রবিবার, ২০ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

মধুচন্দ্রিমা শেষ মন্ত্রী-এমপিদের, এবার ঘোর কাটান

নঈম নিজাম

মধুচন্দ্রিমা শেষ মন্ত্রী-এমপিদের, এবার ঘোর কাটান

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে কিছুদিন আগে কথা হচ্ছিল আমার সর্বশেষ লেখা নিয়ে। তিনি বললেন, লেখায় অনেক মন্ত্রণালয়ের কথা লিখেছেন, কিন্তু পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কথা নেই। শাহরিয়ার আলম একজন সজ্জন মানুষ। তার ভদ্রতাবোধ অনেক। গত পাঁচ বছর তিনি কর্মদক্ষতারও পরিচয় দিয়েছেন। সুনামও অর্জন করেছেন দেশে-বিদেশে। শাহরিয়ারের ভদ্রতার আরও পরিচয় পেলাম তার বিদায়ী মন্ত্রীর প্রশংসায়। ভালো লাগল। এ যুগে কেউ এ কাজটি করে না। সবাই শুধু নিজের কথাই বলে। বিদায়ীজনের বিপক্ষে বলে মজা পায়। শাহরিয়ার আলম এখানেই ব্যতিক্রম। প্রিয় শাহরিয়ার আলম, আপনি ইতিবাচক একজন মানুষ। নতুন মন্ত্রী ড. মোমেনও তাই। আগের মন্ত্রী মাহমুদ আলীও পেশাদার কূটনীতিক ছিলেন। আপনি তার কাছে কিছু বিষয় শিখেছেন, জেনেছেন স্বীকার করেছেন আমার কাছে। মানুষ এখন এই স্বীকারটুকু করে না। আপনার বড় মাপের চিন্তার প্রসারও ভালো লাগল। বিদেশে বাংলাদেশের মিশনগুলোর অবস্থান নিয়ে আমি এর আগে লিখেছিলাম। আপনার জন্য আবারও লিখছি। ভদ্রলোক আওয়ামী লীগের ’৯৬ সালের মেয়াদে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রটোকলে ছিলেন। বিএনপির ২০০১ সালের শাসনকালে বেইজিংয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসে। আমি তখন কাজ করি এটিএন বাংলায়। প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমানসহ চীন গিয়েছিলাম কাজে। আমাদের সঙ্গে ছিলেন থাইকম স্যাটেলাইটের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। ফেরার পথে মাহফুজ ভাই থাইল্যান্ড ঢুকবেন। আমাকে বললেন, আপনিও চলেন। মাহফুজ ভাইর থাই ভিসা আছে, আমার নেই। মাহফুজ ভাই বললেন, সমস্যা নেই। আমাদের সঙ্গে থাইকম স্যাটেলাইটের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আছেন। তিনি ভিসার ব্যবস্থা করবেন। গেলাম বেইজিং থাই দূতাবাসে। ভিসা কর্মকর্তা ভালো ব্যবহার করলেন। বললেন, ভিসা দেব। তবে তৃতীয় দেশ থেকে ভিসা নিতে হলে স্থানীয় দূতাবাস তোমাকে শনাক্ত করতে হবে। একটি রেফারেন্স লেটার নিয়ে আসতে হবে। মাহফুজ ভাই বললেন এটা কোনো সমস্যা নয়। আমাদের দূতাবাস আছে। তারা আমাদের হেলপ করবে। আমরা দুজন গেলাম বেইজিং বাংলাদেশ দূতাবাসে। মান্যবর রাষ্ট্রদূত সাহেব পাঠালেন নামের শেষে ... মান্নান সাহেবের কাছে। এই ভদ্রলোককে আগে থেকে চিনি। তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে থাকার সময় পরিচয়। তাকে দেখে খুশি হলাম। ভাবলাম, সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে। আমি বাংলাদেশের নাগরিক এমন একটি চিঠি অবশ্যই দেবেন। মাহফুজ ভাই তুলে ধরলেন আমার সমস্যা। সহায়তা চাইলেন। ভদ্রলোক এবার আমাদের বিস্মিত করলেন। তিনি কোনো ধরনের সহায়তা করতে অস্বীকার করলেন। বললেন, আমরা কোনো চিঠি দিতে পারব না। আমি বললাম, আপনার কি মনে হয়, আমরা থেকে যাব থাইল্যান্ডে? তিনি কথা বললেন না। দূতাবাস থেকে বের হওয়ার সময় মাহফুজ ভাই বললেন, আমাদের সঙ্গে এমন ব্যবহার করলে বিদেশে থাকা বাংলাদেশের সাধারণ নাগরিকদের সঙ্গে তারা কী ব্যবহার করে? আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম। কথা বাড়ালাম না। মনটা খারাপ হয়ে গেল। সেই থেকে বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে আমি দূরে থাকি। এমনকি কোনো সড়কে বাংলাদেশ দূতাবাস লেখা দেখলে ট্যাক্সিকে বলি ভাই, এই সড়ক দিয়ে যাবেন না। আরেক সড়ক দিয়ে যান। এ কারণেই ড. মোমেন জাতিসংঘে থাকাকালে একবার আমাকে ও শ্যামল দত্তকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন লাঞ্চে। আমি যাইনি। পরে এক অনুষ্ঠানে দেখা হওয়ার পর তাকে দুঃখিত বলেছিলাম। বাংলাদেশ মিশন নিয়ে আমার ভীতি এখনো আছে। কয়েক বছর আগে সাংবাদিক বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনারের বাড়িতে এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলাম। কিন্তু আমার ভীতি কাটেনি।

আমাদের কূটনীতিকরা বিদেশে নিজেদের জমিদার মনে করেন। সাধারণ বাংলাদেশি নাগরিকরা তাদের কাছ থেকে সেবা পায় না। এই নীতি পরিবর্তন করতে হবে। মধ্যপ্রাচ্যসহ যেসব দেশে বাংলাদেশি শ্রমিকরা কাজ করে সেখানে বেশি সতর্ক থাকতে হবে। সাধারণ মানুষের হয়রানি বন্ধ করতে হবে। হয়তো সব কূটনীতিক এক নন। সবারই আলাদা অবস্থান রয়েছে। অনেকে ভালো রয়েছেন। কিন্তু অল্প কিছু মানুষই সর্বনাশের জন্য যথেষ্ট। তাই বলছি, বাংলাদেশ মিশন নিয়ে প্রবাসীদের ভীতি কাটিয়ে দিন। প্রয়োজনে মধ্যপ্রাচ্যসহ শ্রমিক অধ্যুষিত দেশগুলোর লোকবল বাড়ান। নিয়োগে সতর্ক থাকুন। আলাদা করে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিন। আমাদের দূতাবাস আমাদের সহায়তা না করলে তাদের দরকার কী? তাদের কাজ করতে হবে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণে, বাংলাদেশকে নতুনভাবে ব্র্যান্ডিং করাতে। এজন্য সবার আগে দরকার জবাবদিহির। মনে রাখা দরকার, বিদেশে মিশন চলে বাংলাদেশের মানুষের টাকায়। মানুষের সুবিধা দেওয়াই তাদের কাজ। আমলাতান্ত্রিক ভাব ঝেড়ে ফেলতে হবে।

সালমান খুরশিদ ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেওয়ার সময় দিল্লিতে ছিলাম। দায়িত্ব নিয়েই তিনি গুরগাঁওতে বিদেশি সাংবাদিকদের এক সম্মেলনে যোগ দেন। আমিও ছিলাম সেই সম্মেলনের একজন প্রতিনিধি। ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা মিডিয়ার জন্য আলাদা দুটি বৈঠকের ব্যবস্থা করেন। প্রথম বৈঠকটি ছিল শুধু ভারতীয় সাংবাদিকদের জন্য। দ্বিতীয়টি আমাদের জন্য। আমাদের বলা হলো, স্থানীয় সাংবাদিকদের সম্মেলনে আমরা থাকতে পারব। তবে প্রশ্ন করতে পারব না। আমরা প্রশ্ন করতে পারব আমাদের জন্য নির্ধারিত বৈঠকে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তখনকার মুখপাত্র আকবর উদ্দিন অনুষ্ঠান পরিচালনার দায়িত্বে। ভারতীয় সাংবাদিকদের প্রশ্নোত্তর শুনছি। হঠাৎ একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করলেন, মি. খুরশিদ পররাষ্ট্রে তুমি দক্ষ নও। ছিলে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী। রাহুল গান্ধীকে ম্যানেজ করে পররাষ্ট্রে এলে। তুমি কি এ মন্ত্রণালয় চালাতে পারবে? ভাবলাম সালমান খুরশিদ খেপবেন। না, তিনি খেপলেন না। বরং স্বাভাবিক কণ্ঠে উত্তর দিলেন। বললেন, চমৎকার প্রশ্ন করেছ। আসলে আমি পররাষ্ট্রে অভিজ্ঞ নই। আমাদের দক্ষ কর্মকর্তারা রয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। আমি একটি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিত্ব করছি। আমার দলের রয়েছে পররাষ্ট্র চালানোর নীতিমালা। দলের ও দেশের নীতিমালা বাস্তবায়নে কর্মকর্তাদের কাজের সমন্বয় আমি সফলতার সঙ্গে করার চেষ্টা করব। সময় শেষ না হওয়া পর্যন্ত তুমি সফল ব্যর্থ বলতে পারছ না। আমাদের দেশ হলে মন্ত্রী খেপে যেতেন। কর্মকর্তারাও খেপতেন। সেই সাংবাদিক নিষিদ্ধ হতেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে।

তার পরও বলছি, দেশের ও সরকারের নির্দিষ্ট নীতিমালা বাস্তবায়নে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গণমুখী অবস্থান নিলেই অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। একজন পেশাজীবী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে স্টেট ডিপার্টমেন্টের ভিতরে যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে। এম এ আকবরের সঙ্গে সাউথব্লকে বার বার দেখা করেছি। ভারতের পররাষ্ট্র বিভাগে অনেকবার গিয়েছি পেশাগত কারণে। দেশ-বিদেশের কূটনীতিকদের কাজগুলো দেখেছি। আমাদের অনেক দক্ষ কর্মকর্তা রয়েছেন। অনেকের ইতিবাচক কার্যক্রমও প্রশংসনীয় দেশ-বিদেশে। তার পরও ঘাটে ঘাটে কেন এত প্রশ্ন? সেই প্রশ্নের উত্তরগুলো খুঁজতে হবে। বিদেশে ভিআইপিদের প্রটোকল কমিয়ে দিতে হবে। রাত-দিন বিমানবন্দর আর শপিংয়ে কাটাতে হয় প্রটোকলের নামে অনেক কূটনীতিককে। প্রটোকলের রীতিনীতি নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। কারা প্রটোকল পাবেন তা নিয়েও নতুন নির্দেশনা দরকার। বিদেশে আমাদের মিশনের মূল কাজ হোক প্রবাসীদের সহায়তা দেওয়া। ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসে দেখুন সবখানে লেখা আমেরিকান নাগরিকদের জন্য আলাদা অগ্রাধিকারের ব্যবস্থা। নজর দিন বাংলাদেশকে নতুন করে বিশ্বে তুলে ধরার জন্য। দক্ষ, অদক্ষ শ্রমশক্তির বাজার সম্প্রসারণ করুন। গার্মেন্টসহ রপ্তানিযোগ্য সব পণ্যকে আরও অনেক বেশি করে ব্র্যান্ডিং করুন। বিদেশিরা জানুক, বাংলাদেশ এগিয়ে চলছে, এগিয়ে যাবে। ’৭১ সালে বঙ্গবন্ধু আমাদের যে দেশ দিয়েছেন সেই দেশটি এখন উন্নত-সমৃদ্ধ এক জনপদ। এ জনপদ আগামীর বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিতে পারে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অনেক ভালো কাজ করেছে, প্রত্যাশা আরও বেশি। যারা ভালো কাজ করে মানুষের প্রত্যাশা তাদের কাছেই বেশি। অকাজের লোকদের কাছে কারও প্রত্যাশা থাকে না। দেশটাকে নিয়ে ভাবুন। হৃদয়ে নিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সেই ভাষণ। যে ভাষণ তিনি দিয়েছিলেন কুমিল্লা সেনানিবাসে। সৈনিকদের সামনে তিনি বলেছিলেন, ‘মনে রেখো শাসন করা তারই সাজে, সোহাগ করে যে। তুমি যখন শাসন করবা সোহাগ করতে শেখ। তাদের দুঃখের দিনে পাশে দাঁড়িয়ো। তাদের ভালোবেসো। কারণ তোমার হুকুমে সে জীবন দেবে। তোমাকে শ্রদ্ধা অর্জন করতে হবে। সে শ্রদ্ধা অর্জন করতে হলে তোমাকে শৃঙ্খলা শিখতে হবে। নিজকে সৎ হতে হবে। নিজের দেশকে ভালোবাসতে হবে। মানুষকে ভালোবাসতে হবে এবং চরিত্র ঠিক রাখতে হবে। তা না হলে কোনো ভালো কাজ করা যায় না। আমার মুখ কালা করো না, দেশের মুখ কালা করো না, সাড়ে সাত কোটি মানুষের মুখ কালা করো না। তোমরা আদর্শবান হও। সৎপথে থেকো। মনে রেখো, মুখে হাসি মনে বল তেজে ভরা মন, মানুষ হইতে হবে মানুষ যখন। মাঝে মাঝে আমরা অমানুষ হয়ে যাই। এত রক্ত দেয়ার পরে যে স্বাধীনতা এনেছি, চরিত্রের পরিবর্তন এখনো অনেকের হয় নাই। এখনো ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজ, চোরাকারবারি, মুনাফাখোরি, বাংলার দুঃখী মানুষের জীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। দীর্ঘ তিন বছর পর্যন্ত এদের আমি অনুরোধ করেছি, আবেদন করেছি, হুমকি দিয়েছি-“চোরা নাহি শোনে ধর্মের কাহিনী”। কিন্তু আর না।’

নতুনভাবে মন্ত্রিসভায় আসার হানিমুন ম্যুড শেষ করুন। এবার কাজ শুরু করুন। মাথায় বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণ রাখুন। সামনে রাখুন শেখ হাসিনাকে। এত বছর ক্ষমতায় থেকে শেখ হাসিনা ও তার পরিবার ইতিবাচক ইমেজের এক অধ্যায় তৈরি করেছেন। এ অধ্যায় সামনে থাকলে আর কোনো সমস্যা দেখি না। মানুষের চোখ এখন নতুন মন্ত্রিসভার দিকে। কোনো কিছু এড়ানো যাবে না। দায়িত্ব এক কঠিন জিনিস। সবাইকে দায়িত্ব নিতে হবে। চেয়ার ক্ষণস্থায়ী। আজ আছে কাল নেই। সব সংকটের দীর্ঘমেয়াদি সমাধান করতে হবে। থামিয়ে দিতে হবে অতি উৎসাহীদের। অতি উৎসাহে সর্বনাশ হয়। মধুচন্দ্রিমা শেষ হলো। জবাবদিহির পালা শুরু। শুধু পররাষ্ট্র নয়, প্রতিটি মন্ত্রণালয়কে নিয়েই আমাদের এক কথা। এত বড় আকাশটার দিকে তাকালে মনে হয় দূরটা মাটির সঙ্গে নুইয়ে আছে। অহমিকা দিয়ে কাজ হয় না। মানুষকে সামনে নিয়ে আসতে হবে। মানুষ সামনে থাকলেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। কাজ করতে বিশাল পৃথিবীর দরকার নেই। আমাদের বন্ধু অধ্যাপক ডা. রাকিবুল ইসলাম লিটু সেই দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন। রাতদিন ২৪ ঘণ্টা রোগী দেখতেন। তার মুখে কোনো ‘না’ শব্দ ছিল না।

গরিব রোগীদের কাছ থেকে পয়সা নিতেন না। ইসিজি করতেন বিনা পয়সায়। অনেক গরিবের রিং পরাতেন ধারকর্জ করে। ফেরার পথে রোগীকে ভাড়া দিয়ে দিতেন। ওষুধ কিনে দিতেন। মানুষ চাইলেই পারে। লিটুর মৃত্যু সংবাদ শুনে ছুটে গিয়েছিলাম ল্যাবএইড হাসপাতালে। মানুষের ঢল ছিল। লিটু কোনো রাজনৈতিক নেতা ছিলেন না। সাধারণ মানুষ ডুকরে ডুকরে কাঁদছিল তার জন্য। সন্ধ্যায় নামাজে জানাজা হয় উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টর খেলার মাঠে। মানুষের স্রোত ছিল। লিটু জানতে পারলেন না মানুষ তাকে কত ভালোবাসত। এই চিকিৎসাসেবায় আরেকজন লিটু আছেন কিনা জানি না। শুধু রোগীদের জন্য লড়াইও করতেন অন্য সহকর্মীদের সঙ্গে। কেউ ভিজিট বাড়ালে লিটু আদালতে ছুটতেন। কেউ ভুল চিকিৎসা করলে লিটু রুখে দাঁড়াতেন। রোগীদের সঙ্গে শুরু করতেন আন্দোলন। একদিন তাকে বলেছিলাম, আপনার কী দরকার নিজের পেশার মানুষদের শত্রু বানানোর। লিটু জবাব দিলেন, আপনাদের পাশে সবাই আছে। এই গরিব মানুষদের কেউ নেই। আমি তাদের পাশে আছি। বড় লোক ডাক্তাররা খেপলে কী করা যাবে। আপনারা আমার বন্ধুরা সামাল দেবেন। আমি লড়ে যাব। অল্প সময়ে লিটু চলে গেলেন। জানি না তার এ লড়াই আর কেউ করবেন কিনা। কিন্তু আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি, আরেকজন লিটু আর নেই আমাদের চিকিৎসাসেবায়।

             লেখক : সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন।

সর্বশেষ খবর