মঙ্গলবার, ২০ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

খেলাপি ঋণের পুনঃ তফসিল

এ নৈরাজ্যের ইতি ঘটুক

কারও পছন্দ হোক আর না হোক সত্যি কথাটা সরাসরি বলার ক্ষেত্রে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের জুড়ি নেই। অর্থমন্ত্রী তার তিক্ত অভিজ্ঞতার আলোকে বলেছেন, ব্যাংকাররাই ঋণখেলাপি তৈরি করছেন। খেলাপি ঋণ বার বার পুনঃ তফসিল করে তারা ঋণখেলাপিদের সুযোগ দিচ্ছেন। সন্দেহ নেই, দেশের ব্যাংকিং খাতের প্রধান সমস্যা এখন খেলাপি ঋণ। খেলাপি ঋণ সৃষ্টিতে সরকার নিয়ন্ত্রিত ব্যাংকগুলোয় রাজনৈতিকভাবে নিয়োগ দেওয়া পরিচালকরা যেমন দায়ী, তেমন দায়ী সরকারি-বেসরকারি সকল পর্যায়ের পরিচালক ও ব্যাংকার। ঋণখেলাপিদের সুহৃদের অভাব না থাকায় খেলাপি ঋণ নামের আপদকে কিছুতেই ঠেকানো যাচ্ছে না। তাদের বিরুদ্ধে সরকারের কর্তাব্যক্তিদের হুম্বিতম্বি বজ্র আঁটুনি ফসকা গেরোতে পরিণত হচ্ছে। দেশের খেলাপি ঋণের পরিমাণ লাখ কোটির অঙ্ক ছাড়াতে চলেছে। দেশে মোট বিতরণ করা ঋণের ১১ শতাংশই খেলাপি। তা আদায় করতে না পারায় ব্যাংকগুলো নতুন ঋণ দিতে পারছে না। মুনাফায় ধস নামায় বেশকিছু ব্যাংক গভীর সংকটে পড়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ না থাকায় খেলাপি ঋণের পাহাড় গড়ে উঠছে ও পরিস্থিতি চলে যাচ্ছে নিয়ন্ত্রণের বাইরে। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর অবস্থা একসময় মোটামুটি ভালো থাকলেও সেখানেও চলছে হরিলুটের ঘটনা। পরিচালকরা নিজেদের মধ্যে ঋণ ভাগাভাগি করায় বাড়ছে খেলাপির সংখ্যা। সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে আছে নতুন প্রতিষ্ঠিত ব্যাংকগুলো। মনে হচ্ছে এ ব্যাংকগুলো প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে লুটেপুটে খাওয়ার জন্য। ব্যাংকিং খাতের বেপরোয়া ঋণখেলাপির কারণে দেশে শিল্প স্থাপনে বড় আকারের ঋণ পাওয়া দায় হয়ে পড়েছে। বিনিয়োগ স্থবিরতায় কর্মসংস্থানের সুযোগও সীমিত হয়ে পড়ছে। খেলাপি ঋণ আদায়ের প্রক্রিয়ায় যারা জড়িত তার একাংশের মধ্যে সততার সংকট থাকায় হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করেও লুটেরারা নিজেদের নিরাপদ ভাবতে পারছে। সরকারের সুনামও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ছে ব্যাংক লুটেরা দস্যুদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা না নিতে পারায়। ব্যাংকে যে টাকা সঞ্চিত থাকে তার মালিক সাধারণ মানুষ। এ অর্থ লুটপাট বন্ধে সরকারকে অবশ্যই কড়া হতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর