শনিবার, ২৬ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা
বায়তুল মোকাররমের খুতবা

জীবনযাপনে মধ্যপন্থা অবলম্বনে ইসলামের শিক্ষা

মুফতি মুহিউদ্দীন কাসেম : পেশ ইমাম

ইসলাম একদিকে অপচয়কে হারাম করেছে অন্যদিকে কৃপণতাকে নিষেধ করেছে। এ দুয়ের মাঝে ইসলামের শিক্ষা হলো ইসলাম যেমন বাড়াবাড়িকে পছন্দ করে না অনুরূপভাবে ছাড়াছাড়িকেও পছন্দ করে না। বরং ইসলামের শিক্ষা হলো জীবনযাপনের ক্ষেত্রে মধ্যপন্থা অবলম্বন করা। অপচয়ও করা যাবে না আবার কার্পণ্যও করা যাবে না। কৃপণতার ভয়াবহতা উল্লেখ করে আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে যা তোমাদের দিয়েছেন তাতে যারা কৃপণতা করে তাদের জন্য তা মঙ্গল তা যেন তারা কিছুতেই মনে না করে। না তাদের জন্য অমঙ্গল যাতে তারা কৃপণতা করবে কিয়ামতের দিন তাই তাদের গলার বেড়ি হবে।’ সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১৮০। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘কৃপণ আল্লাহ থেকে দূরে, বেহেশত থেকে দূরে এবং লোক থেকে দূরে। তিরমিজি। অন্য হাদিসে এসেছে- ‘ধোঁকাবাজ, কৃপণ ও খোঁটা দানকারী বেহেশতে প্রবেশ করবে না।’ তিরমিজি।

কৃপণতার কুফল বর্ণনা করে অন্য হাদিসে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘কৃপণতা থেকে তোমরা আত্মরক্ষা কর কেননা অধিক কৃপণতাই তোমাদের পূর্ববর্তীদের ধ্বংস করেছে। এ কৃপণতা তাদের আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করতে উদ্বুদ্ধ করেছে। তাতে তারা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করেছে; কৃপণতার প্রতি উদ্বুদ্ধ করায় তারা কৃপণতা করেছে আর অশ্লীলতার আদেশ করায় তারা অশ্লীলতায় লিপ্ত হয়েছে।’ মুসনাদে আহমাদ। অন্য হাদিসে এসেছে- ‘তোমরা অতি কৃপণতা থেকে আত্মরক্ষা কর, কেননা তা তোমাদের পূর্ববর্তীদেরও আদেশ করলে তারা হারামকে হালাল করে নিয়েছে এবং তারা রক্ত প্রবাহিত করেছে, আর তারা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছেদ করেছে।’ মুসনাদে আহমাদ। সুতরাং প্রকৃত মুমিনরা কৃপণতা থেকে অতি দূরে অবস্থান করবে। কারণ রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘দুটি বদভ্যাস মুমিনের মধ্যে একত্রিত হতে পারে না। ১. কৃপণতা ২. অসৎ চরিত্রতা।’ তিরমিজি। সুতরাং আল্লাহ যাদের সম্পদ দিয়েছেন তাদের দায়িত্ব হলো সম্পদের যথাযথ হক আদায় করা। কৃপণতা না করা। তবে এ কথাও স্মরণ রাখতে হবে, কোনোভাবেই যাতে আমরা অপচয় না করি, কারণ কোরআনে রব্বুল আলামিন অপচয়কারীকে শয়তানের ভাই আখ্যা দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তুমি কখনো অপচয় করবে না। যারা অপচয় করে তারা শয়তানের ভাই। আর শয়তান নিজ প্রতিপালকের প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ।’ সূরা বনি ইসরাইল, আয়াত ২৬-২৭। অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘আহার করবে ও পান করবে কিন্তু অপচয় করবে না। আল্লাহ অপচয়কারীকে ভালোবাসেন না।’ সূরা আরাফ, আয়াত ৩১।

রসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহ তোমাদের তিনটি বস্তু অপছন্দ করেন। ১. অনর্থক কথা বলা ২. মাল নষ্ট করা ৩. অনর্থক অধিক প্রশ্ন করা।’ সুতরাং আসুন আমরা কৃপণতা ও অপচয়কে পরিহার করে মধ্যপন্থায় জীবনযাপন করি। আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘মুমিনরা যখন ব্যয় করে তখন অপচয় করে না, কার্পণ্যও করে না বরং তারা থাকে এ দুয়ের মধ্যমপন্থায়।’ সূরা ফুরকান। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘ব্যয়ের ক্ষেত্রে মধ্যম পন্থা অবলম্বন বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক।’ অন্য বর্ণনায় এসেছে- ‘ব্যয়ের ক্ষেত্রে মধ্যম পন্থা অবলম্বনকারী কখনো অভাবগ্রস্ত হয় না।’ অন্য হাদিসে এসেছে- ‘জীবনযাপনে মধ্যম পন্থা অবলম্বন হলো নবুয়তের ৩৬ ভাগের ১ ভাগ।’ তিরমিজি। আল্লাহ আমাদের মধ্যম পন্থায় জীবনযাপনের তাওফিক দান করুন।

সর্বশেষ খবর