়ালঘেরা খেজুর বাগান দেখতে গেলেন। ফিরে এসে দেখেন, আসর নামাজের জামাত শেষ হয়ে গেছে। তিনি তৎক্ষণাৎ জামাত ছুটে যাওয়ার কাফফারাস্বরূপ খেজুর বাগানটি দরিদ্রদের মাঝে সদকা করে দেওয়ার ঘোষণা দেন।

            লেখক : ইসলামী গবেষক।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর