শুক্রবার, ২৫ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

ইবাদত করতে হবে আল্লাহর জন্য

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

ইবাদত করতে হবে আল্লাহর জন্য

দিনে রাতে আমরা অনেক ইবাদতই করি। কিছু ইবাদত ফরজ, কিছু ইবাদত নফল। কিছু ইবাদত বড়, কিছু ইবাদত ছোট। কিছু ইবাদত কঠিন, কিছু ইবাদত সহজ। সব ইবাদতের পেছনেই রয়েছে একটি উদ্দেশ্য, আল্লাহর ভালোবাসা পাওয়া। তাকে সন্তুষ্ট করা। তিনি সন্তুষ্ট হলে আমাদের দুনিয়ার জীবন হবে সুন্দর। আখেরাত জীবন হবে প্রশান্তিময়। আমাদের প্রতিটি ইবাদতে তিনি খুশি হবেন, যদি ইবাদত শুধু তার উদ্দেশ্যেই করা হয়। শুধুই তার উদ্দেশ্যে- অন্য কারও জন্য না, অন্য কিছুর জন্য না। ইবাদত করলে সমাজে আমার সুনাম ছড়াবে, মানুষ আমাকে ভালো বলবে, না করলে মানুষের কাছে মুখ দেখাবে কী করে- এমন হাজারো চিন্তা মনের কোণে ঘাঁপটি মেরে থাকে আমাদের। খুব ভালো করে বুঝে নিন, এ ধরনের যে কোনো একটি চিন্তায় প্রভাবিত হয়ে যদি ইবাদত করেন, তবে তা কিন্তু আর আল্লাহর জন্য ইবাদত করা হলো না। আর এমন ইবাদত যদি জীবনভর করা হয়, তাহলেও আল্লাহতায়ালা সন্তুষ্ট হবেন না। কারণ, ইখলাস তথা খাঁটি মন নিয়ে আপনি ইবাদত করেননি।  ইখলাসহীন আমল হলো ফুটো থলির মতো। এমন অনেক আমল নিয়ে বান্দা আল্লাহর দরবারে হাজির হবে। অথচ তার  কোনো আমলই রব্বে করিম গ্রহণ করবেন না। কারণ সব আমলই ছিল লোক দেখানো, মানুষের বাহবা পাওয়ার জন্য। তাই আমাদের জীবনে ইখলাস খুবই তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। ইখলাস সম্পর্কে শেরে খোদা হজরত আলীর ঘটনাটি বেশ শিক্ষণীয়।  হজরত আলী (রা.) যুদ্ধে একবার একজন শত্রুর সঙ্গে মল্লযুদ্ধে নামেন। অনেকক্ষণ পর তিনি সেই কাফেরকে কাবু করে ফেলেন। ধরাশায়ী করার পর তিনি তার বুকের ওপর বসে পড়লেন এবং তার মাথা কেটে ফেলার জন্য চুলের গোছা ধরলেন। এমন সময় শত্রুটি হজরত আলীর (রা.) মুখে থুতু মারল। হজরত আলী (রা.) তাকে হত্যা না করে সঙ্গে সঙ্গে ছেড়ে দিলেন। লোকটি অবাক হয়ে গেল। চোখ বড় বড় করে জানতে চাইল, আপনি তো আমাকে প্রায় মেরেই ফেলছিলেন। তাহলে আবার ছেড়ে দিলেন কেন? গা থেকে মাটি ঝাড়তে ঝাড়তে আলী (রা.) বললেন, দেখ, আমি তোমাকে ব্যক্তিগত কোনো আক্রোশ থেকে মারতে চাইনি। তুমি আল্লাহর দুশমন। যুদ্ধের ময়দানে তোমাকে মারতে চেয়েছি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই। কিন্তু যেই মুহূর্তে তুমি আমাকে থুতু মারলে আমার ভীষণ রাগ হলো। আর মনে রাগ নিয়ে যদি তোমাকে মেরে ফেলতাম তাহলে তা আল্লাহর জন্য মারা হতো না। হতো নিজের রাগের জন্য। তাই আমি তোমাকে ছেড়ে দিই। এটাই হলো ইখলাস। এটাই হলো আল্লাহর জন্য ইবাদত করা। যতটা সম্ভব গোপনে ইবাদত করা ভালো। তাহলে লোক দেখানোর ভাব আসার সম্ভাবনা কম থাকবে। স্বাভাবিক ভাবেই শয়তান মানুষকে দুনিয়ার সম্মান অর্জনের পথে উসকে দেয়। আমি ও আমার আমিত্ব, আমার কর্ম, আমার আমল বলতে উৎসাহিত করে। নিজেকে জাহিরের এ প্রচেষ্টা ধ্বংস ডেকে আনে। মনের গহিনে অহংকারের দানা বাঁধে। হজরত মুসা (আ.) নিজেকে সবচেয়ে জ্ঞানী ভেবেছিলেন। আল্লাহ তাকে খিজির (আ.) এর কাছে পাঠালেন। এমন কিছু জ্ঞান খিজির (আ.) এর ছিল- যা মুসা (আ.) জানতেন না। আল্লাহতায়ালা মুসা (আ)-কে বুঝালেন, তোমার চেয়েও বড় জ্ঞানী আছে। অতএব নিজেকে বড় মনে করার কোনো কারণ নেই। ইখলাস ছাড়া আমল আল্লাহর দরবারে কবুলই হয় না।

নবী করিম (সা.) বলেন, ‘আল্লাহতায়ালা সব আমলের মধ্যে শুধু সে আমলটুকুই কবুল করেন, যা ইখলাসের সঙ্গে শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই করা হয়।’ (নাসায়ি শরিফ, হাদিস নম্বর : ৩১৪২)। আল্লাহ হলেন অন্তর্যামী। আপনার, আমার মনের খবর মানুষ জানে না, আল্লাহ জানেন। নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহ তোমাদের বাইরের আকার-আকৃতি এবং ধন-সম্পত্তির দিকে খেয়াল করেন না, বরং তিনি দেখেন তোমাদের মন ও আমল।’ (সহি মুসলিম, হাদিস নম্বর : ৬৫৪৩)। এর মানে দাঁড়ায়, সর্বজানা আল্লাহকে ফাঁকি দেওয়ার কোনো পথ আমাদের নেই। আমরা যে ইবাদতই করি না কেন আর যতটুকুই করি তা অবশ্যই খাঁটি মন নিয়ে ইখলাসের সঙ্গে করতে হবে। তাহলেই আশা করা যায়, দুনিয়া আখেরাতে আমরা প্রভুর প্রিয় বান্দা হয়ে প্রভুর বানানো জান্নাতে জায়গা করে নিতে পারব।

লেখক : বিশিষ্ট মুফাসসিরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব। চেয়ারম্যান : বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি।

www.selimazadi.com

সর্বশেষ খবর