সোমবার, ১৪ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

মেসওয়াক রসুলের অনন্য একটি সুন্নত

মাওলানা মাহমুদুল হক জালীস

শরিয়তের প্রতিটি বিধানে রয়েছে মানবের কল্যাণ। চাই সেটা শারীরিক হোক অথবা মানসিক হোক। আবার এর ভিতরে রয়েছে অনেক অন্তর্নিহিত সূক্ষ্ম তথ্য ও রহস্য। যা মানুষের দৈনন্দিন জীবন থেকে শুরু সর্ব ক্ষেত্রে উপকারে আসে। এ ছাড়াও পরকালীন অনেক কামিয়াবি লুকায়িত রয়েছে শরিয়তের বিধিবিধান পালনের ভিতরে। আর মেসওয়াক হলো ইসলামী শরিয়তের বিধানসমূহের একটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার এটি একটি মাধ্যম এবং সব ধর্মে স্বীকৃত একটি বিষয়। এর মাঝেও দুনিয়া-আখেরাতের অনেক সফলতা জড়িত রয়েছে। স্বয়ং নবী করীম (সা.) থেকে এর অনেক উপকারিতার বর্ণনা পাওয়া যায়। এ ছাড়া দার্শনিক, গবেষক, সাহাবা, তাবেয়িন, আয়িম্মায়ে মুজতাহেদীন তাদের বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতার আলোকে মেসওয়াকের অনেক উপকারিতা ব্যক্ত করেছেন। হজরত আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, তোমরা মেসওয়াক করা থেকে উদাসীন হয়ো না, কেননা তাতে বহু গুণ রয়েছে। তন্মধ্যে শ্রেষ্ঠ কিছু গুণ হচ্ছে, এর দ্বারা আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন হয়। নামাজের ফজিলত ৭৭ গুণ বৃদ্ধি করে দেওয়া হয়। হজরত আলী (রা.) ও হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, মেসওয়াক করার বরকতে রিজিক সহজে উপার্জন হয়। আল্লামা জালাল উদ্দিন সুয়ূতি (রাহ.) শরহুচ্ছুদুর নামক কিতাবে উল্লেখ করেছেন, মেসওয়াক করার বরকতে মৃত্যুর সময় আত্মা সহজে বের হয়। এর প্রমাণ হলো, রসুলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুমূর্ষু অবস্থায়ও মেসওয়াক করেছিলেন।

প্রখ্যাত মুহাক্কিক আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী (রাহি.) তার রদ্দুল মুহতারে (ফাতওয়ায়ে শামীতে) উল্লেখ করেছেন, মেসওয়াক করার উপকারিতা অনেক তন্মধ্যে সর্বোত্তম হলো, এটি সর্ব রোগের শিফা মৃত্যু ছাড়া। মেসওয়াকের মাধ্যমে দাঁত পরিষ্কার করা আল্লাহতায়ালার কাছে অত্যন্ত পছন্দনীয় কাজ। তাই রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি বিশেষ যত্নবান ছিলেন এবং উম্মতকে অনেক তাগিদ দিয়েছেন।

রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মেসওয়াকের গুরুত্বারোপ করতে গিয়ে ইরশাদ করেন, আমি যদি উম্মতের ওপর (কষ্ট হওয়ার) আশঙ্কা না করতাম তাহলে প্রত্যেক নামাজেই মেসওয়াক করার আদেশ দিতাম। (বুখারি শরিফ, হাদিস নং-৮৮৭, মুসলিম শরিফ, হাদিস নং-২৫২)। অন্য হাদিসে এসেছে, প্রত্যেক অজুর সময় আদেশ দিতাম (মুসনাদে আহমদ, হাদিস নং-৭৪১২)। অন্য এক হাদিসে এসেছে, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মেসওয়াক করে যে নামাজ আদায় করা হয়, সে নামাজে মেসওয়াকবিহীন নামাজের তুলনায় সত্তরগুণ বেশি ফজিলত রয়েছে। (বায়হাকি, হাদিস নং-২৫১৯)।

এ ছাড়াও অন্যান্য হাদিসে আরও উপকার বর্ণিত আছে, তা হলো, এটা একটি সুন্নত যার মাধ্যমে আল্লাহতায়ালার রেজামন্দি হাসিল হয়, ফেরেশতারা খুশি হয়, নেকি বৃদ্ধি পায়, দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি পায়, দাঁতের গর্ত দূর হয়, মাড়ি শক্ত হয়, শ্লেষ্মা দূর হয়, মুখের দুর্গন্ধ দূর হয় ইত্যাদি। (বায়হাকি, হাদিস নং-২৫২১)।

            লেখক : ইসলামী গবেষক।

সর্বশেষ খবর