মঙ্গলবার, ২০ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

নির্বাচনে সবাই আছেন শিক্ষকরা নেই

ড. শেখ আবদুস সালাম

নির্বাচনে সবাই আছেন শিক্ষকরা নেই

কয়েক সপ্তাহ ধরে বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক প্রকার নির্বাচনী হাওয়া বইছে। গেল বছরগুলোয় ক্ষমতাসীন দলের একক আধিপত্য ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের প্রবল ধারা বর্তমান থাকলেও রাজনীতির ঈশান কোণে সব সময় যেন খ- খ- কিছু কালো মেঘের জমাটবদ্ধতা লেগে ছিল। জাতীয় নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক জোট ও দলের আলোচনা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সেই মেঘ আস্তে আস্তে কেটে যেতে শুরু করেছে। দীর্ঘদিন পর বাংলাদেশের রাজনীতির অঙ্গনে এখন এক ধরনের ফেসটিভ বাতাস বইতে শুরু করেছে। আশা করি ভবিষ্যতে যেন এমন অবস্থাই বিরাজ করে। বাংলাদেশ তথা ভারতীয় উপমহাদেশে রাজনৈতিক সভা-সংগঠনের মধ্য দিয়ে কাঠামোগত রাজনৈতিক কর্মকা- শুরু হয় ১৮৮৫ সালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে। সে সময় ছিল ব্রিটিশ শাসনামল। দীর্ঘ প্রায় ২০০ বছরের ব্রিটিশ শাসনামলের বিরুদ্ধে মানুষের মধ্যে জন্ম নেওয়া ক্ষোভ থেকে আস্তে আস্তে তাদের মধ্যে এক ধরনের রাজনৈতিক ও স্বদেশি চেতনা তৈরির মধ্য দিয়ে কংগ্রেসের জন্ম হয়। এটিই ছিল ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথম রাজনৈতিক প্ল্যাটফরম। জন্ম নেওয়ার পর থেকে কংগ্রেসের প্রধান লক্ষ্য হয়ে ওঠে ভারতীয়দের রাজনৈতিকভাবে সংগঠিত করা এবং ইংরেজ শাসন থেকে ভারতবর্ষকে মুক্ত করে এ অঞ্চলে ভারতীয়দের শাসনব্যবস্থা কায়েম করা। এ দলটির জন্মের মধ্য দিয়ে ক্রমন্বয়ে ভারতীয় স্বদেশি জাগরণ ও ব্রিটিশরাজ থেকে ভারতমুক্তির আকাক্সক্ষা প্রবল থেকে প্রবলতর হওয়ায় ব্রিটিশরাও সুচতুরভাবে ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল’ নীতি অনুসরণ করে তাদের শাসন প্রলম্বিত করার কৌশল গ্রহণ করে। এ কৌশলের অংশ হিসেবে বিশেষ করে হিন্দু-মুসলমানের সম্পর্কের মধ্যে ফাটল ধরাতে তারা ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ ঘোষণা এবং ১৯১১ সালে তা রদ করে। আর এসবের মধ্য দিয়ে পূর্ববঙ্গের মুসলমানদের মধ্যে ভবিষ্যতে সুযোগ-সুবিধা লাভের ব্যাপারে এক ধরনের আশাবাদের জন্ম হয়। ভারতীয় কংগ্রেসে থাকা মুসলমান নেতৃত্বের মধ্যে মুসলমানদের জন্য একটি আলাদা রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন তৈরি হয়। মুসলমান রাজনীতিকরা নিজেদের পৃথক রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আবির্ভাব ঘটাতে ১৯০৬ সালে মুসলমানদের স্বার্থ সংরক্ষণ ও বিকাশের লক্ষ্যে মুসলিম লীগ নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন এবং মুসলমানদের জন্য আলাদা পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠনের জন্য রাজনৈতিক কর্মকা- শুরু করেন। অতঃপর বিভিন্ন রকম সামাজিক ও রাজনৈতিক ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসনের অবসানের পর এ উপমহাদেশে ভারত ও পাকিস্তান নামক দুটি ভিন্ন স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়। পাকিস্তান রাষ্ট্র জন্মের পর ১৯৪৯ সালে টাঙ্গাইলের উপনির্বাচন অতঃপর যুক্তফ্রন্ট গঠন করে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক দলগুলো রাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থায় অংশ নেওয়ার লক্ষ্যে রাজনৈতিকভাবে সংঘবদ্ধ হয়ে ’৫৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে এবং তাতে তারা জয়লাভ করে।

বিভিন্ন কারণে যুক্তফ্রন্ট সরকারের পতনের পর ’৫৮ সালে দেশটিতে মার্শাল ল জারি করা হয়। তখন থেকে ’৭০ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানে রাষ্ট্রক্ষমতা পরিবর্তনের জন্য কোনো জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। সামরিক আইনের মধ্যে অনুষ্ঠিত ’৭০ সালের জাতীয় নির্বাচনে কেন্দ্র ও প্রদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া সত্ত্বেও পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী নির্বাচিত নেতৃত্বের হাতে রাষ্ট্রক্ষমতা হস্তান্তর করতে অস্বীকৃতি জানানোর ফলে শুরু হয় আমাদের মুক্তিযুদ্ধ। আর এর মধ্য দিয়ে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পেছনে দেশের সকল শ্রেণি-পেশার ও সাধারণ মানুষের ভূমিকা ছিল অপরিমেয়। এখানে বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকদের অবদান অনস্বীকার্য। স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর মাত্র দেড় বছরের মধ্যেই প্রণীত হয় বাংলাদেশের শাসনতন্ত্র। বঙ্গবন্ধুর সাড়ে তিন বছরের শাসনামলে অন্যতম শ্রেষ্ঠ অবদান হচ্ছে অত্যন্ত স্বল্প সময়ে দেশের জন্য একটি শাসনতন্ত্র প্রণয়ন। জনমতের ভিত্তিতে একটি রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য বাংলাদেশের শাসনতন্ত্র তখন এবং আজও তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকারের একটি অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপহার; এটি বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ভিত্তিদলিল। রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য এই অমূল্য দলিলটির পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু জাতিকে আরও একটি শ্রেষ্ঠ দলিল উপহার দিয়েছিলেন সেই ১৯৭৩ সালে। তিনি বিশ্বাস করতেন উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিশেষ করে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কোনোরকম হস্তক্ষেপ ছাড়া শিক্ষিত কমিউনিটি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হওয়া উচিত। তাঁর বিশ্বাস ছিল বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে যাঁরা কাজ করবেন, যাঁরা সেখানে পাঠদান করবেন তাঁরা হবেন উচ্চ মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষ। তাঁদের চিন্তা-চেতনা, দর্শন-রাজনীতি কোনো কিছুতেই কোনো ধরনের বাধা সৃষ্টি করা যাবে না। তাঁরা হবেন স্বচিন্তক, স্বনিয়ন্ত্রক। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা স্বাধীনভাবে চিন্তা করবেন এবং তাঁদের চিন্তা-ভাবনা শিক্ষার্থী ও দেশের মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেবেন। সে কারণে তিনি সে সময়ের চারটি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য (ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও জাহাঙ্গীরনগর) বিশ্ববিদ্যালয় অর্ডার প্রণয়ন করে তার অনুমোদন প্রদান করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য তখনই রাষ্ট্রপতির আদেশ ১১বলে The Dhaka University Order-1973 প্রণীত হয়। এ অর্ডারের বলে ঢাকাসহ ওই চারটি বিশ্ববিদ্যালয় স্বাধীনভাবে পরিচালিত হওয়ার সুযোগ পায়। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রশাসনিক ও শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় সরকারি হস্তক্ষেপ নীতিগতভাবে এবং দৃশ্যতও প্রায় শূন্যে নেমে আসে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আইনগতভাবে মূলত তখন থেকেই স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা ভোগ করে আসছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ডারবলে শিক্ষকরা শুধু শ্রেণিকক্ষে নয়, শ্রেণিকক্ষের বাইরে পাবলিক প্লø্যাটফরমে দাঁড়িয়েও তাঁদের স্বাধীন চিন্তা, স্বাধীন মত ব্যক্ত করতে পারেন। এই অর্ডারে প্রদত্ত সুযোগের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তারা যে কোনো রাজনৈতিক ইস্যু নিয়েও স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারেন, তাঁরা বৈধ যে কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য হয়ে রাজনৈতিক কর্মকান্ডেও অংশ নিতে পারেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অর্ডারের ৩৮ পৃষ্ঠায় ৫৬ অনুচ্ছেদে শিক্ষক ও কর্মকর্তা নিয়োগের সার্ভিস কন্ডিশনে (২ উপ-অনুচ্ছেদ) বলা আছে- The service conditions shall be determined without any prejudice to the freedom of the teacher or officer to hold any political views and to keep association with any lawful organization outside the University and shall be clearly stated in the contract. Provided that if a teacher or other salaried employee of the University seeks election as a Member of Parliament, he shall before the date for filing of nominations, resign from the service of the University. এখানে স্পষ্টত দেখা যাচ্ছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তারা চাইলে চাকরিতে থাকা অবস্থাতেই যে কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য হতে পারেন, রাজনৈতিক কর্মকান্ডে অংশ নিতে পারেন। এ অর্ডারবলে তাঁরা চাইলে চাকরি অবস্থায় থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য হওয়ার জন্য ছাড়া যে কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণও করতে পারেন। জাতীয় সংসদ সদস্য হওয়ার জন্য নির্বাচনে অংশ নিতে চাইলে তাঁকে চাকরি থেকে ইস্তফা দিতে হয়। শোনা যায়, বঙ্গবন্ধু সে সময় চাকরি রেখেই শিক্ষকরা কেউ চাইলে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন এমন মতের পক্ষে ছিলেন। কিন্তু তখন প্রভাবশালীদের কেউ কেউ ভেবেছিলেন এমনটি হলে তাঁদের অনেকেরই এমপি হওয়ার সুযোগ কমে যাবে। সে কারণে তাদের চাপ ও পরামর্শে শুধু এমপি নির্বাচনের জন্য শিক্ষক/কর্মকর্তাদের চাকরি ত্যাগের বিষয়টি অর্ডারে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। অতীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি ইস্তফা দিয়ে দু-একজন (যেমন অধ্যাপক মোশাররফ হোসেন) জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। তা ছাড়া সরাসরি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত থেকে সুনামের সঙ্গে শিক্ষকতা চালিয়ে গেছেন এমন শিক্ষক রয়েছেন প্রচুর। এর মধ্যে প্রয়াত অধ্যাপক ম. আখতারুজ্জামান, প্রয়াত অধ্যাপক রঙ্গলাল সেন, অধ্যাপক এ কে আজাদ চৌধুরী, অধ্যাপক দুর্গাদাস ভট্টাচার্য প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য।

বর্তমানে রাজনীতির চিত্র অনেকটা পাল্টে গেছে। সংসদে প্রতিনিধিত্বকারীদের পেশার চিত্র নিলে বোঝা যাবে কারা এখন রাজনীতি করছেন, কারা সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছেন। সেখানে উকিল, ডাক্তার, শিক্ষক এঁদের অংশগ্রহণ খুবই কম। দুঃখজনকভাবে এসব পেশার মানুষ সংসদে গিয়ে আজকাল কন্ট্রিবিউট করার সুযোগ পাচ্ছেন না বিধায় তাঁরা রাজনীতিতে অবদান রাখার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এঁরা অনেকে রাজনৈতিক দলের সদস্য, কর্মী, সমর্থক ইত্যাদি হয়ে ‘রাজনীতিবাজি’র কাজে যুক্ত হয়ে পড়ছেন ঠিকই কিন্তু আইনি বাধার কারণে সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন না। কয়েক মাস আগে আমি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলাম। সেখানে শুনেছি সাংবাদিকতা বিভাগের একজন অধ্যাপক গত বেশ কয়েক বছর ছুটি নিয়ে বিধানসভার সদস্য নির্বাচিত হয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেছেন। তিনি এখন আবার বিভাগে শিক্ষকতায় ফিরে এসেছেন। ভারতবর্ষে এমন অনেক উদাহরণ রয়েছে।

কিন্তু বাংলাদেশের চিত্র অন্যরকম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অর্ডার অনুযায়ী শিক্ষক ও কর্মকর্তারা চাকরিতে থাকা অবস্থায় রাজনীতিতে যুক্ত থাকতে পারবেন কিন্তু চাকরি ত্যাগ করে হলেও কেউ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে চাইলে তা পারবেন বলে মনে করার কোনো কারণ নেই। রাষ্ট্রপতির অর্ডার ১৫৫ অব ১৯৭২ অনুযায়ী The Representation of the People Order 1972 (as amended upto 2013) Gi 12 avivi wm Ges Gdঅনুচ্ছেদে উল্লেখ আছে-ধ person shall be disqualified for election as or for being, a member, if he is holding any office of profit in the service of the Republic or of a statutory public authority has resigned or retired from the service of the Republic or of any statutory public authority or of the defense service unless a period of three years has elapsed since the date of his resignation or retirement.সংশ্লিষ্টজনেরা মনে করেন, বর্তমানে বলবৎ আরপিওর এ ধারাটি করা হয়েছিল মূলত সরকারি চাকরিজীবী যাঁরা পদে থাকার সময় যথেষ্ট ক্ষমতাবান থাকেন এবং পদ থেকে অবসরে যাওয়া বা চাকরি ত্যাগের পরও তাঁরা ক্ষমতার জোরে ভোটারদের প্রভাবিত করার যোগ্যতা রাখেন তাঁদের কথা মাথায় রেখে এমন অবস্থা থেকে মুক্ত থাকতে তাঁদের ওপর এ ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়ে থাকতে পারে।

উল্লেখ্য, সরকারি চাকুরেরা চাকরি অবস্থায় কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য হওয়া বা কোনোরকম পলিটিক্যাল কার্যক্রমে যুক্ত হতে পারেন না। কিন্তু ১৯৭৩-এর আদেশবলে পরিচালিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক/কর্মকর্তারা চাকরিতে থাকা অবস্থাতেই যে কোনো বৈধ রাজনৈতিক দলের সদস্য হতে পারেন, রাজনৈতিক কার্যক্রমে অংশ নিতে পারেন। সে ক্ষেত্রে আরপিওর ১২ ধারাটি তাঁদের জন্য আদৌ প্রয়োগযোগ্য কিনা অথবা প্রয়োগযোগ্য হয়ে থাকলে তা কতটুকু যুক্তিযুক্ত সে বিষয়টি ভাবা দরকার। এ ব্যাপারে আমি ব্যক্তিগতভাবে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনে একাধিকবার চিঠি দিয়েছি তবে কোনো জবাব পাইনি। ’৭৩-এর আদেশে পরিচালিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা চাকরিতে থাকা অবস্থায় রাজনীতি করতে পারবেন (অথবা তাঁদের দিয়ে ‘রাজনীতিবাজি’তে অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে) কিন্তু সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে যেখানে তাঁরা রাজনীতিতে অবদান রাখার সুযোগ পাবেন সেই কাজটিতে আইন দ্বারা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে রাখা হবে এটি কোনোভাবে যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নয়। কাউকে রাজনীতি করার সুযোগ দিলে তাঁকে নির্বাচন করার সুযোগও দিতে হবে। নইলে সরকারি কর্মকর্তাদের মতো দুটোই বন্ধ করে দিয়ে সমতা প্রতিষ্ঠা করাই শ্রেয়। কেবল আরপিওর কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ছাড়া অন্য প্রায় সব পেশার মানুষ আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের কথা ভাবছেন অথচ চাকরিতে থেকে সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত শিক্ষকরা জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারছেন না। বিষয়টি সংশ্লি­ষ্ট সবাইকে ভেবে দেখা প্রয়োজন।

লেখক : অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

ই-মেইল : [email protected]

সর্বশেষ খবর