শুক্রবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

আত্মহত্যার পরিণতি খুবই ভয়াবহ

যুবায়ের আহমাদ

আত্মহত্যার পরিণতি খুবই ভয়াবহ

সুখ-দুঃখ মিলেই জীবন। দুঃখের পরই আসে সুখ। কিন্তু দুঃখজনক হলো, সাময়িক দুঃখ দেখেই অনেকে হতাশ হয়ে আত্মহত্যার মতো জঘন্য অপরাধ করে বসে। অথচ হয়তো আল্লাহ তার দুঃখের পরই তার জন্য নির্ধারণ করে রেখেছিলেন সুখ। কিন্তু সে পর্যন্ত সে ধৈর্য ধারণ করেনি। চাকরি না পেয়ে, কোনো কাজে হতাশ হয়ে বা সামান্য কারণে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে। পত্রিকার পাতা খুললেই চোখে পড়ে আত্মহত্যার খবর। আমাদের দেশে আত্মহত্যার হার ক্রমেই বাড়ছে। ইসলামে আত্মহত্যা মারাত্মক অন্যায়। আত্মহত্যা তো দূরের কথা, মৃত্যু কামনা করাও জায়েজ নেই ইসলামে। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমাদের কেউ কখনো মৃত্যু কামনা করবে না। কারণ সে নেককার হলে হয়তো আরও বেশি নেক আমলের সুযোগ পাবে। আর বদকার হলে হয়তো তওবার মাধ্যমে আল্লাহর ক্ষমা ও সন্তুষ্টি লাভের সুযোগ পাবে।’ বুখারি। এ ছাড়া আত্মহত্যার ব্যাপারে আল কোরআনে রয়েছে সুস্পষ্ট নিধেষাজ্ঞা। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা নিজের হাতে নিজেদের জীবন ধ্বংসের দিকে নিক্ষেপ করো না।’ সূরা বাকারা, আয়াত ১৯৫। আত্মহত্যাকারী শুধু নিজের ওপরই জুলম করে না বরং তার পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজনকেও কষ্টে ফেলে। কখনো কখনো আত্মহত্যার কারণে অন্য লোকদেরও হয়রানির শিকার হতে হয়। পারিবারিক অশান্তি বা হতাশা থেকে বাঁচতে, দুঃখ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে যদি কেউ আত্মহত্যা করে তাহলে হয়তো দুনিয়ার সামান্য জীবনের হতাশা থেকে কোনোরকম সে নিজেকে ‘সরিয়ে’ নিতে পারল কিন্তু সে অন্যদের কষ্টে ফেলল এবং তার পরকালীন অনন্ত জীবনকে জাহান্নামের দিকে ঠেলে দিল। কারণ, আত্মহত্যাকারী জাহান্নামি হবে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা নিজেদের হত্যা করো না, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু এবং যে কেউ সীমা লঙ্ঘন করে অন্যায়ভাবে তা (আত্মহত্যা) করবে, তাকে আগুনে পুড়ব; এটা আল্লাহর পক্ষে সহজ।’ সূরা নিসা, আয়াত ২৯-৩০। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের একজন আহত হয়ে ব্যথা সহ্য করতে না পেরে একটি ছুরি দিয়ে নিজের হাত নিজেই কেটে ফেলে। রক্তক্ষরণের ফলে সে মারা যায়। সে ব্যক্তি সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, “আমার বান্দা নিজেকে হত্যা করার ব্যাপারে বড় তাড়াহুড়ো করে ফেলেছে। আমি তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিলাম”।’ বুখারি, মুসলিম। জাহান্নামে তাকে ভোগ করতে হবে ভয়ঙ্কর শাস্তি। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি নিজেকে পাহাড়ের ওপর থেকে নিক্ষেপ করে আত্মহত্যা করে, সে জাহান্নামের মধ্যে সর্বদা ওইভাবে লাফিয়ে পড়ে নিজেকে নিক্ষেপ করতে থাকবে। যে ব্যক্তি বিষপানে আত্মহত্যা করে, সেও জাহান্নামের মধ্যে সর্বদা ওইভাবে নিজ হাতে বিষপান করতে থাকবে (বিষপানের কষ্ট সে অনুভব করবে)। আর যে কোনো ধারালো অস্ত্র দ্বারা আত্মহত্যা করে, তার কাছে জাহান্নামে সেই ধারালো অস্ত্র থাকবে, যা দ্বারা সে সর্বদা নিজের পেট ফুঁড়তে থাকবে।’ বুখারি, মুসলিম। আত্মহত্যা প্রতিরোধ করতে পারে সবুর বা ধৈর্য। আল কোরআনে বিভিন্ন জায়গায় আল্লাহ তাঁর বান্দাদের ধৈর্যের নির্দেশ দিয়েছেন। বিপদে ধৈর্য ধারণ করতে পারলেই তাদের দিয়েছেন দুনিয়া ও আখেরাতে কল্যাণের সুসংবাদ। বর্ণিত হয়েছে, ‘(হে রসুল!) আপনি ধৈর্যশীলদের শুভ সংবাদ প্রদান করুন।’ সূরা বাকারা, আয়াত ১৫৫। আল্লাহ আমাদের সমাজকে বিপদে-আপদে ধৈর্য ধারণ করে আত্মহত্যার মতো কবিরা গুনাহ থেকে হেফাজত করুন।

লেখক : জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত কারি ও খতিব, বাইতুশ শফীক মসজিদ, বোর্ডবাজার, গাজীপুর।

সর্বশেষ খবর