বুধবার, ৭ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

রাজধানীর শব্দদূষণ

জনসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে

যানজটের পাশাপাশি শব্দদূষণের দিক থেকে রাজধানী ঢাকা সম্ভবত বিশ্বের নগরকূলের মধ্যে শিরোপার দাবিদার। ইউরোপ, আমেরিকা তো বটেই এশিয়ার সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপানের কোনো নগরীতে অকারণে হর্ন বাজানো কল্পনারও বাইরে। রাজধানীর যান্ত্রিক যানবাহন চালকরা প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে হর্ন বাজানোকে তাদের অভ্যাসের অংশে পরিণত করেছেন। ট্রাফিক জ্যামে গাড়ি স্থির দাঁড়িয়ে থাকলেও তারা হর্ন বাজিয়ে যান মজ্জাগত অভ্যাসের কারণে। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে রাতদিন নির্মাণকাজের জন্য সৃষ্ট বাড়তি শব্দে আশপাশের মানুষের সমস্যা হলেও তা দেখার কেউ নেই। একে অনুচিত কাজ বলে কেউ ভাবেনও না। সামাজিক বিভিন্ন অনুষ্ঠান যেমন গায়ে হলুদ, জম্ম দিন বা কোনো রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে মাইক ও বিশাল সাউন্ড সিস্টেমের উচ্চশব্দে মানুষের কাজে সমস্যা হলেও আয়োজকরা একে নিজেদের অধিকার বলে ভাবেন। আওয়াজ কমানোর অনুরোধ করলে উল্টো তেড়ে আসা শুধু নয়, এ নিয়ে খুনোখুনির ঘটনাও ঘটে কখনো কখনো। পরিবেশবিদরা বলছেন, বর্তমানে ঢাকার পরিবেশগত অন্যতম প্রধান সমস্যা হচ্ছে শব্দদূষণ এবং এর ভয়াবহতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। শব্দদূষণের প্রভাবে সাময়িকভাবে বা স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন নগরবাসী। সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হচ্ছে শিশু, ছাত্রছাত্রী, হাসপাতালের রোগী, ট্রাফিক পুলিশ, পথচারী ও গাড়ির চালকরা। শব্দদূষণের কারণে কানের অসুস্থতায় ভুগছেন এমন মানুষের সংখ্যা রাজধানীতে অসংখ্য। বিশেষজ্ঞদের মতে শব্দদূষণের কারণে রক্তচাপ বৃদ্ধি, হৃদস্পন্দনে পরিবর্তন, হৃৎপি- ও মস্তিষ্কে অক্সিজেন কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এজন্য শ্বাসকষ্ট, মাথা ঘোরা, বমি বমি ভাব, দিক ভুলে যাওয়া, দেহের নিয়ন্ত্রণ হারানো এবং মানসিক অসুস্থতাসহ বিভিন্ন ধরনের রোগ তৈরি হতে পারে। শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা-২০০৬ অনুযায়ী আবাসিক এলাকার জন্য শব্দের নির্ধারিত মানমাত্রা দিনে ৫৫ ও রাতে ৪৫ ডেসিবল। কিন্তু রাজধানীর আবাসিক এলাকাগুলোয় নির্ধারিত মানমাত্রার চেয়ে বেশি শব্দ পাওয়া গেছে এ-সংক্রান্ত জরিপে। এর মধ্যে শাহজাহানপুরে সর্বোচ্চ শব্দমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যার পরিমাণ সর্বোচ্চ ১২৮.৪ এবং সর্বনিম্ন ৫০.৭ ডেসিবল। শব্দদূষণ রাজধানীবাসীর মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে তা এককথায় ভয়াবহ। নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনকে এখনই কঠোর হতে হবে। শব্দদূষণ বন্ধে দূষণকারীদের বিরুদ্ধে নিতে হবে আইনগত পদক্ষেপ। জনসচেতনতা গড়ে তোলাও জরুরি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর