বুধবার, ৭ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

মানবাধিকারের ধর্ম ইসলাম

মাওলানা মুহাম্মদ আশরাফ আলী

মানবাধিকার মানবজাতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মানবাধিকার মানুষের স্বভাবগত। মানুষের যে স্বভাব তার মধ্যেই মানবাধিকারের দাবিটি রয়েছে। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘প্রত্যেক ব্যক্তিকে সৃষ্টি করা হয়েছে একটি স্বভাবের ওপর।’ সে স্বভাবের মধ্যে রয়েছে স্বাধীনতা। মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় ইসলাম অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবুয়তলাভের আগে কিশোর বয়সে গড়ে তুলেছিলেন ‘হিলফুল ফুজুল’ নামের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। যাদের কাছ ছিল মক্কাবাসীর মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা। সংঘাত এড়িয়ে শান্তি বজায় রাখা। মদিনা সনদেও মানবাধিকারের স্বীকৃ-তি দেওয়া হয়েছে অতুলনীয় আঙ্গিকে। মহান আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টির সেরা জীবের মর্যাদা দিয়েছেন। এ মর্যাদা সমুন্নত রাখার শিক্ষা দেয় ইসলাম। যে কারণে ইসলামকে মানবাধিকারের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ জীবনবিধান বলে অভিহিত করা হয়। ইসলামে মানবাধিকারকে আল্লাহ-প্রদত্ত মানুষের সহজাত অধিকার হিসেবে ভাবা হয়। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জম্ম গ্রহণ করেছিলেন এক অন্ধকারাচ্ছন্ন যুগে। সে যুগে আরব সমাজে মানবাধিকার ছিল লুণ্ঠিত। কন্যাসন্তানের জম্ম গ্রহণকে আরব সমাজে নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা হতো। তাদের জীবন্ত কবর দেওয়া হতো কোনো কোনো ক্ষেত্রে। কথায় কথায় হত্যাকা- সংঘটিত হতো আরব সমাজে।

নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় ইসলাম প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করেছে। কন্যাশিশু হত্যার বিরুদ্ধে আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের সন্তানদিগকে দারিদ্র্যের ভয়ে হত্যা করো না। তাদেরও আমিই রিজিক দিই এবং তোমাদেরও। নিশ্চয়ই তাদের হত্যা করা মহাপাপ।’ সূরা বনি ইসরাইল, আয়াত ৩১। নরহত্যা আরব সমাজের সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছিল। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ প্রবণতার বিরুদ্ধে ইরশাদ করেন, ‘সবচেয়ে জঘন্য অপরাধ হচ্ছে আল্লাহর সঙ্গে কাউকে অংশীদার করা এবং মানুষ হত্যা করা।’ বুখারি।

মানবাধিকার নিশ্চিতকরণে ন্যায়বিচারের বিকল্প নেই। যে কারণে ইসলামে ন্যায়বিচারের ধারণাকে উৎসাহিত করা হয়েছে। সূরা নিসার ১৩৫ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা ন্যায়বিচারে দৃঢ় প্রতিষ্ঠিত থাকিবে আল্লাহর সাক্ষীস্বরূপ, যদিও তা তোমাদের নিজেদের অথবা পিতা-মাতা ও আত্মীয়স্বজনের বিরুদ্ধে হয়।’

মানবাধিকার সমুন্নত করার জন্য রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক মানুষের প্রতি অন্য মানুষের ক্ষমাশীল মনোভাব ও দয়া প্রদর্শনকে উৎসাহিত করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘জমিনে যারা আছে তাদের প্রতি দয়া প্রদর্শন কর তাহলে আসমানে যিনি আছেন তিনি তোমার প্রতি সদয় হবেন।’ আবু দাউদ।

বিদায় হজে রসুল সাল্লাল্ল­াহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে ভাষণ দেন তা মানবাধিকারের ইতিহাসের এক স্মরণীয় ঘটনা। মানবসমাজকে লক্ষ্য করে তিনি বলেন, ‘নিশ্চয় তোমাদের পরস্পরের জীবন, সম্পদ ও সম্ভ্রম তোমাদের (অবৈধ হস্তক্ষেপ থেকে) পবিত্র, যেমন আজকের এই দিন, এই মাস এবং শহর পবিত্র।’ বুখারি।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে মানবাধিকারের প্রতি যত্নবান হওয়ার তাওফিক দান করুন।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক

সর্বশেষ খবর