শিরোনাম
রবিবার, ৬ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

কৃতজ্ঞ বান্দাকে আল্লাহ ভালোবাসেন

মুফতি হেলাল উদ্দীন হাবিবী

কৃতজ্ঞ বান্দাকে আল্লাহ ভালোবাসেন

কৃতজ্ঞতা একটি তাৎপর্যময় আমল ও অতি উত্তম মানবীয় গুণ। অকৃতজ্ঞ ব্যক্তিকে কেউ পছন্দ করে না। রব্বুল আলামিন আল কোরআনের একাধিক আয়াতে কৃতজ্ঞতা আদায়ের প্রতি মুমিনদের নির্দেশ দিয়েছেন। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে সর্বদা কৃতজ্ঞতা আদায় করতেন এবং সাহাবায়ে কিরামকে কৃতজ্ঞতা আদায়ের প্রতি অনুপ্রাণিত করতেন। আল কোরআনের সূচনা হয়েছে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ তথা দয়াময় রব্বুল আলামিনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশক শব্দ দ্বারা এবং জান্নাতি বান্দারা জান্নাতে প্রবেশ করে সর্বপ্রথম মহান মালিকেরই কৃতজ্ঞতা আদায় করবে।

সম্মানিত পাঠক! প্রতি ক্ষণে প্রতি পদক্ষেপে আমরা মহান রবের অগণিত নিয়ামত ভোগ করি। তাঁর দয়া ও নিয়ামত ছাড়া এক মুহূর্ত কারও বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। হৃদয়ের চোখ দিয়ে তাকালেই আমরা দেখতে পাব তাঁর করুণা ও নিয়ামতের চাদরে মোড়ানো আমাদের জীবন। সুস্থ দেহ, সুস্থ মন ও সুস্থ পরিবেশ সবই তাঁর নিয়ামত। তাই ভালোমন্দ, সচ্ছলতা-অসচ্ছলতা ও সুখে-দুঃখে সর্বাবস্থায় ধৈর্য ধারণ করা এবং তাঁর প্রতি অবিচল আস্থাশীল ও কৃতজ্ঞশীল থাকা ইসলামের সুমহান শিক্ষা। রব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয় তোমরা আল্লাহ ছাড়া যাদের উপাসনা করছ; তারা তোমাদের রিজিক প্রদানের মালিক নয়। অতএব তোমরা আল্লাহর কাছে রিজিক কামনা কর, তাঁর ইবাদত ও কৃতজ্ঞতা আদায় কর।’ আল কোরআন। সূরা বাকারার ১৫২ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা আমাকে স্মরণ কর, আমিও তোমাদের স্মরণ করব; এবং আমার কৃতজ্ঞতা আদায় কর, অকৃতজ্ঞ হইও না।’ কৃতজ্ঞশীল বান্দার প্রতি  আল্লাহ সন্তুষ্ট থাকেন এবং তাকে নিয়ামত-রাজি আরও বাড়িয়ে দেন। এ সম্পর্কে রব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন, ‘তোমরা যদি কৃতজ্ঞতা আদায় কর তাহলে আমি অবশ্যই তোমাদের আরও বাড়িয়ে দেব। আর যদি তোমরা অস্বীকার কর তাহলে আমার আজাব অবশ্যই কঠিন।’ সূরা ইবরাহিম, আয়াত ৭।

রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যে খাবার খেয়ে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করে, সে ধৈর্যশীল রোজাদারের সমান সওয়াব লাভ করবে।’ ইবনে মাজাহ।

হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে নফল নামাজ পড়তে গিয়ে তাঁর পা মোবারক ফেটে যাওয়ার উপক্রম হতো। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসুল! আপনি নামাজে এমনভাবে দাঁড়ান মনে হয় আপনার পা ফেটে যাবে। অথচ আল্লাহ আপনার আগে-পরের সব গুনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন। তিনি বললেন, আমি কি কৃতজ্ঞ বান্দা হব না!’ বুখারি, মুসলিম।

মহান আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায়ের পাশাপাশি মানুষের যে কোনো উপকারের কৃতজ্ঞতা আদায় করা রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুমহান আদর্শ ও ইসলামের শাশ্বত নীতি। কেননা, প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যে মানুষের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না, সে আল্লাহরও কৃতজ্ঞ হয় না।’ তিরমিজি, আবু দাউদ। মহান রবের দরবারে আমাদের এই মিনতি, আমরা যেন তাঁর কৃতজ্ঞশীল বান্দা হতে পারি এবং তাঁর কৃতজ্ঞতা আদায়ের মাধ্যমে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারি।

 

লেখক : মুফাসসিরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব।

সর্বশেষ খবর