শিরোনাম
রবিবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

নবী (সা.)-এর সহজ সরল জীবন

মুফতি আমজাদ হোসাইন হেলালী

নবী (সা.)-এর সহজ সরল জীবন

রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  মদিনায় হিজরত করে এলেন। সাহাবায়ে কিরামের সহযোগিতায় নির্মাণ করলেন পবিত্র মসজিদে নববী। কিছুদিনের মধ্যে আল্লাহর রহমতে সমাপ্ত হলো মসজিদ তৈরির কাজ। মসজিদসংলগ্ন বাড়িটি ছিল সাহাবি হজরত হারিস বিন নুমান আনসারি (রা.)-এর। তিনি তাঁর বাড়িটি রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হাদিয়া হিসেবে দিয়েছিলেন। ওই বাড়িতেই রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মাহাতুল মুমিনিনের জন্য হুজরা তৈরি করেন। হিজরতের প্রায় সাত মাস পর হজরত সাওদা ও আয়েশা (রা.) মক্কা থেকে হিজরত করে মদিনায় আসেন। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় সর্বপ্রথম তাদের জন্য দুটি হুজরা বা কুটির তৈরি করেন। এর নির্মাণসামগ্রী ছিল খেজুর গাছের কাণ্ড, ডাল ও পাতা। ছাদ ও দেয়াল ছিল কাদামাটির প্রলেপ দেওয়া। ক্রমে নতুন বিবিরা তার বিবাহবন্ধনে আসার সঙ্গে সঙ্গে পৃথক পৃথক হুজরা তৈরি করে দেওয়া হয়। প্রতি হুজরাতেই একটি মাত্র দরজা ছিল। তাতে খুবই সাদামাটা পর্দা ছিল। এ হুজরাগুলোই ছিল রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিশ্রামাগার। যেসব কুটিরে তিনি বসবাস করেছেন অনেক সময় রাতের অন্ধকারে তাতে বাতি জ্বলারও কোনো ব্যবস্থা হয়নি। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাওমাতুল জান্দালের যুদ্ধে গমনের পর হজরত উম্মে সালমা (রা.) তাঁর হুজরাটি কিছুটা হালকা উন্নত করেছিলেন। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুদ্ধ থেকে ফিরে তা দেখে ফরমান, ‘হে উম্মে সালমা! একি করেছ?’ উত্তরে হজরত উম্মে সালমা (রা.) আরজ করেন, ‘ইয়া রসুলুল্লাহ! পর্দা রক্ষা ও আত্মরক্ষার ক্ষেত্রে এটি বেশি নিরাপদ হবে।’ জবাবে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘মুসলমানদের অর্থ অপচয়ের যতগুলো পথ রয়েছে তার মধ্যে চাকচিক্যময় ঘর নির্মাণ একটি।’ মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সহধর্মিণীরা জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এসব জীর্ণ কুটিরেই বসবাস করে গেছেন। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সর্বশেষ সহধর্মিণী হজরত উম্মে সালমার ইন্তে-কালের প্রায় তিন দশক পর হজরত উমর বিন আবদুল আজিজের রাজত্বকালে মসজিদে নববীর সংস্কার ও সম্প্রসারণ করা হয়। তখনো খেজুর শাখার তৈরি হুজরাগুলো তার স্ব-স্ব অস্তিত্ব নিয়ে মজুদ ছিল। বিশিষ্ট সাহাবি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, ‘আমি একদা রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে হাজির হলাম। এ সময় তিনি একটি মাদুরে শুয়ে আরাম করছিলেন। মাদুরের চিহ্ন তাঁর পবিত্র দেহে ফুটে উঠছিল। তা দেখে আমার কান্না রোধ করতে পারলাম না। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কী হলো! কাঁদছ কেন? আরজ করলাম, ইয়া রসুলুল্লাহ! কায়সার ও কিসরা মখমলের গদিতে নিদ্রা যায় আর আপনি এই মাদুরে! তিনি বললেন, এটা কান্নার কথা নয়। তাদের জন্য দুনিয়া আর আমাদের জন্য আখেরাত।’ হজরত ইমাম বাকের (রহ.) বলেন, হজরত আয়েশা (রা.)-কে কেউ জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আপনার ঘরে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিছানা কেমন ছিল? উত্তরে তিনি বললেন, চামড়ার ছিল। যার ভিতর খর্জুরের ছাল ভর্তি ছিল।’ একদা হজরত হাফসা (রা.)-কে কেউ জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আপনার হুজরায় রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিছানা কেমন ছিল? তিনি বললেন, একটি চট ভাঁজ করে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বসতে দিতাম। একদিন ভাবলাম এটাকে চার ভাঁজে ভাঁজ করে বিছিয়ে দিলে বসতে একটু আরাম হবে বইকি। আমি তাই করলাম। এতে রসুলুল্লাহ আমাকে সকালে জিজ্ঞাসা করলেন, রাতে আমার বসার জন্য কী বিছিয়েছিলে? আমি বললাম, সেই নিত্যদিনের বিছানা। কিন্তু তাকে চার ভাঁজ করে বিছিয়ে ছিলাম; যেন বসতে একটু আরাম হয়। তিনি বললেন, একে পূর্বাবস্থায় রেখে দাও। কারণ, এ আরাম রাতে আমাকে তাহাজ্জুদে বাধা দেয়।’ হজরত খাদিজা (রা.)-এর জীবদ্দশায় রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দ্বিতীয় কোনো স্ত্রী গ্রহণ করেননি। একবার হজরত আয়েশার সঙ্গে হজরত খাদিজা (রা.)-এর সম্পর্কে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আলোচনা হচ্ছিল। এক পর্যায়ে তিনি হজরত আয়েশা (রা.)-কে লক্ষ্য করে বললেন, ‘মানুষ যখন আমাকে মিথ্যাবাদী বলেছিল, তখন তিনি আমাকে সত্য বলে মেনে নিয়েছিলেন। যখন মানুষ কাফির ছিল তখন তিনি ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। যখন আমার কোনো সাহায্যকারী ছিল না তখন তিনি আমাকে সাহায্য করেছেন।’

লেখক : মুহাদ্দিস, মুফাসসির খতিব ও টিভি উপস্থাপক

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর