শিরোনাম
শনিবার, ১৭ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

নূর নবীর আলোয় আলোকিত হোক দুনিয়া

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

নূর নবীর আলোয় আলোকিত হোক দুনিয়া

মুমিনের হৃদয়ে প্রেমের জোয়ার এনে দেয় রবিউল আউয়াল মাস। যার প্রেমে পাগল হয়ে মাবুদ রব্বানা ত্রিভুবন সৃষ্টি করলেন, সেই মাহবুবে খোদা তাজেদারে সোনার মদিনা হজরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সা.) পৃথিবীর আলো-জল-নীলে পা রেখেছেন এ মাসের ১২ তারিখে। তাই কিয়ামত পর্যন্ত নবীপ্রেমিকদের কাছে রবিউল আউয়াল মাস প্রেমের নদীতে জোয়ার বইয়ে দেওয়া মাস হিসেবে স্মরণীয়-বরণীয় হয়ে থাকবে।

খোদাপ্রেমিকদের সর্দার হুজুরপাক (সা.) পৃথিবীতে আসার আগে এবং পরে অনেক অলৌকিক ঘটনা ঘটেছে। তাওরাত-জবুর-ইনজিল শরীফের পন্ডিতরা তাদের ধর্মগ্রন্থ গবেষণা করে নিশ্চিত হয়েছেন, আখেরি পয়গম্বর মাহবুবে খোদা পৃথিবীতে আসার সময় ঘনিয়ে এসেছে। জ্যোতিষশাস্ত্রের পন্ডিতরা তারকা গুনে দেখেছেন, শেষ নবীর আগমনের আর বেশি দিন বাকি নেই। সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন, কবে কখন সেই মহামানব পা রাখবেন জগতে। হুজুরপাক (সা.) যেদিন বাবার ঔরস থেকে মায়ের গর্ভে আসেন, সেই দিনটি ছিল জমাদিউস সানির জুমাবারের রাত। এ রাতে ইবলিশ শয়তান তার দলবল নিয়ে একটি পাহাড়ে জমায়েত হয়। বিলাপ করতে করতে ইবলিশ বলল, হে আমার বন্ধুরা শোনো! আজ রাতে মাহবুবে খোদা তার মায়ের গর্ভে এসেছেন। তাঁর দুনিয়ায় আসার সময় হয়ে গেছে। আমরা মানুষকে জাহান্নামে নেওয়ার জন্য চেষ্টা করছি। আর তিনি চেষ্টা করবেন মানুষকে জান্নাতে নেওয়ার জন্য। আমাদের চেষ্টা ব্যর্থ হবে। তাঁর চেষ্টাই সফল হবে। বলা হয়, হুজুর (সা.) যেদিন মায়ের গর্ভে আসেন, আল্লাহতায়ালা খুশি হয়ে বেহেশতকে আরও চমৎকার আরও সুন্দর করে সাজিয়ে তোলেন। শুধু তাই নয়। অনেক বছর ধরেই আরবে দুর্ভিক্ষ-অনাবৃষ্টি চলছিল। হুজুর (সা.) মায়ের গর্ভে আসার পরপরই মক্কার আকাশ-বাতাস মুখরিত হয়ে ওঠে। মুষলধারে বৃষ্টি ঝরে। সহসা দুর্ভিক্ষ দূর হয়ে যায়। প্রচুর ফসল উৎপন্ন হয় সে বছর। আরবরা এত সমৃদ্ধি         অর্জন করে যে, তারা ওই      বছরটিকে ‘সৌভাগ্যের বছর’ বলতে শুরু করে।

ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (রহ.) বলেন, হুজুর (সা.) যে রাতে মায়ের গর্ভে এলেন সে রাত আমার কাছে শবেকদরের চেয়েও বেশি মূল্যবান মনে হয়। কারণ, শবেকদরের মূল্য কোরআন নাজিল হয়েছে এজন্য। আর কোরআন পেয়েছি হুজুর (সা.)-এর জন্য। তাই হুজুর সো.)কে যে রাতে পেয়েছি সে রাতকেই আমি বেশি মূল্যবান মনে করি। বিবি আমিনা প্রায় সময় শুনতে পেতেন কে যেন তাকে বলছে, হে আমিনা, তোমার গর্ভে যে সন্তান আছে তিনি কোনো সাধারণ সন্তান নন। তিনি হলেন আখেরি নবী। শেষ পয়গম্বর। মানবতার ত্রাণকর্তা। তার ছোঁয়ায় পৃথিবীর নির্যাতিত মানুষ নির্যাতনের শিকল ভেঙে স্বাধীনতার মুক্ত আকাশে উড়াল দেবে। এক রাতে মা আমিনা স্বপ্নে দেখেন, তার দেহ থেকে একটি নূর বেরিয়ে চারপাশ আলোকিত করে দিয়েছে। সে আলো অনেক দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। স্বপ্নটি দেখার সঙ্গে সঙ্গেই মা আমিনার ভিতর এক ধরনের প্রশান্তি ছড়িয়ে পড়ে। সকালে তিনি স্বপ্নবিশারদের সঙ্গে দেখা করেন। বলেন, আমি রাতে এক অদ্ভুত স্বপ্ন দেখেছি। স্বপ্নের বিস্তারিত শুনে স্বপ্নবিশারদ বলেন, হে আমিনা! আপনি কোনো চিন্তা করবেন না। আপনার গর্ভে এক অতি মর্যাদাবান সন্তান বড় হচ্ছে। তিনি যখন পৃথিবীতে আসবেন, পৃথিবীর সব অন্ধকার দূর হয়ে যাবে। পৃথিবীবাসী তার আলোয় পথ চলবে।

লেখক : বিশিষ্ট মুফাসসিরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব চেয়ারম্যান : বাংলাদেশ মুফাস্সির সোসাইটি

www.selimazadi.com

সর্বশেষ খবর