রবিবার, ১৩ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা
স্থাপত্য

ইয়াজ্‌দ মসজিদ

ইরানের মধ্যাঞ্চলীয় ইয়াজ্দ শহরের ঐতিহাসিক ইয়াজ্‌দ জামে মসজিদটি নির্মিত হয়েছে ৯০০ বছরেরও বেশি আগে। মসজিদের নির্মাণকাজ শুরু করে এটি সম্পূর্ণ শেষ করতে প্রায় ১০০ বছর লেগেছিল। মসজিদের একেকটি অংশ এক এক ধাপে নির্মাণ করা হয় এবং আলাদা স্থাপত্যশিল্পীরা এ কাজ সম্পন্ন করেন বলে এত দীর্ঘ সময় ধরে এ নির্মাণকাজ চলে। ধারণা করা হয়, এ বিশাল মসজিদটি নির্মাণের কাজ প্রথম শুরু করেন ইরানের সাফফারি রাজবংশের দ্বিতীয় শাসক আমর ইবনে আল-লাইস। তবে পরে আলে-বুইয়ে রাজবংশের অন্যতম শাসক আলাউদ্দৌলা কালানজারকে এ মসজিদের প্রধান নির্মাতা বলে মনে করা হয়। আলাউদ্দৌলা কালানজার ফারসি ৪৭৪ থেকে ৪৯৮ সাল পর্যন্ত ইয়াজ্দের শাসক ছিলেন। ফারসি ৭২৪ সালে প্রাকৃতিক দুর্যোগে মসজিদটির ভবন ধসে পড়লে সাইয়েদ রুকনুদ্দিন নামে এক সমাজসেবী বর্তমান মসজিদটি স্থাপন করেন। তার পর থেকে এ পর্যন্ত বহুবার এ ঐতিহাসিক স্থাপনার বিভিন্ন অংশের মেরামত ও পুনর্নির্মাণের কাজ হলেও আর কখনো নতুন করে এটি নির্মিত হয়নি। কয়েক দশক আগ পর্যন্ত মসজিদটির পুনর্র্নির্মাণের কাজ অব্যাহত ছিল। ইয়াজ্দ জামে মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছিল তৎকালীন ইয়াজ্দ শহরের কেন্দ্রস্থলে এবং শহররক্ষা প্রাচীরের ভিতরে। ৯ হাজার ৮০০ বর্গমিটার জায়গার ওপর এর নির্মাণকাজ শুরু হয়। এ মসজিদের দৈর্ঘ্য ১০৪ মিটার ও প্রস্থ ৯৯ মিটার। আশপাশের বিভিন্ন সড়ক ও গলি দিয়ে মসজিদে প্রবেশের জন্য এটিতে রয়েছে বিভিন্নমুখী সাতটি প্রবেশপথ। ইয়াজ্‌দ জামে মসজিদে রয়েছে বিশাল উঁচু ছাদবিশিষ্ট একটি হলরুম, দুটি বড় বারান্দা, বারান্দাগুলোর পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তে পানি গরম করার দুটি কক্ষ, একটি বড় আকারের গম্বুজ এবং নামাজ আদায়ের বিশাল কক্ষ। মসজিদের মূল প্রবেশদ্বারটি হচ্ছে ইয়াজ্‌দ জামে মসজিদের আকর্ষণীয় অংশগুলোর অন্যতম। ২৪ মিটার উচ্চতাবিশিষ্ট এ প্রবেশদ্বারে এতটা অনিন্দ্যসুন্দর কারুকাজ করা হয়েছে যে, চোখে না দেখলে এর সৌন্দর্য বর্ণনা করা প্রায় অসম্ভব। প্রবেশদ্বারটির দুই পাশে রয়েছে সুউচ্চ দুটি দর্শনীয় মিনার। দুটি মিনারের উচ্চতা ভূমি থেকে প্রায় ৫২ মিটার এবং এর প্রতিটির ব্যাস ৮ মিটার। ইরানে সাফাভি শাসনামলে মসজিদটিতে এ মিনারগুলো সংযোজিত হয়, যা রেকর্ডবুকে বিশ্বের অন্যতম উঁচু মিনার হিসেবে স্থান করে নিয়েছে। এ প্রবেশদ্বার ও মিনারগুলোয় স্থাপিত টাইলসের ওপর অতিসূক্ষ্ম কারুকাজ মসজিদটিকে অনন্য বৈশিষ্ট্য দান করেছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, মসজিদের এ দুটি মিনারের মাত্র একটির ভিতরে ওপরে ওঠার জন্য সিঁড়ি স্থাপন করা হয়েছে যে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে অতীতে আজান দিতেন মুয়াজ্জিনরা। অন্য মিনারের ভিতরে সিঁড়ি না থাকলেও বাইরে থেকে দেখে মিনার দুটির মধ্যে কোনো পার্থক্য করার উপায় নেই।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর