মঙ্গলবার, ২০ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

সন্তোষে ঐক্যফ্রন্ট নেতা ড. কামাল হোসেন

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম

সন্তোষে ঐক্যফ্রন্ট নেতা ড. কামাল হোসেন

১৭ নভেম্বর ছিল আফ্রো-এশিয়া ল্যাটিন আমেরিকার মজলুম জনতার মুক্তিদূত মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ৪২তম মৃত্যুবার্ষিকী। ড. কামাল হোসেন তার বেইলি রোডের বাড়ি থেকে সাড়ে ৫টায় রওনা হয়ে ৭টা ৪০ মিনিটে টাঙ্গাইল পৌঁছেছিলেন। টাঙ্গাইলের পথে খুব বেশি মানুষকে স্বাগত জানাতে আমি তেমন অপেক্ষা করিনি। ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি স্বাধীন বাংলাদেশে রাজধানীর বাইরে বঙ্গবন্ধু প্রথম টাঙ্গাইল গিয়েছিলেন। সেদিন টাঙ্গাইলের প্রান্তসীমা গোড়াইয়ে তার অপেক্ষায় ছিলাম। আর জীবনে এই দ্বিতীয়বার ড. কামাল হোসেনের জন্য করটিয়ার ক্ষুদিরামপুরে দাঁড়িয়ে ছিলাম। ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে ছিলেন গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু, আমার প্রিয় আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ছাত্রলীগের একসময়ের সভাপতি ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ। তাকে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান বীরপ্রতীকের ছোট্ট বাড়িতে তুলেছিলাম নাশতা খাওয়াতে। আমার এক ছোট ভাইয়ের বউ শিউলী এবং প্রবীণ নেতা আবুল মল্লিকের স্ত্রী মাজেদা মল্লিক অসাধারণ নাশতার ব্যবস্থা করেছিলেন। বাঙালিরা সাধারণত সকালে যা খায় খিচুড়ি-রুটি-ভাত-পোলাও-মাছ-মাংস-সবজি-ডিম-ডাল সবই ছিল। আমাদের নেতা ঐক্যফ্রন্টের প্রধান খাওয়া-দাওয়া খুব পছন্দ করেন। তার খাওয়ার শেষ দিকে গিয়েছিলাম। দেখলাম খুব তৃ-প্তিসহকারে খাচ্ছেন। ৯টা ৫-৬ মিনিটে সন্তোষের পথে বেরিয়েছিলাম। রাস্তায় তেমন ভিড় ছিল না। একজন মহান নেতার তিরোধান দিবস রাস্তাঘাট দেখে তেমন মনে হচ্ছিল না। অন্য সময় মাইকের আওয়াজে থাকা যায় না। সেদিন সব সুনসান। শুধু আমাদের একটা মাইক ছিল। ‘আজকের এই দিনে হুজুর তোমায় পড়ে মনে, আজকের এই দিনে ভাসানী তোমায় মনে পড়ে, মওলানা ভাসানী লও লও লও সালাম’- এই ছিল সেøাগান। হুজুরের মাজারে কয়েক শ নেতা-কর্মী ও কিছু অনুরক্ত ভক্ত। হুজুরের মাজারে ফুলের তোড়া দিয়ে ড. কামাল হোসেনের পাশে মোনাজাতে হাত তুলেছিলাম। সাধারণত কোনো ওলির কবরে কোনো মাওলানার মোনাজাত আমি খুব একটা পছন্দ করি না। এটা আমাকে কিছু কামিল লোকজন বলেছিলেন, কোনোখানে কোনো ওলির মাজারে গেলে অন্যের হাতে দোয়া করানোর চাইতে নিজের দোয়া নিজের করা ভালো। তাই করেছিলাম। মাজার থেকে বেরিয়ে বারান্দায় অনেক সাংবাদিকের মাঝে বলার চেষ্টা করেছি, আজ দেশের আকাশ যে কালো মেঘে ছেয়ে আছে তা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রধান ড. কামাল হোসেনের ঐকান্তিক চেষ্টা ও আমাদের সবার পরিশ্রমে অবশ্য অবশ্যই দূর হয়ে যাবে। ড. কামাল হোসেন বলেছেন, আমরা হুজুর মওলানা ভাসানীর কবরে দোয়া করতে এসেছি, তার সংগ্রামী জীবন থেকে আমরা অনুপ্রাণিত হতে এসেছি। তার দোয়া এবং অনুপ্রেরণা দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে আমাদের শক্তি জোগাবে। আমরা আমাদের সর্বস্ব দিয়ে দেশের মানুষের প্রকৃত মালিকানা ফিরিয়ে আনব। মানুুষের হারানো ভোটাধিকার সবাইকে নিয়ে ভোটের মাধ্যমে পুনরুদ্ধার করব।

ড. কামাল হোসেনের হাই কোর্ট বারে সারা দেশের আইনজীবীর এক মহাসমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকার কথা ছিল। শহরের যানজট থেকে বাঁচার জন্য বাজিতপুর, মিরের বেতকার ভিতর দিয়ে তাকে মূল সড়কে এনেছিলাম। যে ক্ষুদিরামপুরে ৭টা ৩০ মিনিটে তাকে গ্রহণ করেছিলাম, ঠিক সেখান থেকে ১০টা ১৫ মিনিটে বিদায় দিয়েছিলাম। তিনি জামুর্কি থেকে বিখ্যাত সন্দেশ ও আরও কী কী নিতে চেয়েছিলেন। বলেছিলাম, রাস্তায় দাঁড়ালে সময় নষ্ট হবে। আমি মিষ্টি নিয়ে আসব। আমার বাবা ছিলেন খুবই জেদি মানুষ। কোনো কথা নষ্ট হতে দিতেন না। আমরাও কথা রাখার চেষ্টা করি। সেখান থেকে বাসায় ফিরে দুপুরের খাবার খেয়ে সখীপুরে গিয়েছিলাম। সেই ২০০০ সাল থেকে ১৫ নভেম্বর ’৯৯ সালের সখীপুরের ভোট ডাকাতি প্রতিরোধ দিবস পালন করে আসছি। এবারও প্রোগ্রাম দেওয়া হয়েছিল উপজেলা মাঠে ঐক্যফ্রন্টের সব নেতাকে নিয়ে একটি প্রতিবাদ সভা করার। সেখানে ড. কামাল হোসেন, আ স ম আবদুর রব, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মাহমুদুর রহমান মান্না, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা হওয়ায় সে সভা করতে পারিনি বা করতে যাইনি। পরিবর্তে সখীপুরে দীপ-কুঁড়ি-কুশি কুটিরে একটা মতবিনিময় সভা দিয়েছিলাম। সেখানে সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ যে আমার সঙ্গে ’৭৫-এ প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল সে ছিল। বিএনপির নেতা হাবিব, পাপ্পু, মোস্তাফিজ, শহীদ আরও কয়েকজন উপস্থিত হয়েছিল। বৈঠকে লোক ছিল বেশুমার। জায়গা তো হয়নি, বাইরে রাস্তায় অন্যের দুয়ারে তিল ধরার জায়গা ছিল না। হঠাৎ ধানের শীষের সেø­াগান উঠেছিল। তাদের থামিয়ে দিয়েছিলাম। এক পর্যায়ে বলেছি, প্রিয় বন্ধুরা! জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ধানের শীষ আর বিএনপির ধানের শীষ এক নয়। ধানের শীষ ছিল হুজুর মওলানা ভাসানীর আর এখনকার ধানের শীষ ড. কামাল হোসেনের জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের, সমগ্র দেশবাসীর। নিশ্চয়ই নির্বাচনের পর ধানের শীষ যাদের তারা নিতে পারবেন। কিন্তু এখন ধানের শীষ বিএনপির নয় এ কথা বিএনপির নেতা-কর্মীদের বুঝতে হবে। সত্যিই যদি তারা বিশুদ্ধ গণতন্ত্র চান, অবাধ গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চান তাহলে তারা সবাই এ মনোভাব ভুলে দেশের মানুষকে যথাযোগ্য মর্যাদা দেওয়া শিখতে হবে, বিনয়ী হতে হবে, সৎ এবং সরল হতে হবে। হয়তো বিএনপির দু-চার জন নেতা-কর্মী আমার কথায় কষ্ট বা অন্যরকম ভাবতে পারেন। কিন্তু বিএনপির নেতা-কর্মীদের বছরের পর বছর আমার মতামতের ওপর গভীর শ্রদ্ধাশীল দেখেছি। সখীপুরের ঘরোয়া সভায় বিএনপি নেতা পাপ্পু এক অসাধারণ বক্তব্য দিয়েছে। তার বক্তব্যের মূল ছিল, বিএনপি আমলে মাগুরায় উপনির্বাচনে কারচুপি আওয়ামী লীগ যেভাবে সারা দেশময় এমনকি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে তুলে ধরেছিল ’৯৯-এ সখীপুরের ভোট ডাকাতির তিলমাত্র আমরা তুলে ধরতে পারিনি। কথাটা যে কতখানি সত্য তা ভাবার সময় এসেছে। একসময় বক্তৃতার রাজা আওয়ামী লীগ। দেখলাম, বিএনপির নেতারাও চমৎকার বক্তৃতা করে। ’৯৯-এর ভোট কারচুপির অনেক সাক্ষী মতবিনিময় সভায় ছিল। তারা তন্ময় হয়ে সুলতানের বক্তব্য শুনেছে কীভাবে তাদের ভোট ছাড়াই নির্বাচনী ফলাফল কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। যা হোক, আমি সারা জীবন দেখে এসেছি অন্যায় করে কেউ কোনো দিন পার পায়নি। জননেত্রীকে বহুবার বলার পরও তার সম্মানের দিকে না তাকিয়ে চাটুকারদের কথায় অনেক অপ্রিয় কাজ করেছেন। গণতন্ত্র থাকলে গণতান্ত্রিক রাজনীতি থাকলে আমরা যারা রাজনীতি করি তারা থাকি, আমাদের রাজনৈতিক সম্মান থাকে। কিন্তু রাজনীতি যদি না থাকে, গণতন্ত্রই না থাকে তাহলে আমাদের কিছুই থাকে না- এই সাদা কথাটা কেন যেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কখনো বুঝলেন না। একসময় তিনি আলোচনাতেই বসতে চাননি, কারও সঙ্গে আলোচনা নয়, কোনো আলোচনা নয়। পরে দেখলাম আমরা ছাড়া সবার সঙ্গে আলোচনা করলেন। আমরা দরখাস্ত করতে যাইনি, করার ইচ্ছা হয়নি। তাই তিনি আমাদের আলোচনায় আমন্ত্রণ জানাননি। ভালো করেছেন। হ্যাঁ, এটা ঠিক, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে ড. কামাল হোসেনের চিঠির আগ পর্যন্ত পরিবেশ-পরিস্থিতি ছিল এক রকম, চিঠির পর আলোচনা শুরু হওয়ার পর পরিবেশ হয়েছিল অন্যরকম। তিনি যুক্তফ্রন্টের সঙ্গেও আলোচনা করেছেন। প্রবীণ নেতা ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী আর ড. কামাল হোসেনকে নিয়ে আমি চলতে চেয়েছিলাম। সব সময়ই কমবেশি আলোচনায় সরকারের দিকে ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর ছেলে মাহী বি. চৌধুরীর ঝোঁক দেখেছি। শেষ পর্যন্ত যেভাবে তিনি সরকারের সঙ্গে যোগদান করেছেন তাতে তার দলীয় বা ফ্রন্টে কোনো অস্তিত্ব ছিল না। যুক্তফ্রন্ট হওয়ার কথা ছিল ড. কামাল হোসেনকে নিয়ে। তা না হওয়ায় আমিও যুক্তফ্রন্টে সক্রিয় হতে পারিনি। যুক্তফ্রন্ট কিছুদিন হাঁটি হাঁটি পা পা করে চলেছে প্রবীণ নেতা ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী, স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলক আ স ম আবদুর রব ও মাহমুদুর রহমান মান্নাকে নিয়ে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট যখন গঠিত হয় তখন জনাব আ স ম আবদুর রব এবং মাহমুদুর রহমান মান্না ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে যোগদান করলে স্বাভাবিকভাবেই তিনজনের দুজন যেদিকে ফ্রন্টও সেদিকে। যুক্তফ্রন্ট একাই তো আর ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর সঙ্গে থাকতে পারে না। তিন দলের দুই দল যেদিকে ফ্রন্টও সেদিকে- এটাই সাধারণ নিয়ম। সাদা চোখে দেখার বিষয়। তার পরও কথা থাকে। বিকল্পধারা বাংলাদেশ তার কিছু নেতা সভাপতি ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মেজর মান্নানকে দল থেকে বাদ দিয়ে নিজেরা কমিটি করে ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন। এত কিছুর পরও তারা আওয়ামী জোটে যুক্ত হয়েছেন। খুবই ভালো কথা। মানুষ যদি সমর্থন করে তারা বিজয়ী হয়ে সংসদে আসেন কথা বলবেন মানুষের কাজ করবেন। কিন্তু যদি আসতে না পারেন, মানুষ যদি তাদের ভোট না দেয় তখন তো গায়ের জোরে কিছু হবে না। তাই দ্রুত পরিস্থিতি ও সময় বদলাচ্ছে। গায়ের জোরে কোনো কিছু হবে না।

সবাই আশা করে একটি নিরপেক্ষ সুষ্ঠু নির্বাচন। অবাধ গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সব থেকে বেশি প্রয়োজন। এটা করতে পারলে বর্তমান নির্বাচন কমিশন যেমন জগদ্বিখ্যাত হবে, কারচুপি করলে কতটা নিন্দিত হবে কেউ কল্পনাও করতে পারে না। সত্যিকথা বলতে গেলে নির্বাচন কমিশন এখনো দেশবাসীর তেমন আস্থা কুড়াতে পারেনি। তারপর সেদিন হঠাৎই নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানমের মন্তব্য সবাইকে হতাশ করেছে, ‘আমাদের দেশে ১০০ শতাংশ নির্বাচন সুষ্ঠু হবে এটা বলা যাবে না। এটা পৃথিবীর কোনো দেশেই হয়নি। আমাদের দেশেও হবে না।’ এ মুহূর্তে তার এ মন্তব্য দেশবাসীকে ভীষণ পীড়া দিয়েছে এবং নির্বাচন কমিশনকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। অনেক আশা করে নির্বাচন কমিশনে একজন মহিলা সদস্যের প্রস্তাব করেছিলাম। আরও যেন কোন দল কমিশনে একজন মহিলা কমিশনারের প্রস্তাব করেছিল। জেলা জজ কবিতা খানম নির্বাচন কমিশনার হওয়ায় আমরা বেশ খুশি ও আশান্বিত হয়েছিলাম। কিন্তু ইদানীং তার দু-একটি কথা আমাদের বড় বেশি উদ্বিগ্ন করেছে। সামনে আর মাত্র কয়েকটা দিন। আশা করব নির্বাচন কমিশন আইনের দ্বারা বিবেকের দ্বারা পরিচালিত হবে, কারও মুখ দেখে নয়।

এখন সবকিছু নির্বাচন কমিশনের হাতে। নির্বাচন কমিশন যে নিরপেক্ষ ও দক্ষ তা এখনো প্রমাণ করতে পারেনি। আরও মজার ব্যাপার, ২৩ ডিসেম্বর থেকে নির্বাচন পিছিয়ে ৩০ ডিসেম্বর নিয়েছেন। খুবই ভালো কথা। কিন্তু এই এক সপ্তাহ পেছানো হয়েছে ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর অনুরোধ আর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব ওবায়দুল কাদেরের অনাপত্তির কারণে। আমরা ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচন আরও তিন সপ্তাহ পিছিয়ে দিতে অনুরোধ করেছিলাম। কমিশন বলেছিল বিচার-বিবেচনা করে দেখবে। আমরা বেরিয়ে আসার দেড় ঘণ্টা পর এইচ টি ইমামের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দল গিয়েছিল। আলাপ-আলোচনা শেষে এইচ টি ইমাম বলেছিলেন, তিন সপ্তাহ তো দূরের কথা এক ঘণ্টাও পেছানো যাবে না। নির্বাচন কমিশন তাই করেছে। এতে মানুষের মধ্যে ধারণা জন্মেছে, তারা ভাবছে বর্তমান নির্বাচন কমিশন সরকারের বশংবদ।

লেখক : রাজনীতিক

www.ksjleague.com

সর্বশেষ খবর