রবিবার, ৪ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

অহংকারীকে আল্লাহ পছন্দ করেন না

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

অহংকারীকে আল্লাহ পছন্দ করেন না

তখন ইসলামী সাম্রাজ্যের প্রধান বিচারপতি ছিলেন হজরত আলী (রা.)। তাঁর জ্ঞান ও  বিশ্লে­ষণ শক্তির সুনাম-সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে দিকে দিকে। অবশ্য অনেক আগেই ‘জ্ঞাননগরীর দরজা’ খেতাব কুড়িয়েছেন রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আমি হলাম জ্ঞানের শহর আর আলী হলো তার দরজা।’ খলিফা আবু বকর ও ওমর (রা.)-এর সময়ে প্রধান বিচাপতির দায়িত্বে ছিলেন এই আলী। মানুষ আসত তার কাছে বিভিন্ন ধরনের মামলা-মোকদ্দমা নিয়ে। বিচক্ষণতার সঙ্গে সমাধান করে দিতেন তিনি। খুশিমনে বাড়ি ফিরে যেত বাদী-বিবাদী দুই পক্ষই। একদিনের ঘটনা। বিচারকাজ শুরু হয়েছে। মনোযোগ দিয়ে বাদী-বিবাদীর কথা শুনছেন প্রধান বিচারপতি হজরত আলী (রা.)। অনেকক্ষণ চিন্তাভাবনা করে মামলার রায় দিলেন। সবাই রায় মেনে নিয়েছেন। একজন ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল, মহামান্য বিচারক! কিছু মনে করবেন না। আপনার রায়টি সঠিক হয়নি। পাঠক! একটু ভাবুন তো! কোনো উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার সিদ্ধান্তকে যদি এভাবে সবার সামনে ভুল বলা হয়, তাহলে ওই ব্যক্তির অবস্থা কেমন হতে পারে। শেখ সাদি (রহ.) বলেন, সাধারণ কেউ হলে সঙ্গে সঙ্গে দারোয়ান ডেকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিত। হয়তো জেল-জরিমানাও করত। কিন্তু ইনি তো সাধারণ কোনো বিচারক নন। ইনি হলেন জ্ঞানীদেরও জ্ঞানী। জ্ঞাননগরীর দরজা। জ্ঞানীমাত্রই বিচক্ষণ হয়। হয় বিনম্র। আলী (রা.) জ্ঞান শহরের দরজা। অহংকারের লেশমাত্র ছিল না তার মনে। তিনি চোখ তুলে তাকালেন লোকটির দিকে। মিষ্টি হেসে কাছে ডাকলেন। পাশে বসিয়ে বললেন, ভাই! আমি তো আমার চিন্তা-গবেষণার আলোকে রায় দিয়েছি। তোমার যদি আরও ভালো কোনো রায়-মন্তব্য জানা থাকে আমাদের বলতে পারো। আমরা সাদরে গ্রহণ করে নেব। পরে ঠিকই জ্ঞাননগরীর দরজা আলী (রা.) একজন সাধারণ মানুষের রায় মেনে নিয়েছেন। এটা সম্ভব হয়েছে তার বিনয় ও নিরহংকারী মনের কারণে। অহংকার ও বিনয় এ দুটো পরস্পরবিরোধী। একটি এলে আরেকটি হারিয়ে যায়। কেউ যদি বিনয়কে বেছে নেয়, সে অহংকার থেকে বেঁচে যাবে। আর অহংকার যদি কারও মনে বাসা বাঁধে, বিনয় তার জীবন থেকে হারিয়ে যাবে। জ্ঞানীরা বলেন, অহংকারী মানুষ নিজেকে বড় ভাবে। কিন্তু সবার কাছে সে ছোট হয়ে থাকে। হাকিমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানভি (রহ.) বড় সুন্দর একটি উদাহরণ দিয়েছেন। তিনি বলেন, দেখো, কত বড় আর কত দামি একটি বিমান। এটি যখন মাটিতে থাকে তখন সবার চোখেই বড় দেখায়। কিন্তু বিমান যখন ওপরে উঠতে থাকে তখন সে আস্তে আস্তে ছোট হতে থাকে। যখন খুব ওপরে উঠে যায়, তখন বিশাল বিমানকে এত ছোট দেখায় যে, মনে হয় ছেলের হাতের খেলনা মাত্র। তো আমরা এই বিমান দেখেও শিখতে পারি। এত বিশাল বিমান, ওপরে ওঠার কারণে ছোট হয়ে যায়। মানুষও যখন নিজেকে বড় ভাবে, অন্যের চেয়ে শ্রেষ্ঠ মনে করে, তখন সে এভাবেই আল্লাহ ও মানুষের কাছে ছোট হয়ে যায়। শুধু তাই নয়, অহংকারের কারণে অহংকারী নিজের দুনিয়া-আখেরাত নষ্ট করে ফেলে। ইবলিশ শয়তান আল্লাহর রহমত থেকে তো অহংকারের জন্যই বিতাড়িত হয়েছে!

লেখক : বিশিষ্ট মুফাসসিরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব।

সর্বশেষ খবর