শুক্রবার, ২ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

আল্লাহ অসীম দয়ালু ও বান্দার প্রতি ক্ষমাশীল

মাওলানা আবদুর রশিদ

আল্লাহ অসীম দয়ালু ও ক্ষমাশীল। বান্দা তাঁর কাছে ক্ষমা চাইলে তিনি খুশি হন। হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘মহান আল্লাহ তাঁর বান্দার তওবায় তোমাদের ওই লোকের চাইতে বেশি খুশি হন মরুভূমিতে যার উট হারিয়ে যাওয়ার পর তা সে ফিরে পেল।’ হজরত আবু মুসা (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুল সাল্লাল্ল­াহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘পশ্চিম দিকে সূর্যোদয় না হওয়া পর্যন্ত মহান আল্ল­াহ প্রতি রাতে তাঁর রহমতের হাত প্রসারিত করেন যাতে দিনের গুনাহগার তওবা করে। আর তিনি প্রতিদিনই তাঁর ক্ষমার হাত প্রসারিত করেন যেন রাতের গুনাহগার তওবা করে।’ হজরত ইমরান ইবনে হুসাইন (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘জুহায়নাহ গোত্রের এক মহিলা জেনার কারণে গর্ভবতী হয়ে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বলল, হে আল্ল­াহর রসুল! আমি জেনার গুনাহ করেছি, আমাকে এর শাস্তি দিন। তার অভিভাবককে ডেকে এনে নবী করিম সাল্ল­াল্ল­াহু আলাইহি ওয়াসাল্ল­াম বললেন, এর সঙ্গে ভালো ব্যবহার করবে। সে সন্তান প্রসব করার পর তাকে আমার কাছে নিয়ে আসবে। এ ব্যক্তি তাই করল। অতঃপর নবী সাল্ল­াল্ল­াহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জেনার শাস্তির আদেশ করলেন। তার শরীরের সঙ্গে কাপড় ভালোভাবে বেঁধে দেওয়া হলো এবং নির্দেশ অনুযায়ী তাকে পাথর মেরে হত্যা করা হলো। রসুলুল্লাহ সাল্ল­াল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জানাজার সালাত আদায় করলেন। ওমর (রা.) বললেন, হে আল্ল­াহর রসুল! এত জেনা করেছে, আপনি তবু এর জানাজার সালাত আদায় করছেন! রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে এমন তওবা করেছে যা সত্তরজন মদিনাবাসীর মাঝে বণ্টন করে দিলেও তাদের জন্য তা যথেষ্ট হয়ে যেত। আল্লাহর জন্য নিজের প্রাণকে যে মহিলা স্বেচ্ছায় বিলিয়ে দেয় তার এমন তওবার চাইতে উত্তম কোনো কাজ তোমার কাছে আছে কি?’ আত তারগিব।

হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের আগের যুগের এক ব্যক্তি ৯৯ জনকে হত্যা করার পর পৃথিবীতে সর্বশ্রেষ্ঠ আলিমের সন্ধানে বেরিয়ে পড়ল। তাকে এক খ্রিস্টান দরবেশের খোঁজ দেওয়া হলো। সে তার কাছে গিয়ে বলল, সে ৯৯ জন লোককে হত্যা করেছে, তার জন্য এখন তওবার সুযোগ আছে কি? দরবেশ বলল, নেই। ফলে দরবেশকে হত্যা করে সে ১০০ সংখ্যা পূর্ণ করল। অতঃপর পুনরায় সে দুনিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ আলিমের খোঁজে বেরিয়ে পড়লে তাকে এক আলিমের খোঁজ দেওয়া হলো। তার কাছে গিয়ে সে বলল, সে ১০০ লোককে হত্যা করেছে, এখন তার জন্য তওবার সুযোগ আছে কি? আলিম বলল, হ্যাঁ, তওবার সুযোগ আছে। তওবার বাধা কে হতে পারে? তুমি অমুক স্থানে চলে যাও। সেখানে কিছুসংখ্যক লোক আল্লাহর ইবাদত করছে। তাদের সঙ্গে তুমিও ইবাদত কর। আর তোমার দেশে ফিরে যেও না। কারণ ওটা মন্দ এলাকা। ফলে নির্দেশিত স্থানের দিকে লোকটি চলতে থাকল। অর্ধেক রাস্তা গেলে তার মৃত্যুর সময় এসে পড়ল। তখন রহমতের ফেরেশতা ও আজাবের ফেরেশতার মধ্যে বিরোধ দেখা দিল। রহমতের ফেরেশতা বললেন, এ লোক তওবা করে আল্লাহর দিকে ফিরে এসেছে। কিন্তু আজাবের ফেরেশতা বললেন, লোকটি কখনো কোনো সৎ কাজ করেনি। এমন সময় মানুষের রূপ ধারণ করে আরেক ফেরেশতা তাদের কাছে এলেন। তারা এ বিষয়ে তাদের মধ্যে তাকেই বিচারক মেনে নিলেন। বিচারক বললেন, তোমরা উভয় দিকের রাস্তার দূরত্ব মেপে দেখ। যে দিকটি কাছে হবে সে সেটিরই অন্তর্ভুক্ত। কাজেই জায়গা পরিমাপের পর যেদিকের উদ্দেশে সে এসেছিল তাকে সেদিকটার কাছে পাওয়া গেল। ফলে রহমতের ফেরেশতা তার জান কবজ করলেন।’ মুসলিম।

            লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক

সর্বশেষ খবর