বৃহস্পতিবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

অরিত্রীর আত্মহনন

কাঠগড়ায় দেশের শিক্ষাব্যবস্থা

ভিকারুননিসা নূন স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী অরিত্রী অধিকারীর আত্মহনন সারা জাতিকে যেমন বেদনাহত করেছে তেমন দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে দাঁড় করিয়েছে কাঠগড়ায়। অরিত্রীর বিরুদ্ধে পরীক্ষার হলে মোবাইল ফোন নেওয়া ও অসদুপায় অবলম্বনের অভিযোগ তুলে তাকে বের করে দেওয়া হয়। সোমবার তার বাবা-মাকে স্কুলে ডেকে নিয়ে ছাড়পত্র দেওয়ার হুমকি দেওয়ার পাশাপাশি তার বাবার সঙ্গে অপমানজনক আচরণ করা হয়। অপমানের লজ্জায় অরিত্রীর বাবা কেঁদেও ফেলেন। বাবার অপমানের প্রতিক্রিয়া হিসেবেই সে বাসায় গিয়ে আত্মহত্যা করে। অরিত্রীর বিরুদ্ধে পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের অভিযোগ করা হলেও তা কতটা সত্য সংশয়ের ঊর্ধ্বে নয়। পরীক্ষা হলে মোবাইল ফোন নেওয়া নিষিদ্ধ, সে তা ভঙ্গ করেছে এটি খুবই স্পষ্ট। কিন্তু টেবিলে মোবাইল ফোন রেখে কেউ নকল করবে এটি খুব বেশি গ্রহণযোগ্য নয়। শিক্ষার্থীদের যে কোনো বিষয়ে কর্তৃপক্ষ অভিভাবকদের ডেকে পাঠাতে পারেন। কিন্তু তাদের সঙ্গে অপমানজনক আচরণ করা শিক্ষকসুলভ মনোভাবের পরিচয় নয়। ভিকারুননিসা নূন স্কুল দেশের মানসম্মত স্কুলগুলোর একটি। একমাত্র মেধাবীরাই এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায়। প্রশ্ন হলো, মেধাবী শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অসদুপায়ের পথ বেছে নেবে কেন? কেউ বিচ্ছিন্নভাবে বেছে নিলেও তার সঙ্গে কি এমন আচরণ করতে হবে যাতে সে আত্মহননের পথ বেছে নেয়! হাই কোর্টের দুটি বেঞ্চ তাদের পৃথক আদেশে অরিত্রীর আত্মহত্যার ঘটনাকে হৃদয়বিদারক ও বাজে দৃষ্টান্ত বলে মন্তব্য করেছে। শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা প্রতিরোধের উপায় নির্ণয়ে একটি কমিটিও গঠন করে দিয়েছে উচ্চ আদালত। আমরা অরিত্রী অধিকারীর আত্মহননের ঘটনায় দারুণভাবে মর্মাহত। আমাদের বিশ্বাস, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিকারগ্রস্ত পরিবেশের যাতে আর উদ্ভব না হয় তা নিশ্চিত করতে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিক্ষকদেরও কাউন্সেলিং প্রয়োজন। অরিত্রীর আত্মহননের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিশন দ্রুত এ বিষয়ে প্রতিবেদন দেবে এবং তাতে যারা দায়ী তাদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে এমনটিও আমরা দেখতে চাই।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর