শিরোনাম
রবিবার, ৬ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

স্বাস্থ্য খাত : উন্নয়নের রোল মডেল

ডা. মো. ইহতেশামুল হক চৌধুরী

স্বাস্থ্য খাত : উন্নয়নের রোল মডেল

বাংলাদেশে স্বাধীনতা-উত্তর স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে সাফল্যের শুরু বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে; স্বল্পসংখ্যক নগরবাসীর শহুরে স্বাস্থ্যসেবা হতে বিপুল গ্রামীণ জনকেন্দ্রিক স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণের মধ্য দিয়ে। স্বাস্থ্যকে সংবিধানের মূল অধিকারের তালিকায় সংযোজন, প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় স্বাস্থ্যকে গুরুত্বপূর্ণ স্থানদান, গুটিকয় জেলা ও মহকুমা হাসপাতাল থেকে থানায় থানায় শত শত গ্রামীণ স্বাস্থ্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা, চিকিৎসকদের প্রথম শ্রেণির মর্যাদা দিয়ে স্বাস্থ্যকে গুরুত্ববহ করে তোলা ইত্যাদির মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার অগ্রযাত্রা শুরু। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে ‘জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠান’ প্রতিষ্ঠা করেন। ’৭৫ সালের ২৩ এপ্রিল ‘বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদ’ গঠনের আদেশ স্বাক্ষর করেন তিনি।

এরপর ১৯৭৫-৯০, সামরিক শাসন এবং গণতন্ত্রহীনতার কারণে দীর্ঘ সময় গণমুখী সরকারি অঙ্গীকার ও দেশপ্রেমিক নেতৃত্ব লক্ষ্য করা যায়নি। ১৯৯০-৯৫, এই সময়ে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে ব্যাপক দুর্নীতি লক্ষ্য করা যায়। সে সময়কার সরকার শত শত উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে পদচ্যুত, বাধ্যতামূলক অকালীন অবসর প্রদান করার পাশাপাশি দলীয় অনুগত অযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়মবহির্ভূত পদোন্নতি প্রদান ও নিয়োগ দান করে। ফলে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে স্থবিরতা সৃষ্টি হয়। মেডিকেলের আন্ডার গ্র্যাজুয়েট ও পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ভর্তি পরীক্ষায় ব্যাপক অনিয়ম পরিলক্ষিত হয়। ১৯৯৬ সালে বাংলার মানুষ মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব প্রদান করে। বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার অতীতের শাসকদের লুটপাট, দুর্নীতি ও অস্থিতিশীলতা এবং অ্যাডহক -ভিত্তিতে দেশ পরিচালনার ধারা পরিহার করে স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে দেশে প্রথম জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়ন করে। প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে প্রতি ৬ হাজার জনগোষ্ঠীর জন্য একটি করে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করে এবং ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণের কাজ হাতে নেয়। এর মধ্যে প্রথম পর্যায়ে ১০ হাজারের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়। দেশের হাসপাতালের শয্যাসংখ্যা আগের চেয়ে ৭ হাজার বৃদ্ধি করা হয়। প্রথমবারের মতো একটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠা করা হয় কিডনি, ক্যান্সার, নিউরোলজিসহ বেশ কয়েকটি বিশেষায়িত হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট। এ ছাড়া চিকিৎসা যন্ত্রপাতির ওপর থেকে শুল্ক প্রত্যাহার করে বেসরকারি খাতে হাসপাতাল ও ক্লিনিকের মানোন্নয়নের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়। ২০০১ সালে সরকারের পরিবর্তন হয়। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশ ২০০১ থেকে ২০০৫ সাল টানা পাঁচ বছর দুর্নীতিতে বিশ^চ্যাম্পিয়ন ছিল। এ সময়ে স্বাস্থ্য খাতের ব্যাপক অবনতি ঘটে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০০৭ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশে ৬০ হাজারের বেশি চিকিৎসক, ১ লাখ ৪০ হাজারের বেশি নার্সের ঘাটতি ছিল বলে জানা যায়। চিকিৎসক-নার্স অনুপাত এবং রোগী আর হাসপাতাল শয্যার অনুপাত অনেক নিম্ন আয়ের দেশের চেয়ে কম ছিল। তখন সরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থা মাত্র ২৫ শতাংশ লোক ব্যবহার করেছে। স্বাস্থ্য খাতে কোনো গবেষণা কার্যক্রমই ছিল না। স্বাস্থ্য-প্রযুক্তির ঘাটতি, অ্যালাইড হেলথ প্রফেশনাল যেমন ফিজিওথেরাপিস্ট, ল্যাবরেটরি সহকারী, এক্স-রে টেকনিশিয়ানের ঘাটতি একেবারে বিপজ্জনক পর্যায়ে চলে যায়। অন্যদিকে বেসরকারি ও সরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থার মধ্যে সমন্বয়হীনতা বাংলাদেশের সীমিত সম্পদের উপযুক্ত ব্যবহারের অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়।

২০০৯-এ গণমুখী স্বাস্থ্যনীতির ধারায় জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একবিংশ শতাব্দীর ঊষালগ্নে স্বাস্থ্যকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার যে প্রচেষ্টা শুরু, তা গত এক দশকে শতধারায় বিকশিত হয়ে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যকে নিয়ে গেছে অন্য এক উচ্চতায়; বিশ্বে তা এক মডেল, অনুশ্রেয় মানদন্ড। ২০০৯ সালে Global Alliance for Vaccine And Immunization (GAVI) Award পায় বাংলাদেশ। বর্তমান সরকারের সুদক্ষ পরিচালনায় বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে নিম্নমধ্যম আয়ের দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার প্রাথমিক যোগ্যতা অর্জন করেছে, যার মূলে অন্যতম ভূমিকা রেখেছে স্বাস্থ্য খাতে আমাদের অর্জনগুলো। এ সরকারের আমলেই স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে গতিশীল করার লক্ষ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগ নামে দুটি নতুন বিভাগ সৃষ্টি করা হয়েছে। পরিবার পরিকল্পনা সেবা ও মাঠ পর্যায়ে মা ও শিশুস্বাস্থ্য রক্ষায় প্রাথমিক সেবা প্রদানে বাংলাদেশ প্রশংসনীয় সাফল্য অর্জন করেছে বিগত এক দশকে। মাঠ পর্যায়ে ১২ হাজারের বেশি নারীকে Skilled Birth Attendent হিসেবে প্রশিক্ষিত করা হয়েছে; Midwifery সেবা জোরদার করতে ৩ হাজারের বেশি Midwife পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। ২০০৭ সালে দেশে নারীপ্রতি গড় সন্তান গ্রহণের হার ২.৭ ছিল, যা বর্তমানে ২.২-এ নেমে এসেছে। জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারকারী দম্পতি ২০০৭ সালের ৫৬% থেকে বেড়ে বর্তমানে ৬২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। শিশুমৃত্যু উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের প্রায় চার বছর আগে ২০১০ সালে সরকার সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা-৪-এর স্বাস্থ্যসংক্রান্ত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছে। এর স্বীকৃতি হিসেবে ২০১০ সালের সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ বাংলাদেশকে অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ Millenium Development Goal Award-এ পুরস্কৃত করেছে, যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেওয়া হয়। স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চিন্তাপ্রসূত কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্প বর্তমান সরকারের আমলে পুনরুজ্জীবিত হয়েছে। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত এসে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো বন্ধ করে দেয়। আগের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সংস্কার ও নতুন আরও ক্লিনিক তৈরি করায় বর্তমানে ১৩ হাজার ৮৮২টি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধমে সারা দেশের গ্রাম পর্যায়ে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হচ্ছে। প্রতিষ্ঠার পর এ পর্যন্ত কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোয় মোট ৭৫ কোটি ৭০ লাখ সেবাগ্রহীতা সেবা গ্রহণ করেছেন। এক জরিপে ক্লিনিকসমূহে সেবা গ্রহীতাদের ৮৫% প্রাপ্ত সেবায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে। এ ছাড়া বিগত এক দশকে দেশে ৬ হাজারের বেশি চিকিৎসক, ৪২৭ জন ডেন্টাল সার্জন ও ১০ হাজারের বেশি নার্স, মিডওয়াইফ ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আরও ১০ হাজার চিকিৎসক ও ৪ হাজার নার্সের নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে। দেশের স্বাস্থ্যসেবার মান বৃদ্ধিতে ও গবেষণা কাজে লাগানোর লক্ষ্যে দক্ষ চিকিৎসা পেশাজীবী সৃষ্টি করতে এবং চিকিৎসক, নার্সসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীর অভাব পূরণ করতে বিগত এক দশকে দেশে তিনটি নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়সহ ১০৭টি সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজ এবং একটি পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট নার্সিং ইনস্টিটিউট স্থাপন করা হয়েছে। চিকিৎসকদের জন্য উচ্চশিক্ষার আসন বৃদ্ধি, নতুন কোর্স চালুকরণ, নার্সিং বিষয়ে পিএইচডি ও মাস্টার্স প্রশিক্ষণ, বিএসসি নার্সিংয়ের আসন সংখ্যা বৃদ্ধি, ডিপ্লোমা ইন মিডওয়াইফারি কোর্স চালুকরণসহ দক্ষ জনবল তৈরিতে নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। রাজধানীসহ সারা দেশের বিভিন্ন জেলায় নতুন নতুন বিশেষায়িত ও জেনারেল হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়েছে। ‘শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট’ নির্মাণসহ ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ইএনটি, ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট মুগদা জেনারেল হাসপাতালসহ মোট ১৩টি হাসপাতাল স্থাপন করা হয়েছে। ২০টি হাসপাতাল সম্প্রসারণ প্রকল্পের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। ২০১১ সালে জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়ের পর বর্তমান সরকার জাতীয় ওষুধনীতি ২০১৬, মানবদেহ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সংযোজন আইন ২০১৮সহ নানাবিধ আইন কাঠামো প্রণয়ন, জাতীয় পুষ্টি পরিষদ গঠনের মাধ্যমে দেশে পুষ্টিসেবা জোরদারকরণ, নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস প্রচলনের মাধ্যমে মা ও শিশুস্বাস্থ্যের প্রতি গুরুত্বারোপ, উচ্চতর স্বাস্থ্য শিক্ষায় নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট নার্সিং ইনস্টিটিউট স্থাপনসহ নানাবিধ গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। ওষুধশিল্পে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। ২০১৬ সালে জাতীয় ওষুধনীতি আধুনিকায়ন করা হয়েছে। ওষুধ রপ্তানি বিগত বছরগুলোয় দ্রুতলয়ে বেড়েছে। ওষুধের কাঁচামাল দেশেই তৈরির জন্য মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় ২০০ একর জমিতে এপিআই পার্ক নির্মাণ করা হচ্ছে। জাতীয় সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ও রূপকল্প ২০২১-এর আলোকে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় প্রণীত পাঁচ বছর মেয়াদি ‘চতুর্থ স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি কর্মসূচি ২০১৭-২০২২’-এর বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। এ কর্মসূচিটি সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন হলে দেশের সার্বিক স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি পরিস্থিতির ব্যাপক উন্নয়ন ঘটবে। ২০৩০ সালের মধ্যে ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা’র স্বাস্থ্যবিষয়ক  সূচকগুলো অর্জনে এ উন্নয়ন কর্মসূচি বিরাট ভূমিকা রাখবে। সম্প্রতি ভারতের নয়াদিল্লিতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিষদের সভায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান বাংলাদেশের স্বাস্থ্য সাফল্যের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন; শুধু নিজের ১৬ কোটির অধিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় দেশটি অনন্য তা নয়, সুনামির মতো ধেয়ে আশা ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে অতীব প্রতিকূল পরিবেশে যে মানের সেবা দিয়ে তাদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা দিতে পেরেছে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য বিভাগ, তাও বিশ্বে বিরল। নিরাপদ পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনবঞ্চিত ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে দুবারে ২০ লক্ষাধিক টিকা প্রদানের মাধ্যমে কলেরার মতো ভয়াবহ মহামারি থেকে রক্ষা করা এবং হাম-রুবেলাসহ শিশুদের অন্যান্য রোগের টিকাদানের মাধ্যমে সুরক্ষা দান বাংলাদেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার গৌরব তিলক ইপিআইয়ের সক্ষমতাকে বহুধাভাবে প্রমাণিত করেছে।

বাংলাদেশে এখন ১০৭টি মেডিকেল কলেজ, ৫ হাজার ১৮২টি বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক, প্রায় ১০ হাজার ৪০০ ডায়াগনস্টিক সেন্টার, বিশেষায়িত হাসপাতাল ও অন্যান্য হাসপাতাল ৪৬টি, ৪২৮টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ৫ লক্ষাধিক স্বাস্থ্যসেবা দানকারী রাজধানী ঢাকা থেকে দেশের সব প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত জালের মতো বিস্তৃত সেবা কেন্দ্র এবং সেবাদানকারী বাংলাদেশের স্বাস্থ্যকে একটি মজবুত টেকসই কাঠামোর ওপর দৃঢ়ভাবে স্থাপন করেছে। জরুরি এবং অন্তর্বিভাগে লাখ লাখ রোগীর সেবা-শুশ্রুষা দিয়ে আসছে দেশের স্বাস্থ্য বিভাগ। রোগ প্রতিরোধ ও নির্মূলে বাংলাদেশ ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেছে গত এক দশকে; উচ্ছেদ (Eradication) হয়েছে পোলিও; নির্মূল হয়েছে কালাজ্বর, গোদ রোগ, ধনুষ্টঙ্কার; নিয়ন্ত্রণে রয়েছে কলেরা। ২০১৪ সালের ২৭ মার্চ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) বাংলাদেশকে পোলিওমুক্ত অঞ্চল ঘোষণা করে সনদ দিয়েছে।

বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রতিজ্ঞার বাস্তবায়ন হিসেবে স্বাস্থ্য খাতেও ডিজিটালাইজেশন শুরু হয়েছে। মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা সকল পর্যায়ের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র থেকে প্রতিদিন স্বাস্থ্যসেবাবিষয়ক তথ্য জাতীয় স্বাস্থ্য তথ্যভাণ্ডারে জমা করছেন উচ্চগতির ইন্টারনেট ব্যবহার করে। দেশের বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলে টেলিমেডিসিন সেবার মাধ্যমে রোগীদের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সেবা পাওয়ার সুবিধা প্রদান করা হয়েছে। এ ছাড়া ‘স্বাস্থ্য বাতায়ন’ ১৬২৬৩ সার্বক্ষণিক কল সেন্টারের মাধ্যমে সারা দেশ থেকে যে কোনো মানুষ যে কোনো সময়ে স্বাস্থ্যসেবাসংক্রান্ত যে কোনো তথ্য জানতে পারছে। ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে স্বাস্থ্যসেবা নিতে পারছে। অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানের মতোই স্বাস্থ্য খাতে ই-ফাইলিং সেবা চালু করা হয়েছে, যা ক্রমে ‘পেপারলেস’ অফিস তৈরির পথে অগ্রণী ভূমিকা রাখছে; যার ফলে ২০১১ সালে বাংলাদেশ জাতিসংঘ কর্তৃক ‘ডিজিটাল হেলথ ফর ডিজিটাল ডেভেলপমেন্ট’ পুরস্কারে ভূষিত হয়।

বর্তমান সরকারের হাত ধরে আমরা আজ সুস্থ জাতি হিসেবে অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন ঘটিয়ে জাতীয় প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছি। একদিকে যেমন আমরা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১-এর মাধ্যমে মহাকাশে বাংলাদেশের অবস্থান নিশ্চিত করেছি, অন্যদিকে মাতৃমৃত্যু হার, শিশুমৃত্যু হার কমিয়ে অর্জন করেছি আন্তর্জাতিক সম্মান; পেয়েছি এমডিজি পুরস্কার, সাউথ সাউথসহ বহু আন্তর্জাতিক পুরস্কার। এ ছাড়া ২০১৪ সালের ১১ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীতনয়া সায়মা ওয়াজেদকে বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় আঞ্চলিক কার্যালয় অটিজম বিষয়ে অবদানের জন্য ‘এক্সেলেন্স ইন পাবলিক হেলথ’ পুরস্কার প্রদান করে। ২০১৭ সালেও তাকে ‘গুড উইল অ্যাম্বাসাডর ফর অটিজম’ মনোনয়ন প্রদান করে। বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শিতার হাত ধরে ২০২১ সালের মাঝে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মাঝে উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার স্বপ্নের বাস্তবায়নের পথে সুস্থ-সবল জাতি গঠনের উদ্দেশ্যে দেশের স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ সেবা অগ্রসর হচ্ছে দ্রুতগতিতে।

            লেখক : মহাসচিব, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন।

সর্বশেষ খবর