দুনিয়ার সব জাতির মধ্যে শুভেচ্ছা বিনিময়ের প্রথা প্রচলিত। শান্তির ধর্ম ইসলামের অনুসারী উম্মতে মুহাম্মাদীর মধ্যে শুভেচ্ছা বিনিময় হয় সালামের মাধ্যমে। পরস্পরের প্রতি আল্লাহর রহমত কামনার মাধ্যমে। ছোট-বড় গরিব-ধনী সবার ক্ষেত্রে দেখা-সাক্ষাতে সালাম বিনিময়ের প্রথা চালু হয়েছে ইসলামী শরিয়তে। হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না যতক্ষণ না তোমরা ইমান গ্রহণ করবে। আর তোমরা ইমানদার হতে পারবে না যতক্ষণ না তোমরা পরস্পরকে ভালোবাসবে। আমি কি তোমাদের এমন কথা বলে দেব না যা করলে তোমাদের পারস্পরিক ভালোবাসা বৃদ্ধি পাবে? (অবশ্যই বলব, তা হলো) তোমরা পরস্পরের মধ্যে সালামের প্রচলন করবে।’ মুসলিম, মিশকাত।
সালামকে ইসলামী কালচারের অপরিহার্য অংশে পরিণত করা হয়েছে। হজরত আবু হুরাইরা (রা.) বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আরোহী ব্যক্তি হাঁটা লোককে এবং হাঁটা ব্যক্তি উপবিষ্টকে এবং কমসংখ্যক লোক অধিকসংখ্যককে সালাম করবে।’ বুখারি, মুসলিম, মিশকাত।
হজরত আবু হুরাইরা (রা.) আরও বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘কম বয়সী বয়োজ্যেষ্ঠকে, পথ অতিক্রমকারী উপবিষ্টকে এবং কমসংখ্যক লোক অধিকসংখ্যককে সালাম প্রদান করবে।’ বুখারি, মিশকাত।সালামের ক্ষেত্রে ছোট অর্থাৎ অল্প বয়স্কদেরও বঞ্চিত করেনি ইসলাম। হজরত আনাস (রা.) বলেন, একদা রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছু বালকের কাছ দিয়ে গমন করলেন ও তাদের সালাম করলেন। বুখারি, মুসলিম, মিশকাত।
হজরত আবু সাইদ খুদরি (রা.) রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তোমরা রাস্তার ওপর বসা থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখো। তারা (সাহাবিরা) বললেন, হে আল্লাহর রসুল! আমাদের তো রাস্তার ওপর বসা ছাড়া গত্যন্তর নেই। কারণ তথায় বসে আমরা প্রয়োজনীয় কথাবার্তা সমাধা করি। তিনি বললেন, যদি তোমরা তথায় বসতে একান্ত বাধ্যই হও, তবে রাস্তার হক আদায় করবে। তারা জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রসুলুল্লাহ! রাস্তার হক কী? তিনি বললেন, চক্ষু নিয়ন্ত্রণে রাখা, কাউকে কষ্ট না দেওয়া, সালামের জবাব দেওয়া, ভালো কাজের আদেশ করা এবং খারাপ থেকে নিষেধ করা। বুখারি, মুসলিম, মিশকাত।
সালাম সমাজবদ্ধ মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করে। সমাজে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টিতে অবদান রাখে। ছোট-বড়, ধনী-নির্ধন সবার প্রতি সালাম আদান-প্রদানের প্রথা সমাজে সাম্যের সম্পর্ক স্থাপনে সহায়তা করে। হিংসা-বিদ্বেষ থেকে দূরে থাকতে সাহায্য করে ইসলামের শুভেচ্ছা বিনিময়ের এই মহান প্রথা। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সালাম আদান-প্রদানের তাওফিক দান করুন।
লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক