সোমবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
আলী ইমাম মজুমদার

ভোটারের মনের শঙ্কা দূর করতে হবে

ভোট উৎসব নিয়ে সারাদেশে চলছে আলোচনা। ভোটের দিন কেমন পরিবেশ থাকবে? সাধারণ মানুষ ভোট দিতে কেমন পরিবেশ তৈরি করবে নির্বাচন কমিশন। এসব প্রশ্নের জবাব খুঁজতে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক আরাফাত মুন্না কথা বলেছেন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার দুটি তুলে ধরা হলো

ভোটারের মনের শঙ্কা দূর করতে হবে

সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেছেন, বাংলাদেশে ভোট আসলেই প্রার্থীরা যেমন সক্রিয় হন, ভোটাররাও কিন্তু তেমনি সচেতন হন। একই সঙ্গে ভোটারদের মনে একটা শঙ্কাও তৈরি হয় তারা নিজের ভোটটা নিরাপদে নিজের পছন্দের প্রার্থীকে দিতে পারবেন কিনা? একটি ভালো নির্বাচনের জন্য সবার আগে ভোটারদের মনের এই শঙ্কা দূর করতে হবে। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন তিনি।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতির বিষয়ে তিনি বলেন, নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি এখনো সমান্তরাল অবস্থানে নেই। এখনো নির্বাচনী পরিবেশ সরকারদলীয় প্রার্থীদের একক অনুকূলেই রয়েছে। সব প্রার্থী সমান সুযোগ পাচ্ছেন না। তিনি আরও বলেন, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রথমেই বর্তমান জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়া উচিত ছিল। সংসদ ভেঙে দিতে কোনো সাংবিধানিক বিধিনিষেধও নেই। নির্বাচন কমিশনকে সবার সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।

নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে আলী ইমাম মজুমদার বলেন, প্রার্থীদের আচরণবিধি ভঙ্গের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে কঠোর ভূমিকা নিতে হবে। তবে তারা এটা করতে পেরেছে বলে মনে হয় না। আমরা বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেখেছি মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় বড় বড় মিছিল নিয়ে গিয়েছেন প্রার্থীরা। এখানে অনেক ভিআইপি প্রার্থীও ছিলেন। আমরা বলি না, এসব ভিআইপির বিরুদ্ধে বড় ধরনের কোনো ব্যবস্থা নিতে, তবে নির্বাচন কমিশন অন্তত অসন্তোষ প্রকাশ করতে পারত। বা তাদের চিঠি দিয়ে সতর্কও করতে পারত। কমিশন কিছুই করেনি। স্থানীয় পর্যায়ে এসব কাজ করার কথা ছিল রিটার্নিং অফিসারের। তারাও এ ধরনের কোনো উদ্যোগ নেননি।

সুন্দর নির্বাচনের জন্য সরকারি কর্মকর্তা বা পুলিশের ভূমিকাও নিরপেক্ষ থাকতে হবে বলে মনে করেন সাবেক এ মন্ত্রিপরিষদ সচিব। তিনি বলেন, যে কোনোভাবে পুলিশ প্রশাসন বা সিভিল প্রশাসনের ভূমিকা নিরপেক্ষ থাকতে হবে। তারা যেহেতু প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী তাদের অবশ্যই নিরপেক্ষ থাকতে হবে। ভোটাররা যেন নিজের ভোট ঠিকভাবে দিতে পারে এটাও প্রশাসনকেই নিশ্চিত করতে হবে। নির্বাচনে ভোটারদেরও কিছু ভূমিকা থাকে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অতিউৎসাহী ভোটার যারা কোনো দল বা প্রার্থীর সমর্থক, তারা কোনো অসুবিধা না করলেই ভোটের পরিবেশ শান্তিপূর্ণ থাকবে। আমরা যারা সাধারণ ভোটার তারা সব সময়ই লাইন দিয়ে গিয়ে নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে আসি। সে ক্ষেত্রে ভোটের পরিবেশও অনুকূলে থাকতে হবে। আমি যে কেন্দ্রে ভোট দেব যদি শুনতে পাই সকাল থেকেই সেখানে মারামারি হচ্ছে তাহলে তো আমি ভোট দিতে যাব না। সে ক্ষেত্রে ভোটের পরিবেশটা শান্তিপূর্ণ রাখতে হবে। সব ভোটারকেই কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ভোট আসলেই সবাই নড়েচড়ে বসেন। প্রার্থীরা নিজেদের কর্মকাণ্ড বাড়িয়ে দেন। ভোটারদের ঘরে ঘরে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তেমনই ভোটারও কিন্তু আগের চেয়ে সচেতন হন। প্রার্থীদের বিষয়ে মূল্যায়ন করতে থাকেন। প্রার্থীরা আচার-আচরণ ও অতীত কার্যক্রম পর্যালোচনা করতে থাকেন। তিনি বলেন, বর্তমানে ভোটারদের মধ্যে ভোট আসলেই একটা প্রশ্ন চলে আসে, ভোট দিতে পারবেন কিনা? একটা শঙ্কা চলে আসে। এই শঙ্কাটা দূর করতে হবে। একজন ভোটার তার নিজের ভোট সঠিকভাবে দিতে পারবেন এই নিশ্চয়তা দিতে হবে। ভোট দেওয়ার আগে ও পরে ভোটার নিরাপদে থাকবেন, এমন নিশ্চয়তা দেওয়া সম্ভব হলেই একটা ভালো নির্বাচন করা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।

সর্বশেষ খবর