বুধবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

ইসলাম অন্য ধর্মাবলম্বীদের অধিকারকে সম্মান দেয়

মুহম্মাদ ওমর ফারুক

ইসলাম অন্য ধর্মাবলম্বীদের অধিকারকে সম্মান দেয়

ইসলাম অর্থ শান্তি। ইসলাম এমনই এক জীবনবিধান যেখানে অন্য ধর্মাবলম্বীদের অধিকারকেও সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আল কোরআন ও হাদিসের মূল শিক্ষা আল্লাহ ছাড়া কাউকে উপাস্য হিসেবে মানা যাবে না। কিন্তু যারা আল্লাহকে উপাস্য ভাবে না, তাদের উপাস্যের প্রতি গালি দেওয়া কিংবা বিরূপ মনোভাব দেখিয়ে অন্য ধর্মাবলম্বীদের কষ্ট দেওয়াকেও ইসলাম সমর্থন করে না। মুমিন হওয়ার জন্য কাউকে বাধ্য করাকেও সমর্থন করে না ঐশীবিধান।

আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আপনার রব ইচ্ছা করলে পৃথিবীতে যারা আছে সবাই ইমান আনত তবে কি আপনি মুমিন হওয়ার জন্য মানুষের ওপর জোরজবরদস্তি করবেন?’ (১০:৯০)।

অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহকে ছেড়ে যাদের তারা ডাকে তাদের তোমরা গালি দিও না, কেননা তারা সীমালঙ্ঘন করে অজ্ঞতাবশত আল্লাহকেও গালি দেবে।’ সূরা আনয়াম, আয়াত ১০৮।

পরমতসহিষ্ণুতার আদর্শ ছিলেন রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। এই আদর্শিক চেতনা থেকে কখনো তিনি এতটুকু বিচ্যুত হননি। একবার জনৈক বেদুইন নিজের প্রয়োজন পূরণের বিষয়ে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে আপত্তিকর আচরণ করলে তিনি বললেন, ‘তুমি আমার সঙ্গে যে ব্যবহার করেছ তার বদলা নেওয়া হবে।’ বেদুইন বললেন, ‘না’। তিনি বললেন, ‘কেন?’ বেদুইন বললেন, ‘কারণ আপনি মন্দের বদলা মন্দ দিয়ে নেন না’। এ কথা শুনে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হেসে ফেললেন এবং তার প্রয়োজন পূরণ কর দিলেন। ইবনে হিশাম।

ইয়েমেনের একটি প্রদেশের নাম নাজরান। প্রাচীন আরবের খ্রিস্টান পণ্ডিত ও পুরোহিতদের এটা ছিল এক বিখ্যাত কেন্দ্র। তারা একবার তাদের ৬০ জন বিখ্যাত ধর্মগুরুর এক প্রতিনিধি দল মদিনায় পাঠাল। তারা মসজিদে নববীতে যখন উপনীত হলেন তখন তাদের সান্ধ্য উপাসনার সময়। এদিকে মাগরিবের নামাজের সময়ও সমাগত। খ্রিস্টানরা তাদের প্রার্থনার অনুমতি চাইলেন। নামাজের সময় বলে উপস্থিত সাহবায়ে কিরাম আপত্তি তুললেন। কিন্তু পরমতসহিষ্ণুতার মূর্তপ্রতীক রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই আপত্তি কানে না নিয়ে মসজিদে নববীর অভ্যন্তরেই তাদের প্রার্থনার অনুমতি দিলেন। আশ্চর্যের বিষয়, একই মসজিদে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইমামতিতে কিবলার দিকে ফিরে মুসলমানরা নামাজে মশগুল হলেন আর একই সময়ে বিপরীত দিকে মুখ করে পাদরিরা নিমগ্ন হলেন তাদের প্রার্থনায়। পৃথিবীর ইতিহাসে বোধহয় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও পরমতসহিষ্ণুতার এ রকম নজির আর দ্বিতীয়টি নেই। ইবনে হিশাম।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক

সর্বশেষ খবর