ইমানের সঙ্গে যারা রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সান্নিধ্য লাভ করেছেন এবং ইমানের ওপর অটল-অবিচল থাকা অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন, তাদের সাহাবি বলে। উম্মতে মুহাম্মদীর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ মহান জামাত হলো সাহাবায়ে কিরাম। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র সঙ্গ ও সান্নিধ্য লাভের বরকতে তাঁরা সব ধরনের মলিনতা থেকে ছিলেন মুক্ত। সব ধরনের জুলুম-নির্যাতন, দুঃখ-দুর্দশা, ক্ষুধা ও দরিদ্রতার মাঝেও তাদের হৃদয় ছিল নবীপ্রেমে ভরপুর। ধৈর্য, ত্যাগ ও আত্মোৎসর্গের চরম পরাকাষ্ঠা প্রদর্শনের মাধ্যমে তাঁরা অর্জন করেছিলেন মহান আল্লাহ ও রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সন্তুষ্টি। সব হক্কানি ওলামায়ে কিরাম এ বিষয়ে একমত যে, কোনো অলি বা পীর-মাশায়েখ যতই উচ্চমর্যাদায় পৌঁছান না কেন, একজন সাধারণ সাহাবির সমতুল্য কখনো হতে পারবেন না। কেননা তাঁরা সার্বিক দিক থেকে অনন্য ও অতুলনীয়। সাহাবায়ে কিরামের মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব বোঝার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, মহান রব্বুল আলামিন আল কোরআনের একাধিক আয়াতে তাদের প্রশংসনীয় গুণাবলির আলোচনা করেছেন। আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘মুহাম্মদ আল্লাহর রসুল এবং তাঁর সঙ্গে যারা আছে তাঁরা কাফিরদের প্রতি অত্যন্ত কঠোর; পরস্পরে একে অন্যের প্রতি দয়ার্দ্র। আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনায় আপনি তাদের রুকু ও সিজদারত দেখবেন। তাদের চেহারায় রয়েছে সিজদার চিহ্ন। এটাই তাওরাতে তাদের দৃষ্টান্ত।’ সূরা ফাতহ, আয়াত ২৯। দয়াময় রব্বুল আলামিন সব উম্মতে মুহাম্মদীকে সাহাবাদের মতো ইমান আনার প্রতি উৎসাহিত করে আল কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘অতএব তারা যদি ইমান আনে, তোমাদের ইমান আনার মতো, তবে তারা হেদায়াতপ্রাপ্ত হবে। আর যদি তারা বিমুখ হয় তাহলে তারা রয়েছে কেবল বিরোধিতায়।’ সূরা বাকারা, আয়াত ১৩৭। আল্লাহতায়ালা আল কোরআনের সূরা হাদিদের ১০ নম্বর আয়াতে সব সাহাবির ব্যাপারে জান্নাতের ওয়াদা করে বলেন, ‘তবে আল্লাহ তাদের সবাইকে কল্যাণের (জান্নাতের) প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।’ হজরত ইমরান ইবনে হুসাইন (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘আমার উম্মতের মধ্যে সর্বোত্তম তারা যারা আমার যুগে রয়েছে অর্থাৎ সাহাবায়ে কিরাম। অতঃপর তাদের পরবর্তী যুগের উম্মত অর্থাৎ তাবেয়িন। অতঃপর তাদের পরবর্তী যুগের উম্মত অর্থাৎ তাবে তাবেয়িন।’ বুখারি, মুসলিম।
লেখক : মুফাসসিরে কোরআন ও ইসলামবিষয়ক গবেষক
