রবিবার, ২ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

প্রিয় নবীর আনন্দ-বিনোদন

মুফতি মুহাম্মদ আল আমিন

প্রিয় নবীর আনন্দ-বিনোদন

রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আচার-ব্যবহার ছিল অপূর্ব। সাহাবিদের প্রতি তাঁর ভালোবাসা ছিল অনেক গভীর। আন্তরিকতায় পূর্ণ। সাহাবি বলা হয় এমন সৌভাগ্যবান ব্যক্তিকে যিনি রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ইমানের সঙ্গে স্বচক্ষে দেখেছেন বা রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে দেখেছেন। কারণ কোনো সাহাবি এমনও ছিলেন যিনি অন্ধ। রসুলকে দেখেননি। তবে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে দেখেছেন। সাহাবি শব্দের বহুবচন সাহাবা। প্রত্যেক সাহাবি মনে করতেন রসুল তাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেন। সর্বাধিক মহব্বত করেন। ভাবতেন তিনি প্রিয় নবীর সবচেয়ে বেশি প্রিয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবিদের যেমন আদেশ-উপদেশ দিতেন, তেমন আনন্দ-বিনোদনমূলক আচার-ব্যবহারও করতেন। কৌতুক করতেন। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত। একবার রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে লক্ষ্য করে বললেন, ‘হে দুই কানবিশিষ্ট ব্যক্তি।’ আবু দাউদ, তিরমিজি। এখানে লক্ষণীয়, সব মানুষের কান দুটি। তবু ভালোবাসার আধার প্রিয় নবী স্নেহের আনাসকে ‘দুই কানবিশিষ্ট’ বলে বিনোদন করলেন। তার হৃদয়ে আনন্দ দিলেন। হজরত আনাস (রা) আরও বলেন, ‘নবী করিম আমাদের সঙ্গে খুবই আন্তরিকতাপূর্ণ ব্যবহার করতেন। এমনকি তিনি একবার আমার ছোট ভাইকে বললেন, হে আবু উমাইর! তোমার ছোট বুলবুলিটি কোথায় গেল? তার একটি ছোট বুলবুলি পাখি ছিল, যা নিয়ে সে খেলা করত। পাখিটি মারা গিয়েছিল।’ বুখারি, মুসলিম। উভয় জগতের সরদার রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক সামান্য বুলবুলি পাখির খবর নেওয়া শুধুই আনন্দ দেওয়ার জন্য। হজরত আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার সাহাবিরা বললেন, ইয়া রসুলুল্লাহ! আপনি আমাদের সঙ্গে কৌতুকপূর্ণ কথাবার্তা বলেন কি? তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ। তবে আমি যা বলি সত্যই বলে থাকি।’ তিরমিজি। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত। একবার এক ব্যক্তি রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে যানবাহন হিসেবে একটি সওয়ারি চাইলে তিনি (কৌতুকচ্ছলে) বললেন, আচ্ছা আমি তোমাকে একটা উটের বাচ্চা প্রদান করব। এতে সে বলল, উটের বাচ্চা দিয়ে আমি কী করব? (অর্থাৎ আমি চেয়েছি প্রাপ্তবয়স্ক উট, আর আপনি বলছেন উটের বাচ্চা দেবেন!) জবাবে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক উট তো তার মায়ের বাচ্চা। তিরমিজি, আবু দাউদ। হজরত আনাস আরও বলেন, একবার নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক বৃদ্ধা মহিলাকে বললেন, কোনো বৃদ্ধা মহিলা বেহেশতে যেতে পারবে না। তখন সেই বৃদ্ধা জিজ্ঞাসা করলেন কেন, তা কী কারণে? উক্ত বৃদ্ধা কোরআন পাঠ করেছিলেন। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি কি কোরআনে এ আয়াতটি পাঠ করনি? যার অর্থ ‘আমি তাদের (অর্থাৎ স্ত্রী লোকদের) বেহেশতে দ্বিতীয়বার সৃষ্টি করব এবং তাদের (তখন) কুমারী বানাব।’ রাজিন। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত। একবার নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাজারে আগমন করলেন। রসুলকে মহব্বতকারী জাহের নামে এক গ্রাম্য সাহাবি তথায় তার পণ্য বিক্রি করছিলেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অগ্রসর হয়ে জাহেরকে তার পেছন দিক থেকে জড়িয়ে ধরলেন। তিনি রসুলকে দেখতে পেলন না; সুতরাং তিনি বলে উঠলেন, কে আপনি? আমাকে ছেড়ে দিন। অতঃপর তিনি চোখের পাশ দিয়ে দেখলেন যে, তিনি রসুল। তখন তিনি (আনন্দে) তার পিঠ রসুলের বুকের সঙ্গে মিলিয়ে রাখলেন (এবং আরও বেশিক্ষণ এভাবে থাকার চেষ্টা করলেন)। এদিকে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতে লাগলেন, এই গোলামটিকে কে খরিদ করবে? তখন জাহের বললেন, ইয়া রসুলুল্লাহ! আল্লাহর কসম, আপনি আমাকে সামান্য মূল্যের বস্তু হিসেবে পেয়েছেন কি? তখন রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমার কাছে সামান্য মূল্যের বস্তু হলেও আল্লাহর কাছে তা নয়। শরহে সুন্নাহ।

লেখক : খতিব, সমিতি বাজার মসজিদ, নাখালপাড়া, ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর