তিন পার্বত্য জেলায় অশান্তির দাবানল জ্বলে উঠেছিল ’৭৫-পরবর্তী অবৈধ শাসকদের শাসনামলে। দেশের এক-অষ্টমাংশ আয়তনের এই জনপদে বিদ্রোহের পতাকা উড়িয়েছিল জনসংহতি সমিতি নামের পাহাড়ি সংগঠন। এ বিদ্রোহ পাহাড়ি জনপদের শান্তি কেড়ে নেয়। প্রাণ হারায় শত শত মানুষ। ২১ বছর আগে ১৯৯৭ সালে পার্বত্য শান্তি চুক্তির মাধ্যমে যে বিদ্রোহের অবসান ঘটে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, শান্তিচুক্তির সিংহভাগ ধারা বাস্তবায়িত হওয়া সত্ত্বেও পার্বত্য এলাকায় শান্তি ফিরে আসেনি। তিন পার্বত্য জেলার উন্নয়নে সরকারের নানামুখী পদক্ষেপ ওই এলাকার অধিবাসীদের জীবন মানে ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটালেও শান্তি এখনো রয়েছে অধরা। অশান্তির প্রতিভূ বিভিন্ন পাহাড়ি সংগঠনের সশস্ত্র ক্যাডারদের চাঁদাবাজি ও প্রভাব বিস্তারের অপতৎপরতা কাক্সিক্ষত শান্তি ফিরে না আসার জন্য দায়ী। আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর পারস্পরিক বিরোধ ও অব্যাহত সন্ত্রাসে সাধারণ মানুষের জীবন বিপন্ন হয়ে পড়ছে। শান্তিচুক্তির অধিকাংশ ধারার বাস্তবায়ন হলেও ভূমি জরিপসহ কয়েকটি ইস্যুতে সরকার ও জনসংহতি সমিতির মধ্যে দূরত্ব বাড়ায় বিষয়গুলো এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে। নিজেদের স্বার্থের দ্বন্দ্বে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরকারী জনসংহতি সমিতি ভেঙে চার সংগঠনের পরিণত হয়েছে। তাদের প্রভাবিত এলাকায় সাধারণ মানুষ জিম্মি অবস্থায় জীবনযাপন করছে। চুক্তি স্বাক্ষরের পর থেকে এ পর্যন্ত তিন পার্বত্য জেলায় খুন হয়েছেন প্রায় ২ হাজার ২৫০ জন। অপহৃত হয়েছেন ২ হাজার ৪০২ জন। নিহতদের এক বড় অংশ বাঙালি। তারা খুন হয়েছেন সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ও চাঁদাবাজির জের ধরে। অন্যদিকে পাহাড়িদের অধিকাংশই নিহত হয়েছেন কোন্দলের কারণে। মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর পার্বত্য শান্তিচুক্তি অনুযায়ী এক ব্রিগেড সৈন্যসহ ৩৫টি অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহার করেছে। কিন্তু শান্তিচুক্তির মূল এজেন্ডা জনসংহতি সমিতিসহ সশস্ত্র গ্রুপগুলো অত্যাধুনিক অস্ত্র সংগ্রহ করে সংঘাতে ইন্ধন জোগাচ্ছে। পাহাড়ি সংগঠনগুলোর অস্ত্রের মহড়া অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে। পার্বত্য তিন জেলায় ১৫ লাখ অধিবাসীর জন্য ন্যায্য শান্তি নিশ্চিত করতে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তৎপর হতে হবে। ভূমি সংক্রান্ত বিরোধের দ্রুত নিষ্পত্তিও প্রত্যাশিত।