শনিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
প্রসঙ্গক্রমে

বাংলাদেশের উন্নয়নের দশক

অপূর্ব আজাদ

বাংলাদেশের উন্নয়নের দশক

বাংলাদেশের  জন্য গত এক দশক ছিল উন্নয়নের দশক। সরকারের নানা বিষয় নিয়ে সীমাবদ্ধতা থাকলেও এটি এখন সর্বজনস্বীকৃত বিষয়। গত এক দশকে বাংলাদেশ  অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যে দৃষ্টিকাড়া অগ্রগতি লাভ করেছে তা উদারভাবে স্বীকার করছে জাতিসংঘ, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকসহ সব আন্তর্জাতিক সংস্থা। বিশ্বের সব প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যমও এ ব্যাপারে একমত। যে বিশ্বব্যাংক সুদ ব্যবসায়ী একজন নোবেলজয়ীর উসকানিতে দুর্নীতির কল্পিত অভিযোগে পদ্মা সেতু তৈরিতে ঋণ দিতে অস্বীকার করেছিল, তারাও বলছে উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখন এক মডেল। পদ্মা সেতু নিয়ে তাদের অভিযোগ যে অসত্য তা প্রমাণিত হওয়ার পর বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশে এসে এ দেশের উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। বলেছেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখতেই তিনি এ দেশ সফরে এসেছেন।

বিশ্বের নেতৃস্থানীয় গণমাধ্যম লন্ডন-ভিত্তিক সাপ্তাহিক ‘দি ইকোনমিস্ট’ আওয়ামী লীগের দুই মেয়াদে বাংলাদেশে অভূতপূর্ব অগ্রগতি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে। একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ইকোনমিস্টের এ মন্তব্যকে ক্ষমতাসীন দলের জন্য একটি প্লাস পয়েন্ট হিসেবে দেখা হচ্ছে। অর্থ ও অর্থনীতিবিষয়ক বিশ্বনন্দিত এই সাপ্তাহিক বলছে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে যে অভূতপূর্ব অগ্রগতি হয়েছে সে কারণেই আসন্ন সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীনদের ‘কঠোরতার’ ওপর নির্ভর না করলেও চলবে। ‘নির্বাচনের আগে হঠাৎ নমনীয় ক্ষমতাসীন দল’ এ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বিরোধী রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংলাপকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সংলাপের বিষয়টিকে বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য ইতিবাচক বলেই মনে করছে ইকোনমিস্ট। বলা হয়েছে, কিছুদিন আগেও একাদশ সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মানুষের চিন্তাভাবনা অন্যরকম ছিল। অনেকেই মনে করছিল আগামী নির্বাচনে খুব বেশি ভোট পড়বে না। নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠবে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবারও যেভাবেই হোক নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করতে চাইবে। কিন্তু হঠাৎ করেই দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। পরিবর্তিত এই রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে মানুষ আশা করছে, ডিসেম্বরের নির্বাচন প্রতিযোগিতামূলক হতে পারে। যদিও ভোট সুষ্ঠু হবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় আছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, গত অক্টোবর দুটি বড় চমক নিয়ে এসেছে। মাসের মাঝামাঝি বড় দুই রাজনৈতিক দলের একটি বিএনপি তাদের দীর্ঘদিনের ডানপন্থি মিত্রদের বাদ দিয়ে তুলনামূলক উদার ছোট দলগুলোর সঙ্গে জোট করে। আইনজীবী ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন এই জোটের নাম জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এর চেয়েও বড় চমকটি আসে পরে। কঠোর অবস্থানে থাকা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ হঠাৎ করেই নমনীয় হয়। তারা ঐক্যফ্রন্টসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ শুরু করে। ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে দুই দফায় সংলাপ হয়। এই জোটের দাবিগুলোর অন্যতম হলো দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে থাকা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি, সংসদ ভেঙে দেওয়া, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন ও নির্বাচনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। সংলাপের পর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ঐক্যফ্রন্টের দাবিগুলো বিবেচনা করা হচ্ছে। তবে সংবিধান লঙ্ঘন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা সম্ভব নয়।

ইকোনমিস্টের মূল্যায়ন আওয়ামী লীগ শাসনামলে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। গত এক দশকে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ছিল গড়ে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ। গত বছর তা ভারত ও পাকিস্তানকেও ছাড়িয়ে ৭ দশমিক ৩ শতাংশে পৌঁছেছে। মোট দেশজ উৎপাদনেও বাংলাদেশ অনেকখানি এগিয়ে গেছে। শিশুমৃত্যু হার কমানো এবং মাধ্যমিকে ভর্তির হার, গড় আয়ু বৃদ্ধিসহ অনেক দিক থেকে পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ। নির্বাচন সামনে রেখে সংঘাত এড়িয়ে সরকার ও বিরোধী দলের আলোচনায় বসার প্রশংসা করে ইকোনমিস্ট বলেছে, বাংলাদেশে কোনো বিরোধই সংসদে আলোচনা বা ব্যালট বাক্সের মাধ্যমে সমাধান হয় না, তা হয় দেশ অচল করে দেওয়া হরতাল-অবরোধে। ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে রাজনৈতিক সহিংসতায় শুধু ভোট গ্রহণের দিন নিহত হন ১৮ জন। ১০০-এর বেশি ভোট কেন্দ্রে অগ্নিসংযোগ করা হয়। তবে এবারের চিত্র ভিন্ন। বিরোধীদের মধ্যে এখন পর্যন্ত হরতাল বা অবরোধ ডাকার লক্ষণ দেখা যায়নি। সংঘাত এড়াতে আলাপ-আলোচনার প্রবণতাকে ইতিবাচক হিসেবে অভিহিত করেছে পত্রিকাটি। বলেছে, এর ফলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি আরও ত্বরান্বিত হবে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের বিশ্বাস, ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন বাংলাদেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক শক্তিকে সংঘাতের বদলে সমঝোতার পথে চলতে উদ্বুদ্ধ করবে। গণতন্ত্র ও স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে যার বিকল্প নেই।

লেখক : প্রকৌশলী

সর্বশেষ খবর