সোমবার, ১৪ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

বিজ্ঞাপন বিজ্ঞতা

হানিফ সংকেত

বিজ্ঞাপন বিজ্ঞতা

যদি প্রশ্ন করা হয় টেলিভিশনে এখন সবচেয়ে বেশি প্রচারিত হয় কী? সবাই একযোগে উত্তর দেবেন ‘বিজ্ঞাপন’। হ্যাঁ বিজ্ঞাপন তার আপন গতিতে অনুষ্ঠানের সময় কমিয়ে-জমিয়ে দখল করে নিচ্ছে সময়। নির্বাচনের আগে টকশোগুলোতেও এই বিজ্ঞাপনের আধিক্য লক্ষ্য করা গেছে। অন্যের পণ্যের প্রচারের জন্য বিজ্ঞাপন একটি জরুরি বিষয় কিন্তু ইদানীং যাদের উদ্যোগে-উৎসাহে উদ্দীপ্ত হয়ে যে উদ্দেশ্যে এসব বিজ্ঞাপনের উৎপত্তি হয় তাতে নির্মাতা উৎফুল্ল হলেও অনেকেই একে উৎপাত, উপদ্রব ভেবে উত্তপ্ত হন। হন ক্রুব্ধ, কেউ বাকরুদ্ধ, কেউবা উদ্বুদ্ধ। তবে বিজ্ঞাপন বানিয়ে নির্মাতা নন্দিত না নিন্দিত তা নিয়ে চিন্তিত কিনা বোঝা না গেলেও সোজাভাবে বলা যায় কিছু কিছু বিজ্ঞাপনে যা জ্ঞাপন করা হয় তা অনেককেই ক্ষিপ্ত এবং বিরক্ত করে। বিজ্ঞাপন হচ্ছে নতুন কোনো পণ্যের আগমনী বার্তা প্রচার এবং এক ধরনের বিপণন কৌশল। বিজ্ঞাপন শব্দটির আভিধানিক অর্থই হলো কোনো কিছু বিশেষভাবে জ্ঞাপন করানো বা জানানো। বিজ্ঞাপন দেখে প্রভাবিত এবং প্ররোচিত হয়ে মানুষ অনেক কিছুই কেনে এবং ব্যবহার করে। বলা যায় এই বিজ্ঞাপন প্রতিনিয়ত আমাদের অনুভূতি নিয়ে খেলছে এবং ক্ষেত্র বিশেষে বিপদেও ফেলছে। এসব চটকদার বিজ্ঞাপনে প্ররোচিত হওয়ার পাশাপাশি প্রতারিতও হচ্ছে সাধারণ মানুষ। অথচ আইন অনুযায়ী কোনো পণ্যের বিজ্ঞাপনে পণ্য সম্পর্কে এমন কিছুই জ্ঞাপন করানো উচিত নয়, যা মিথ্যে। শুধু টেলিভিশনই নয়, সংবাদপত্রের পৃষ্ঠাজুড়েও এখন রংবেরঙের বিজ্ঞাপন চোখে পড়ে। কখনো কখনো পত্রিকার প্রথম পাতার পুরোটাজুড়েই দেখা যায় বিজ্ঞাপন। পাতা উল্টালে পাওয়া যায় আসল পত্রিকা। কোনো কোনো সময়ে এসব সংবাদপত্রে সংবাদের চেয়ে বিজ্ঞাপনই বেশি চোখে পড়ে। সংবাদের জন্য সংবাদপত্র হলেও সংবাদপত্রের এমন চেহারা দেখলে মনে হয় এ যেন বিজ্ঞাপন পত্র। 

ইদানীং ‘যন্ত্রণা’ শব্দটি বিজ্ঞাপনের প্রতিশব্দ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ বিজ্ঞাপন যন্ত্রণা। কখনো কখনো ভিন্ন অর্থবোধক শব্দের পাশাপাশি অবস্থান, বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। যেমন স্মাইল এবং ক্রাই, অর্থাৎ হাসি-কান্না। এই দুটি শব্দের সহাবস্থান হলে মানুষের শ্রেষ্ঠতম মুহূর্তের সৃষ্টি হয়, যেমন আনন্দাশ্রু। অর্থাৎ আনন্দেও অনেক সময় অশ্রুপাত হয়। নাটকে, সিনেমায় কিংবা রিয়েলিটি শোয়ের চ্যাম্পিয়নদের চোখে এই অশ্রু বেশি দেখা যায়। তেমনি বিজ্ঞাপনের সঙ্গে যন্ত্রণা শব্দটি ব্যবহার হওয়ার কারণ হচ্ছে, বিজ্ঞাপনের যন্ত্রণা। যা দেশের প্রতিটি টিভি দর্শকই ভোগ করছেন। আর এই যন্ত্রণায় কাতর হয়ে দর্শকদের হাতের রিমোটটি সেকেন্ডে সেকেন্ডে চ্যানেল বদলাতে থাকে। কিন্তু এই যন্ত্রণা থেকে পরিত্রাণের আশায় দর্শকরা যেখানেই যান সেখানেও সেই বিজ্ঞাপন যন্ত্রণা। এই যন্ত্রণায় স্বস্তি না পেয়ে চরম অস্বস্তিতে অনেক দর্শকই চলে যান দেশের গণ্ডি ছেড়ে বিদেশে। আসলে টিভি চ্যানেলগুলোর লাগামহীন বা বিরতিহীন বিজ্ঞাপন বিরতির কারণেই দর্শকরা ঝুঁকে পড়ছেন বিদেশি চ্যানেলের দিকে। আমরা আটকে যাচ্ছি অপসংস্কৃতির বেড়াজালে। এখন কিছু কিছু টেলিভিশন অনুষ্ঠান এবং নাটকের চেয়ে বিজ্ঞাপনের ব্যাপ্তিকাল বেশি। ২৫ মিনিটের নাটকে ৩০ মিনিটও বিজ্ঞাপন দেখানো হয়। শুরুতে বিজ্ঞাপন-মধ্যে বিজ্ঞাপন-শেষেও বিজ্ঞাপন। এগুলোকে ব্রেক বলা হয়। এই ব্রেকে আবার ভাগও আছে। সুপার ব্রেক, ফার্স্ট ব্রেক, মিড ব্রেক, লাস্ট ব্রেক। আবার বিরতিহীন বলে যে অনুষ্ঠান বা নাটক প্রচারিত হয়, তাতে বিরতি শব্দটিও ইদানীং তার গুরুত্ব হারিয়ে ফেলছে। বিরতির ক্ষেত্রেও বলা হয় এক বিরতি, দুই বিরতি বা তিন বিরতির নাটক। তারপর আছে স্বল্প বিরতি, অল্প বিরতি। এই অল্প-স্বল্প বিরতি যে কখন শুরু হবে আর কখন শেষ হবে তা কেউ বলতে পারে না। এই ব্রেক আর বিরতির নির্যাতনে একটি নাটক বা অনুষ্ঠানকে কাটাছেঁড়া করে খণ্ডবিখণ্ড করে ফেলা হয়। এসব বিরক্তিপূর্ণ বিরতির পর দর্শকদের ধরে রাখার জন্য চ্যানেলে চ্যানেলে আবার নানানভাবে আব্দারও জানানো হয়। সে আবদারের ভাষাও বেশ মজার-কখনো মনে হয় অনুরোধ, কখনো মনে হয় নির্দেশ। কেউ বলছেন ফিরছি একটু পর-সঙ্গেই থাকুন। কিন্তু এই একটু পর যে কতক্ষণ পর তা কেউ বলতে পারে না। কেউ বলছেন, নিচ্ছি ছোট্ট একটা বিরতি। কিন্তু ছোট্ট বললেও এটা যে কত বড় যারা নিয়মিত টিভি দেখেন তারাই জানেন। অনেকে বলেন, ফিরছি এক্ষুনি-কোথাও যাবেন না, গিয়েও বা কী লাভ? যেখানে যাবেন সেখানেও তো একই জিনিস পাবেন অর্থাৎ বিরক্তিকর বিরতি।

আজকাল বিজ্ঞাপন নির্মাণ ও প্রচারে নৈতিকতার অভাব বিশেষভাবে লক্ষ্য করা যায়। শিশুদের এবং তরুণদের মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করছে এই বিজ্ঞাপন। নানান পণ্যে বাজার সয়লাব। বিজ্ঞাপন দেখে এসব পণ্য কিনতে এবং চিনতে গিয়ে অনেকেই চিন্তায় পড়ে যান। সরিষার তেল থেকে শুরু করে টয়লেট কিনার, পেস্ট, ক্রিম, চানাচুর, বিস্কিট, রড, সিমেন্ট, শাড়ি, গহনা, পানি কোনো কিছুই বাদ নেই এই বাজারে। এরপর আছে বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানিগুলোর অদ্ভুত সব নৃত্যগীত এবং লাফালাফিতে ভরপুর ফোন, সিম আর নিত্যনতুন প্যাকেজ সুবিধার বিজ্ঞাপন। বিশেষ দিন উপলক্ষে নির্মিত কিছু বিজ্ঞাপন ছাড়া এদের অধিকাংশ বিজ্ঞাপনই থাকে বিষয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন উদ্ভট নৃত্যগীত। মাঝে মাঝে পণ্যের সঙ্গে নির্মিত বিজ্ঞাপন এবং বাস্তবের কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যায় না।

এক সময় টিভিতে একটি কলমের বিজ্ঞাপন দেখানো হতো, সেখানে বলা হতোÑসেই কলম ব্যবহার করলে পরীক্ষায় ফার্স্ট হওয়া যাবে। বিজ্ঞাপনে প্রদর্শিত সাবান দিয়ে শার্ট পরিষ্কার করে, সেই শার্ট পরে অফিসে গেলে পদোন্নতি হবে। টুথপেস্ট দিয়ে দাঁত মাজলে দাঁড়াতে না পারা শারীরিক প্রতিবন্ধী শুধু দাঁড়াবেই না হাঁটতেও পারবেন ইত্যাদি ইত্যাদি। অর্থাৎ যত রকম অবাস্তব কথা, আজগুবি আচরণ, গান-বাজনা নয়, বাজনা গানের মাধ্যমে মানুষকে প্রভাবিত বা প্রতারিত করা যায়, তারই যেন প্রতিযোগিতা চলে। আর বিজ্ঞাপন মানেই প্রায় সব পণ্যেই নারী মডেল ব্যবহার করতে হবে কেন? এভাবে চলতে থাকলে কবে যে শেভিং রেজারের বিজ্ঞাপনেও নারী মডেল দেখতে পাব কে জানে? বিজ্ঞাপন যেমন পণ্য সম্পর্কে ধারণা দেয়, তেমনি অনেক অপদ্রব্য সম্পর্কে বিভ্রান্তও করে। বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে সততার সঙ্গে পণ্যের গুণাগুণ প্রচার করা উচিত। কিন্তু বিজ্ঞাপনে এই সত্য কথাটি সব সময় প্রচার হয় না। নেওয়া হয় মিথ্যের আশ্রয়। আমাদের দেশের যেসব মডেল এসব পণ্যের বিজ্ঞাপনে কাজ করেন তারা নিজেরাও হয়তো এসব পণ্য ব্যবহার করেন না। তাছাড়া তারকাদেরও পণ্যমান বিচার করে বিজ্ঞাপনের মডেল হওয়া প্রয়োজন, অর্থটাই যেন মুখ্য না হয়। বিশেষ করে ক্রিকেট তারকাদের। কথায় আছে, ‘প্রোডাক্টেরও পার্সোনালিটি আছে’। এমন পণ্যের বিজ্ঞাপন করা উচিত নয়, যা তার ব্যক্তিত্বের সঙ্গে যায় না এবং সম্মানজনক নয়। এসব বিজ্ঞাপন দেখে বা শুনে আমাদের শিশু ও তরুণ সমাজ কী শিখছে? কিছুদিন আগে টেলিভিশনে একটি খ্যাতিমান বৃহৎ কোম্পানির আম-কমলার জুস বানানোর যে ধরন দেখলাম তাতে ওই প্রতিষ্ঠানের তৈরি কোনো কিছুই বিশ্বাস করে কেনা ও খাওয়া অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। লেভেলে যতই তাজা ফলের রসের কথা উল্লেখ করা হোক না কেন, ভিতরে থাকে এসব ফলের কৃত্রিম ফ্লেভার। পাশাপাশি এগুলোতে ব্যবহার করা হয় প্রিজারভেটিভ। স্বাস্থ্যের জন্য যা মারাত্মক ক্ষতিকর। তবে আমাদের দেশে কিছু কিছু ভালো বিজ্ঞাপনও নির্মাণ হচ্ছে। যা সুন্দর-রুচিশীল ও শিল্পমান সম্পন্ন। যদিও সংখ্যায় তা আশানুরূপ নয়। বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের উদ্যোগে বিউটিফুল বাংলাদেশ শিরোনামে বেশ কটি বিজ্ঞাপন নির্মিত হয়েছে। এসব বিজ্ঞাপনকে এক কথায় বলা যায় চোখ জুড়ানো এবং মন জুড়ানো। বাংলাদেশের সৌন্দর্যের পাশাপাশি মানুষের জীবন ও জীবন সংগ্রামকে তুলে ধরা হয়েছে এসব বিজ্ঞাপনে। এমনি কিছু কিছু বিজ্ঞাপনের বিষয়বস্তু, নির্মাণ নৈপুণ্য, পাত্র-পাত্রীদের অভিনয় এবং লোকেশনের নান্দনিকতা বিজ্ঞাপনকে সর্বমহলে প্রশংসিত করে। আমাদের দেশে কিছু তরুণ বিজ্ঞাপন নির্মাতা রয়েছেন-যাদের কাজ অত্যন্ত প্রশংসনীয়। বিষয়বস্তুও চমৎকার। যেমন একটি মশলার বিজ্ঞাপনে দেখেছি-বিদেশে অবস্থান করা এক প্রবাসী শ্রমিক তার রান্নায় ব্যবহৃত মসলার কারণে তরকারির যে চেহারা হয়েছে তা দেখে আর একজন শ্রমিক বললেন, ‘ঠিক যেন মায়ের হাতের রান্না’। প্রবাসে বসে একজন শ্রমিক যখন তার মায়ের হাতের রান্নার কথা স্মরণ করেন, তখন সেই মসলা কিনতে স্বভাবতই সবাই উদ্বুদ্ধ হবেন। এর ফলে মায়ের প্রতি আমাদের যে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা প্রকাশ পায়, তা আমাদের আবেগকে প্রভাবিত করতে পারে। আজকাল তো টিভি সিরিয়ালগুলোতে মা-বাবার চরিত্র তো খুঁজেই পাওয়া যায় না। সেক্ষেত্রে এ ধরনের বিজ্ঞাপন উৎসাহব্যঞ্জক। আসলে আমাদের এমন বিজ্ঞাপন বানানো উচিত যা আমাদের পণ্যের মান সম্পর্কে সততার সঙ্গে সঠিক তথ্য প্রদান করে। যা আমাদের নৈতিকতাকে জাগ্রত করে। দেশপ্রেমকে উজ্জীবিত করে। শিকড়কে মনে করিয়ে দেয়। বাজারজাতকেও সহজ করে। অর্থাৎ আমাদের নীতিনৈতিকতার মধ্যে থেকে বিজ্ঞাপন নির্মাণ ও প্রচার করা উচিত।

এ প্রসঙ্গে আর একটি বিজ্ঞাপনের কথা না বললেই নয়। ২০১৭-তে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে অনলাইনে প্রকাশিত নারিকেল তেলের ওপর একটি বিজ্ঞাপন শুধু দেশেই নয়, বিশ্ব মিডিয়ায়ও প্রশংসিত হয়েছে। বলা যায় বিজ্ঞাপনটি আমাদের বিজ্ঞাপন জগতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। বিজ্ঞাপনটি অনেকেই দেখেছেন। বিজ্ঞাপনটিতে দেখা যায় এক তরুণী তার লম্বা চুল ছোট করার জন্য পার্লারে যান। বিউটিশিয়ান যত ছোটই করেন না কেন, তরুণী বারবার অনুরোধ করেন আরও ছোট করার জন্য। বারবার ছোট করতে বলায় বিউটিশিয়ানের অবাক চাহনীর উত্তরে অশ্রুসিক্ত চোখে তরুণী বলে, ‘আরও ছোট করে দিন, যাতে এভাবে আর ধরা না যায়’। ‘এভাবে’ বলতে চুলকে মুঠি করে ধরার কথা বলা হয়েছে। আর বিজ্ঞাপনটি সবার মনে দাগ কাটার কারণই হচ্ছে এই সংলাপটি। বিজ্ঞাপনটির প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল, যে চুল নারীর সৌন্দর্য, সেই চুল যেন না হয় তার দুর্বলতার কারণ। ইতিপূর্বে দেশের আর কোনো বিজ্ঞাপন নিয়ে এতটা আলোচনা হতে দেখিনি। অত্যন্ত সহজ-সরলভাবে নির্মিত এই বিজ্ঞাপন। অতি অভিনয়, অতি মিউজিক, অতি অঙ্গভঙ্গি, অতি নৃত্য, অতি অশোভন পোশাক, অতি নাটকীয়তা অর্থাৎ এই জাতীয় সব প্রকার ‘অতি’ বর্জিত এই বিজ্ঞাপন। বক্তব্যধর্মী পরিচ্ছন্ন এই বিজ্ঞাপনটির জন্য নির্মাতাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

প্রসঙ্গক্রমে সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন চ্যানেলে প্রচারিত আর একটি বিজ্ঞাপনের কথা উল্লেখ করতে চাই। বিজ্ঞাপনটি কাপড় ধোয়ার গুঁড়ো সাবানের। খুব সংক্ষিপ্ত-সহজ চিত্রায়ণ। লোকেশনের বিলাসিতা নেই। বিদেশেও চিত্রায়ণ নেই। কিছু কিছু মোবাইল কোম্পানির বিজ্ঞাপনের মতো মডেলদের অহেতুক অশোভন লম্ফঝম্ফ ও চিৎকার চেঁচামেচি নেই। একটি অফিস কক্ষে       ২-৩টি চরিত্রের মধ্যে কয়েকটি বাক্যে সীমাবদ্ধ একটি অসাধারণ বিজ্ঞাপন চিত্র। বিজ্ঞাপনটিতে আমাদের সামাজিক অসংগতি, মানুষের আচরণ- সবকিছুই অত্যন্ত সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। যা অনেকেরই দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। বিজ্ঞাপনটিতে দেখা যায় একজন ঠিকাদার একটি অফিসে তার কাজের অনুমতির জন্য যায়। ভদ্রলোককে অফিসের সবাই চেনেন। তিনি তার কাজটি পাওয়ার জন্য উৎকোচ দিতে চাইলে অফিসের বড় ম্যাডাম বললেন, ‘কাগজপত্র ঠিক থাকলে পারমিশন এমনিতেই পেয়ে যাবেন’। আর শেষে বললেন, ‘আদর্শ আর কাপড়ে আমি কখনো দাগ লাগতে দিই না’।

এই বাক্যটির মধ্য দিয়ে দুর্নীতিবাজ প্রতারকদের ভিড়ে আদর্শবান মানুষের চরিত্র কেমন হয় তা তুলে ধরা হয়েছে। যা অনেকের জন্যই অনুকরণীয়। দুর্নীতি হচ্ছে নীতিবহির্ভূত কর্মকাণ্ড। আমাদের দেশের শক্তির অপব্যবহার এবং অপরাধের শিকড় হচ্ছে এই দুর্নীতি। বলা যায় বিশেষ ক্ষমতা ও কর্তৃত্বে আসীন ব্যক্তিবর্গের আইনবহির্ভূত আচরণ। বিজ্ঞাপনটিতে সেই ক্ষমতায় আসীন ব্যক্তিটির সৎ চরিত্রকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। যা অনেককেই প্রভাবিত করবে। সৎ হতে উদ্বুদ্ধ করবে। বিজ্ঞাপনটির নির্মাতা এবং রচয়িতাকে অভিনন্দন জানাচ্ছি।

কথায় আছে, ‘মানুষ গড়ার কারিগর-সবার আগে আপন ঘর’। অর্থাৎ পরিবার থেকেই শুরু হয় মানুষের শিক্ষা, আর সুশিক্ষাই মানুষকে করে সৎ, আদর্শবান, চরিত্রবান। এই চরিত্রই মানুষের বড় সম্পদ। আর এই চরিত্রকে কেউ কেউ বিসর্জন দিয়ে বসেন এবং এক সময় ফাঁসেন।

আমরা উদ্ভট নয়, এমনি নান্দনিক ও বিষয়ভিত্তিক বিজ্ঞাপন দেখতে চাই আরও। তখন আর বিজ্ঞাপন যন্ত্রণা হবে না। যদি সহনীয় মাত্রায় প্রচারিত হয়, এসব বিজ্ঞাপন হবে প্রেরণার, উৎসাহের, উদ্দীপনার। আর একেই বলে বিজ্ঞাপন বিজ্ঞতা।

লেখক : গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, পরিবেশ ও সমাজ উন্নয়নকর্মী।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর