আল্লাহতায়ালা মাঝে মধ্যে রোগ-বালাই দিয়ে বান্দার ইমানের দৃঢ়তা পরীক্ষা করে থাকেন। তিনি দেখতে চান, বিপদ-আপদকালীন সময়ে তাঁর বান্দাদের মধ্যে কে বা কারা, তাঁর ওপর অবিচল আস্থা বা বিশ্বাস রেখে, ধৈর্যের সঙ্গে সামনের দিকে এগিয়েছে। কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং জান-মাল ও ফল-ফলারির স্বল্পতার মাধ্যমে’ (সূরা বাকারা-১৫৫)। ‘আর ভালো এবং মন্দ দ্বারা আমি তোমাদের পরীক্ষা করে থাকি’ (সূরা আম্বিয়া-৩৫)। মানুষের ভালো-মন্দ উভয়ের বিষয়ে আল্লাহতায়ালা সমভাবে ক্ষমতাবান। আমরা অসুস্থ হলে, তিনিই আমাদের সুস্থতা দান করেন। রোগ-ব্যাধি থেকে আরোগ্য লাভের ক্ষেত্রে চিকিৎসক শুধু চেষ্টা করতে পারেন। মানুষ একে অপরের জন্য কেবল দোয়া করতে পারে। আরোগ্য দানের বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে আল্লাহতায়ালার দয়ার ওপর নির্ভর করে। আল্লাহর সাহায্য বা দয়া ব্যতীত কঠিন রোগ-ব্যাধি থেকে কারও আরোগ্য লাভ করা সম্ভব নয়। তিনি যদি কারও ওপর আজাব গজব দান করেন, কেউ তা প্রতিরোধ করতে পারবে না। সৃষ্টি জগতের সব কিছুই তাঁর ইচ্ছার অধীন। কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘আর যদি আল্লাহ তোমাকে কোনো দুর্দশা স্পর্শ করেন, তবে তিনি ছাড়া তা দূরকারী কেউ নেই। আর যদি কোনো কল্যাণ দ্বারা স্পর্শ করেন তবে তিনিই তো সব কিছুর ওপর ক্ষমতাবান। আর তিনিই তাঁর বান্দাদের ওপর ক্ষমতাবান’ (সূরা আনআ’ম-১৭-১৮)। ‘কে আছে অসহায় ও বিপন্নের ডাকে সাড়া দেয় যখন সে ডাকে এবং কষ্ট ও বিপদ দূরীভূত করে দেয়?’ (সূরা নামল-৬২)। আল্লাহ ছাড়া যেমন, মানুষের কোনো সাহায্যকারী নেই। তেমনি দুনিয়া এমন কোনো রোগ নেই, যে রোগের ওষুধ বা প্রতিষেধক সম্পর্কে আল্লাহ মানুষকে জ্ঞান দান করেন নাই। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, হজরত রসুল (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহতায়ালা এমন কোনো রোগ অবতীর্ণ করেননি। যার নিরাময়ের উপকরণ তিনি সৃষ্টি করেননি’ (বোখারি-৫২৭৬)। যা কিছু মানুষের জন্য কল্যাণকর, আল্লাহতায়ালা বান্দাদের তা দান করে থাকেন। আল্লাহতায়ালা রোগ-বালাইর মধ্যেও মানুষের জন্য কল্যাণ রেখেছেন। দুনিয়াতে আল্লাহ যা কিছু সৃষ্টি করেছেন, সবকিছুই মানুষের উপকারার্থে। এ জন্য পানি, বৃক্ষ-লতা, রোদ-বৃষ্টি ও ফলফলারি থেকে শুরু করে সবকিছুর মাঝেই ঔষধি গুণ ক্ষমতা রয়েছে। যখন মানুষের মধ্যে বালা-মুসিবতের আগমন ঘটে। তখন আল্লাহতায়ালা বালা-মুসিবতের পাশাপাশি বান্দার জন্য কল্যাণও পাঠিয়ে দেন। যখনই আমাদের কোনো রোগব্যাধি আক্রমণ করবে, তখন কঠিন ইস্পাতের ন্যায় অন্তরে আল্লাহর রহমতের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস রেখে, ধৈর্যের সঙ্গে আল্লাহর কাছে আরোগ্য লাভের জন্য সাহায্য চাইতে হবে। অতীত জীবনের ভুল-ত্রুটির জন্য বেশি বেশি তওবা ইস্তেগফার পড়তে হবে। তাহলে আল্লাহ অবশ্যই কঠিন রোগ-বিমারের শেফা দান করবেন। আল্লাহতায়ালা সবাইকে সুস্থ ও সুন্দর জীবন দান করুক। আমিন।
লেখক : ইসলামিক চিন্তাবিদ ও গবেষক।