শনিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
ধর্মতত্ত্ব

রসুলের অনুসরণ মুমিনের দায়িত্ব

মুফতি আমজাদ হোসাইন হেলালী

রসুলের অনুসরণ মুমিনের দায়িত্ব

এ পৃথিবীতে রব্বুল আলামিনের অগণিত মাখলুকাত আছে। তার মাঝে সর্বশ্রেষ্ঠ মানবজাতি। আল্লাহ সৃষ্টিকুলের সবই মানবতার কল্যাণে সৃষ্টি করেছেন। আর মানুষ সৃষ্টি করেছেন একমাত্র তাঁর ইবাদত-বন্দেগি করার জন্য। প্রতিটি মাখলুকাত তার ভাষায় আল্লাহর জিকির বা স্মরণ করে। গাছের পাতা ও পানির মাছ পর্যন্ত আল্লাহর জিকির থেকে গাফিল নয়। এখানে লক্ষণীয় বিষয় হলো, পৃথিবীর সবকিছুই মানবকল্যাণে সৃষ্টি হয়েছে এই কথাটি শত পার্সেন্ট সত্য। যখন মানুষ যথাযথভাবে স্বীয় সৃষ্টির উদ্দেশ্য পালন করবে, তার নিজের সৃষ্টির উদ্দেশ্যের প্রতি গুরুত্বারোপ করবে এবং মানবজীবনের সব ক্ষেত্রে তার সৃষ্টির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য মুখ্য বিষয় হবে তখনই সব সৃষ্টি মানবতার সেবায় লুিটয়ে পড়বে। এক কথায় সব সময় আল্লাহর ইবাদতে মশগুল থাকা, এটাই মানবজীবনের প্রধান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। তবে মানবজাতি যদি নিজের সৃষ্টির উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য ভুলে যায়, আল্লাহর নাফরমানিতে লিপ্ত হয়ে কুফর ও শিরক করে, তখন নিকৃষ্ট জাতিতে পরিণত হয়ে যাবে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে নিকৃষ্ট জাতিতে পরিণত হওয়া থেকে হেফাজত করুন। জিন ও ইনসান কীভাবে প্রাত্যহিক কাজকর্ম আনজাম দেবে, কীভাবে সে ২৪ ঘণ্টা আল্লাহর হুকুম আদায় করবে তার জন্য আল্লাহ পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন অসংখ্য নবী-রসুল। তারই ধারাবাহিকতায় পৃথিবীতে আগমন করলেন সর্বশেষ নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। অন্যান্য নবী ও রসুলের মতো তিনিও মানুষকে শেখালেন ইসলামী জীবনাচারের সবকিছু। কীভাবে মানুষ আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করবে, তাদের জন্য দুনিয়া ও পরকালে কল্যাণ সাধিত হবে তা তিনি যথার্থরূপে উম্মতকে শিক্ষা দিয়েছেন। বাস্তবিক বিষয়টি মূলত তাই। জিন-ইনসান যদি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাতলানো মত ও পথ অনুসরণ-অনুকরণ করে দৈনন্দিন কাজকর্ম-গুলো তাঁর তরিকায় সম্পাদন করে তবে জীবনের সব ক্ষেত্রেই সুখ-শান্তি আসবে। বান্দা আল্লাহর সন্তুষ্টি পাবে। আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘রসুল যা তোমাদের জন্য নিয়ে এসেছেন তথা আদেশ করেছেন তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাকো আর আল্লাহকে ভয় কর, নিশ্চয় আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা।’ সূরা হাশর, আয়াত ৭। আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘বলুন! যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসো তাহলে আমাকে অনুসরণ কর, যাতে আল্লাহও তোমাদের ভালোবাসেন এবং তোমাদের পাপ মার্জনা করে দেন। আল্লাহ হলেন ক্ষমাকারী, দয়ালু।’ সূরা আলে ইমরান, আয়াত ৩১। সুতরাং যখন আমার জীবনের সবকিছু হবে নবীর বাতলানো তরিকায়, অর্থাৎ আমার পানাহার হবে নবীর অনুকরণে, আমার শয়ন-জাগরণ হবে নবীর শেখানো নিয়মে, আমার আগমন-নির্গমন হবে নবীর বাতলানো পথে, আমার কথাবার্তা, ওঠা-বসা হবে নবীর আদর্শে, আমার চালচলন, আচার-আচরণ হবে নবীর শেখানো পন্থায়, তথা আমার প্রতিটি কাজ হবে নবীর স্বভাব-চরিত্রের আলোকে, তখন একাধারে নবীর সুন্নত অনুসরণের পুণ্য যেমন অর্জিত হবে, তেমনি মানব সৃষ্টির লক্ষ্য-উদ্দেশ্য তথা ইবাদত-বন্দেগি ও আল্লাহর সন্তুষ্টিও অর্জিত হবে। এতে স্পষ্ট হয়ে গেল, পৃথিবীতে কোনো ব্যক্তি যদি নিজের প্রকৃত মালিক ও স্রষ্টার ভালোবাসার দাবিদার হয় এবং তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনই একমাত্র লক্ষ্য-উদ্দেশ্য হয়, তবে অবশ্যই তার প্রতিটি কর্মকে নবীর আনুগত্যের কষ্টিপাথরে যাচাই-বাছাই করতে হবে। কেননা যে ব্যক্তি রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যত বেশি আনুগত্য ও অনুসরণে গুরুত্বারোপ করবে এবং তাঁর আনীত দীনের আলোকে স্বীয় জীবনপথের মশাল বানাবে, সে ব্যক্তিই প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর ভালোবাসার দাবিদার হতে পারবে। আর যে ব্যক্তি তার দাবিতে যতটা সাচ্চা হবে তাকে নবীর অনুসরণে তত বেশি মজবুত ও প্রস্তুত থাকতে হবে।

প্রিয় পাঠক! আমরা যদি নবীর সিরাতের প্রতি লক্ষ্য করি তাহলে অবশ্যই দেখতে পাব, তিনি কীভাবে প্রাত্যহিক কাজকর্ম সম্পাদন করেছেন। শিশু প্রতিপালন থেকে সবকিছুর সেবা কীভাবে করতে হয় এবং মানবজীবনে কীভাবে সুখ-শান্তি অর্জিত হয়, তার সবকিছুই তিনি বিস্তারিত বাতলে দিয়েছেন। আমাদের দায়িত্ব শুধু জানা ও বাস্তবায়ন করা। আমাদের সবাইকে প্রকৃত আশেকে রসুল হতে হবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত প্রকৃ-ত মুমিন হতে পারবে না যতক্ষণ না তোমাদের কাছে তোমাদের নিজ পিতা-মাতা ও সন্তান-সন্ততি থেকে আমি প্রিয় না হব।’ অর্থাৎ সবকিছু থেকে অনেক বেশি নবীর ভালোবাসা অন্তরে থাকতে হবে তাহলেই প্রকৃত আশেকে রসুল হওয়া যাবে। প্রকৃত আশেকে রসুল হতে হলে শুধু মুখে স্বীকার করলেই হবে না। বরং নিজের জীবনের সব ক্ষেত্রে তার বাস্তবায়ন অবশ্যই করতে হবে। এমন যাতে না হয় আরামের সময় নবীর সুন্নতের অনুসরণ-অনুকরণ করলাম ও আর কষ্টের সময় তা ভুলে গেলাম তাহলে প্রকৃত আশেকে রসুল হওয়া যাবে না। মহান রব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে জীবনের সব ক্ষেত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নতের অনুকরণ-অনুসরণ করার তাওফিক দান করুন।।

 

লেখক : মুহাদ্দিস, মুফাসসির খতিব ও টিভি উপস্থাপক

সর্বশেষ খবর